Advertisement
E-Paper

হাতে মোবাইল, কথা শিখছে না শিশু

আমাদের সন্তান অটিস্টিক? কেন ও কথা বলে না? কেন চোখের দিকে তাকায় না? গেলেন স্পিচ থেরাপিস্টের কাছেও। বাচ্চাটাকে কথা বলতে শেখাতে হবে তো!

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:১৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কোনও মতে দু’টো শব্দ উচ্চারণ করতে পারত সে। ‘বাবা’ আর ‘মাম্মা’। আড়াই বছর বয়সেও যখন আর কথা ফুটল না, সব সময়ে ঘাড় গুঁজে বসে থাকাটাই স্বভাবে পরিণত হল, বাবা-মা ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। তা হলে কি আমাদের সন্তান অটিস্টিক? কেন ও কথা বলে না? কেন চোখের দিকে তাকায় না? গেলেন স্পিচ থেরাপিস্টের কাছেও। বাচ্চাটাকে কথা বলতে শেখাতে হবে তো!

ডাক্তার দেখলেন। সময় নিলেন। তার পর জানালেন, চিকিৎসা একটাই এবং তা দীর্ঘ। শিশুটির জীবন থেকে ‘স্ক্রিন টাইম’ (বেশিরভাগ সময় মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটার বা টিভির দিকে তাকিয়ে থাকা) আপাতত পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। অনর্গল কথা বলতে হবে ওর সঙ্গে। তবেই কথা বলতে শিখবে ও।

সাম্প্রতিক এক বেসরকারি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে ইদানীং দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের ভিড়ই বেশি। শিশু কথা বলতে পারছে না। কারণ, বাড়িতে কেউ তার সঙ্গে কথা বলছে না। তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মোবাইল কিংবা ট্যাব। ব্যস্ত বাবা-মাকে সন্তানের হাজারো বায়না সামলাতে হচ্ছে না। এমনকি, তাকে খাওয়ানোর ঝক্কি উধাও। হাতে ট্যাব ধরালে নিমেষে শেষ হচ্ছে মুখের গ্রাস।

আরও পড়ুন: ঘাড় গুঁজে মোবাইলে সারা ক্ষণ? কী বিপদ ডেকে আনছেন জানেন?

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শিশু কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না পাওয়ায় কথা শিখছে না। কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে না। সে নিজেকে প্রকাশও করতে পারছে না। প্রাথমিক উপসর্গ দেখে অনেকেই ভেবে নিচ্ছেন, অটিজম। পরে বোঝা যাচ্ছে, আসল সমস্যা অন্য। জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই ‘স্ক্রিন টাইম’ গ্রাস করেছে তাকে। কলকাতার শিশু চিকিৎসকদের অধিকাংশই জানাচ্ছেন, এই আসক্তি ক্রমশ ‘মহামারী’র চেহারা নিচ্ছে।

‘পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট’ পায়েল ঘোষ জানান, শিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মজার কথা বলা, সে কোনও মজার আচরণ করলে হাসা, সবই চোখের মাধ্যমে বোঝা যায়। ট্যাব বা মোবাইল ধরিয়ে তা হয় না।

আরও পড়ুন: ডায়াবিটিসে প্রয়োজন পরিবারের সহায়তা

বাবা-মা নিজেরা ব্যস্ত বলে অন্যদের বাড়িতে শিশুকে নিয়েও যান না। শিশুর জগৎ জুড়ে শুধুই কার্টুন। সেই চরিত্রদের সঙ্গেই মনে মনে কথা বলে সে। তিনি বলেন, ‘‘দিনভর তার সঙ্গে কেউ বিশেষ কথা না বলায় কুঁড়ে হয়ে যায় শিশুরা। কথা বলার পরিশ্রমটুকুও সে করতে চায় না। বাবা-মায়ের যখন বোধোদয় হয়, তাঁরা কথা বলানোর জন্য উঠেপড়ে লাগেন। তখন বেঁকে বসে শিশু। কারণ, ততদিনে তার নিজস্ব ‘ভার্চুয়াল’ জগৎ তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’

শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ আবার জানালেন, ট্যাব-মোবাইল নিয়ে থাকায় পরবর্তী সময়ে শিশুর মনঃসংযোগে বড় ঘাটতি ধরা পড়ে। সে ভাবতে শেখে না, ফলে পড়াশোনায় মন দিতে পারে না। দীর্ঘ ক্ষণ মোবাইল বা ট্যাবের আলো তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। সে কারণে হজমের সমস্যাও হয়। তাঁর কথায়, ‘‘সব মিলিয়ে আনসোশ্যাল, অমনোযোগী শিশুতে পরিণত হয় সে। যার দায় বাবা-মা এড়াতে পারেন না।’’

চোখের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকায় যে ধরনের সমস্যা হয়, তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে অ্যাস্থেনোপিয়া। চোখের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘‘এক নাগাড়ে মোবাইল বা ট্যাবের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপরে চাপ বাড়ে। কারণ, চোখকে ক্রমাগত স্ক্রিনের দৃশ্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। চোখের ভিতরের পেশিগুলিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। তা ছাড়া, চোখের পাতা উপর-নীচ করা কমে যাওয়ায় কর্নিয়া শুকিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে।’’

নানা বয়সের শিশুদের মানসিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা-মায়ের ভিড় এখন যে কোনও মনোরোগ চিকিৎসকের চেম্বারেই বেশি। মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় জানালেন, বাবা-মায়েদের সঙ্গে তিনি যখন আলাদা করে কথা বলতে চান, তখন তাঁরাও সন্তানের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তুমি বাইরে বসে এটা দেখো।’ কেন এটা করছেন জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘ও একা একা বসে থাকবে তো। তাই...।’ তাঁর কথায়, ‘‘শিশু বুঝে যায় তাকে কোনও দায়িত্ব পালন করতে হবে না। সব দায়িত্ব বাবা-মায়ের। এমনকি, একা কয়েকটা মিনিট কাটানোর দায়িত্বও তার নেই। এই দায়হীনতার অনুভূতি শিশুকে ক্রমশ একা, স্বার্থপর, অসহিষ্ণু করে তোলে। পরিস্থিতির সামান্য এ দিক ও দিক হলেই যে কোনও অবস্থা বা সম্পর্ক থেকে অবলীলায় বেরিয়ে আসতে পারে সে।’’

Smartphone Speech development Child স্মার্টফোন Tech
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy