Advertisement
E-Paper

ঘাড় গুঁজে মোবাইলে সারা ক্ষণ? কী বিপদ ডেকে আনছেন জানেন?

বাসে-ট্রেনে-ঘরোয়া আড্ডায়-অফিসে সর্বত্রই ঘাড় গুঁজে মোবাইলের কি-প্যাডে টাইপ নয়তো নেট সার্ফ। এটাই এখন জীবনচর্চায় পরিণত হয়েছে। আর তার হাত ধরেই নতুন অসুখ হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে। জানেন সে সম্পর্কে?

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:৪৮
সারা ক্ষণ মোবাইলে খুটখাট ডেকে আনছে ভয়াল অসুখ টেক্সট নেক। ছবি: শাটারস্টক।

সারা ক্ষণ মোবাইলে খুটখাট ডেকে আনছে ভয়াল অসুখ টেক্সট নেক। ছবি: শাটারস্টক।

পা রাস্তায়, হাঁটার বেগ সামান্য কম, ঘাড় নিচু আর চোখ মোবাইল ফোনে। প্রতি দিন রাস্তায় বেরোলে এমন চলার ভঙ্গিমা আমরা প্রায়ই দেখি।

শুধু পথেঘাটেই নয়, বাসে-ট্রেনে-ঘরোয়া আড্ডায়-অফিসে সর্বত্রই ঘাড় গুঁজে মোবাইলের কি-প্যাডে টাইপ নয়তো নেট সার্ফ। এটাই এখন জীবনচর্চায় পরিণত হয়েছে। আর তার হাত ধরেই নতুন অসুখ হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে, চিকিৎসাবিজ্ঞান যার নাম দিয়েছে ‘টেক্সট নেক’।

কেমন অসুখ এটি? তা জানার আগে বরং চোখ রাখা যাক ছোট্ট একটা তথ্যে। ঘাড় গুঁজে টেক্সট বা নেট সার্ফ করে যাওয়ার অভ্যাস কতটা বিষ ছড়িয়েছে মানবশরীরে তা নিয়ে মহারাষ্ট্রের ‘সাঞ্চেতি ইনস্টিটিউট কলেজ অব ফিজিওথেরাপি’ একটি সমীক্ষা চালায়। তার রিপোর্ট হাতে আসতেই শঙ্কার মেঘ দেখছেন চিকিৎসকরা। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে নানা বয়সের তিন শতাধিক মানুষের উপর সমীক্ষা চলে। সমীক্ষায় প্রকাশ, এদের মধ্যে ৮ শতাংশই এই অসুখের শিকার। ৩৫ শতাংশ এই অসুখের কথা জেনেও সচেতন নয়। আর ২১ শতাংশ একেবারে অসুখের দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়েছেন।

আরও পড়ুন: কোলেস্টেরল বাড়ছে না তো? এই পাঁচ লক্ষণ দেখলেই ডাক্তার দেখান

পথেঘাটে সারা ক্ষণ এমন দৃশ্যেই অভ্যস্ত আমরা। ছবি: শাটারস্টক।

এই অসুখে মেরুদণ্ড চিরতরে বেঁকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, শুধু তাই-ই নয়, ঘাড়-গলার হাড় ওস্নায়ুর উপর চাপ পড়ে তাচিরতরে ঝুঁকিয়ে দিতেও পারে। নতুন এই অসুখ এত দ্রুত দেশের সব প্রান্তেই কম-বেশি ছড়িয়ে পড়ছে যে, এখনই সাবধান না হলে এই অসুখ পঙ্গুত্বও ডেকে আনবে বলে মত অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ কৌশিক ঘোষের। যদিও তাঁর মতে, এই অসুখের আবিষ্কার পশ্চিমের দেশগুলিতে, আশির দশকে, এ দেশে মোবাইল আসার অনেক আগেই। কিন্তু মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার, সারা ক্ষণ ঘাড় নিচু করে স্ক্রিনের দিকে চোখ, এ সব উপসর্গ দেখে এই অভ্যাসের জেরে হওয়া অসুখকে ‘টেক্সট নেক’ নামেই ডাকা হচ্ছে। নামেই মালুম, মোবাইলে সারা ক্ষণ টেক্সট করার ‘বাতিক’ এই অসুখের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে।

কিন্তু কেন এমন হয়? অপর এক অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মতে, আট থেকে আশি সারা ক্ষণ খুটখুট করে চলেছেন মোবাইলে, কোনও কাজ না থাকলে গেমস। গেমস শেষ হলে দরকারি কাজ। ফোন নিয়ে এই চক্রাকার ব্যস্ততার জেরে প্রচণ্ড চাপ পড়ছে ঘাড় ও গলায়। সোজা অবস্থায় মেরুদণ্ডকে কোনও বাড়তি ওজন বহন করতে হয় না। কিন্তু যখনই ঘাড় ও গলা ঝুঁকে যায় ততই স্পাইনাল কর্ডে চাপ পড়ে ও ঘাড়-গলাকে বাড়তি ওজন বইতে হয়। যার সরাসরি প্রভাব পড়ে মেরুদণ্ডে।

আরও পড়ুন: গ্যাসের বার্নার খোলা রেখেই সিলিন্ডার অফ করেন?

ঘাড়ে ব্যথা দিয়ে শুরু হয় টেক্সট নেক। ছবি: শাটারস্টক।

এই চাপ পড়ারও নানা হিসেবনিকেষ আছে। কৌশিকবাবুর মতে, শরীর কত ডিগ্রি সামনের দিকে ঝুঁকছে তার উপর নির্ভর করবে ঘাড় ও গলা কতটা ওজন বইবে। মাথা নিচু করে মোবাইল ঘাঁটার সময় ঘাড় মোটামুটি ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি ঝোঁকে। এতে ঘাড়ের উপর প্রায় ৩৫ থেকে ৫৫ পাউন্ড ভার চাপে। এই অতিরিক্ত ওজন দিনের পর দিন বয়ে বেড়াতে কষ্ট হয় মেরুদণ্ডের। দীর্ঘ দিন এমন ভার বইতে বইতে এক সময় সামনের দিকে চিরতরে ঝুঁকে যায় মেরুদণ্ড, কুঁজো হওয়া থেকে শুরু করে ঘাড় আর সোজা করতে না পারা, গলা ও ঘাড়ে প্যারালাইসিস— এমন নানা অসুখে গিয়ে শেষ হয় এই টেক্সট নেক।

তা হলে উপায়?

চিকিৎসকদের মতে, এই অসুখ সারাতে গেলে একটাই উপায়। যে কোনও ভাবেই মোবাইল ফোনের ব্যবহারে রাশ টানুন। নইলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এ অসুখ থাবা বসাবে যে কোনও সময়। মাথা হেঁট করে নয়, হাত সামান্য তুলে চোখের সমান্তরালে এনে মোবাইল দেখুন। একটানা ১৫ মিনিটের বেশি মোবাইল ঘাঁটবেন না। নিয়ম মেনে কঠোর হন এই ক্ষেত্রে।

Fitness Tips Health Tips Text Neck Tech
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy