Advertisement
E-Paper

‘জিবলি’ নিয়ে উত্তাল সমাজমাধ্যম! বিষয়টি আসলে কী? কোথা থেকে পেল তার নাম এবং জনপ্রিয়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মায় আপনার পাশের বাড়ির বাসিন্দাও ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে ফেলেছেন নিজের কার্টুন ছবি! যার নাম ‘জিবলি আর্ট’।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ১৬:০৭
‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির আইকনিক দৃশ্যেরও জিবলি অবতার বানিয়েছেন বলিউড ভক্তরা।

‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির আইকনিক দৃশ্যেরও জিবলি অবতার বানিয়েছেন বলিউড ভক্তরা। ছবি : সংগৃহীত।

গত দু’-তিন দিনে চেনা মানুষের ‘কার্টুন অবতার’ দেখতে দেখতে অবাক হয়েছেন নিশ্চয়ই! ফুটবল খেলোয়াড় লিয়োনেল মেসি থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মায় আপনার পাশের বাড়ির বাসিন্দাও ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে ফেলেছেন নিজের কার্টুন ছবি! যার নাম ‘জিবলি আর্ট’। দেখেশুনে নতুন ‘ট্রেন্ড’-এ গা ভাসাতে ইচ্ছে হয়নি কি আপনারও? হয়তো খুঁজেও ফেলেছেন গুগ্‌লে। কী ভাবে বানাবেন নিজের জিবলি অবতার। কিন্তু যা নিয়ে এত মাতামাতি, সেই ‘জিবলি’ আসলে কী বস্তু? কোথা থেকে পেল তার অমন বিদঘুটে নাম? সেই নামের অর্থই বা কি? কেন এবং কী ভাবে জনপ্রিয় হল জিবলি শিল্প? নতুন ট্রেন্ডের গোড়ার কথায় চোখ রাখল আনন্দবাজার ডট কম।

জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমার বৈগ্রহিক দৃশ্যের জিবলি আর্টে ছেয়ে গিয়েছে সমাজমাধ্যমের পাতা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘হেরাফেরি’, ‘বাহুবলী’, ‘ওম শান্তি ওম’ এবং ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র দৃশ্য।

জনপ্রিয় ভারতীয় সিনেমার বৈগ্রহিক দৃশ্যের জিবলি আর্টে ছেয়ে গিয়েছে সমাজমাধ্যমের পাতা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ‘হেরাফেরি’, ‘বাহুবলী’, ‘ওম শান্তি ওম’ এবং ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’র দৃশ্য। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

জিবলি কী?

জিবলি আসলে একটি অ্যানিমেশন স্টুডিয়োর নাম। যার জন্ম হয় ১৯৮৫ সালে, জাপানের টোকিয়োতে। উজ্জ্বল জলরং অথবা অ্যাক্রেলিক রং দিয়ে হাতে আঁকা হত ওই স্টুডিয়োর সমস্ত অ্যানিমেশন। খামখেয়ালি কল্পনায় আঁকা সেই সমস্ত ছবি থেকে ফুটে বেরোত অজানা সুখানুভূতি। সম্ভবত সেই বিষয়টিই দর্শকদের মন টানে। জাপানের ওই অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা জাপানের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছোয় অ্যানিমেশনের আন্তর্জাতিক দুনিয়ায়। ওয়াল্ট ডিজ়নি অংশীদারির প্রস্তাব দেয় জিবলি স্টুডিয়োকে। কার্টুন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে জিবলি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মজেছেন জিবলি কার্টুনে। পোস্ট করেছেন নানা মুহূর্তের ছবি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মজেছেন জিবলি কার্টুনে। পোস্ট করেছেন নানা মুহূর্তের ছবি। ছবি: নরেন্দ্র মোদীর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে।

জিবলি নামের অর্থ কী?

জিবলি নামের নানা রকম অর্থ হয়। নানা দেশে এর ব্যবহারও রয়েছে। তবে জিবলি শব্দটির সবচেয়ে পুরনো উল্লেখ মেলে আরব দেশে। আরবি শব্দ ‘জিবলি’ ব্যবহার করা হয় সাহারা মরুভূমির উত্তপ্ত এবং শুষ্ক হাওয়াকে বোঝানোর জন্য। জিবলি স্টুডিয়োর তিন প্রতিষ্ঠাতার প্রধান যিনি, সেই জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকার হায়াও মিয়াজ়াকি অবশ্য ওই নাম বেছে নিয়েছিলেন ইটালির একটি বিমানের নাম থেকে।

জিবলির জনক। জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকার হায়াও মিয়াজ়াকি।

জিবলির জনক। জাপানি অ্যানিমেশন শিল্পী এবং চলচ্চিত্রকার হায়াও মিয়াজ়াকি। ছবি: সংগৃহীত।

বিমানের নামে কার্টুন!

ক্যাপ্রোনি কা.৩০৯ নামের ওই বিমান ছিল সাহারা মরুভূমিতে ইটালির নজরদারি চালানোর বিমান। সেই বিমানের নামও ছিল জিবলি (ইটালীয় উচ্চারণে গিবলি)। বিমান নিয়ে আগ্রহী মিয়াজ়াকি সেই নাম জেনেছিলেন। নামের মানে জেনে আরও ভাল লেগেছিল তাঁর। নিজের স্টুডিয়ো তৈরি করার সময় তাই বেছে নিয়েছিলেন সেই নামই। জাপানি উচ্চারণে যা হয়েছিল জিবলি। মিয়াজ়াকি চেয়েছিলেন, জিবলি তার নামের অর্থের মতোই অ্যানিমেশনের দুনিয়ার পালে নতুন হাওয়া নিয়ে আসুক।

ক্যাপ্রোনি কা.৩০৯ নামের ওই বিমান ছিল সাহারা মরুভূমিতে ইতালির নজরদারি চালানোর বিমান। সেই বিমানের নামও ছিল জিবলি।

ক্যাপ্রোনি কা.৩০৯ নামের ওই বিমান ছিল সাহারা মরুভূমিতে ইতালির নজরদারি চালানোর বিমান। সেই বিমানের নামও ছিল জিবলি।

জনপ্রিয়তা

জিবলির জনপ্রিয়তা কতখানি, তার একটি হিসাব দেওয়া যাক। গত ৩৮ বছরে হাতেগোনা ২২টি ছবি তৈরি করেছে জিবলি স্টুডিয়ো। টেলিভিশনের জন্য বানিয়েছে ৩টি ছবি। আর সেই সব ছবির প্রত্যেকটিই অ্যানিমেশন দুনিয়ায় আদৃত। জাপানের যে প্রথম দশটি ছবি আজও ব্যবসা দেয় এবং সর্বকালের সেরা ব্যবসা করেছে, তার মধ্যে চারটিই জিবলি স্টুডিয়োতে তৈরি। জিবলির ছবি অস্কার, গোল্ডেন বিয়ার, বাফতা, গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারও জিতেছে একাধিক বার। ২০২৪ সালের সেরা অ্যানিমেশন ছবির শিরোপা উঠেছে জিবলি স্টুডিয়োরই তৈরি ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’ ছবির মাথায়। জিবলির তৈরি ছবি ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ হল প্রথম ‘নন-ইংলিশ’ অ্যানিমেশন ছবি, যা মূল বিভাগে অস্কার জেতে। ২০২১ সালে জিবলির জনপ্রিয়তা দেখে টোকিয়োয় জিবলি মিউজ়িয়ামও তৈরি হয়। জিবলির দৌলতে মিয়াজ়াকি ২০২৪ সালে এশিয়ার ‘নোবেল প্রাইজ়’ র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারও পান।

সত্যজিৎ রায়ের ছবির জিবলি আর্ট। রয়েছে ফেলুদা, হীরক রাজা, উদয়ন পণ্ডিত, লালমোইইহনবাবুও।

সত্যজিৎ রায়ের ছবির জিবলি আর্ট। রয়েছে ফেলুদা, হীরক রাজা, উদয়ন পণ্ডিত, লালমোইইহনবাবুও। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

জিবলির ট্রেন্ড

সম্প্রতি ওপেন এআই-এর চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীরা দেখতে পান, তাঁরা তাঁদের ছবি জিবলি অ্যানিমেশনে বদলে নিতে পারছেন। বিষয়টি জানার পরেই চ্যাটজিপিটির নতুন সুবিধাটি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। ওপেন এআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান জানিয়েছেন, চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে নানা রকম ভাবনাচিন্তা করছিলেন তাঁরা। সেই সময়েই জিবলি আর্টের কথা তাঁদের মাথায় আসে। ওই প্রযুক্তি প্রকাশ্যে আনার পরেই চাহিদা তুঙ্গে ওঠে চ্যাটজিপিটির। অল্টম্যানের কথায়, ‘‘জিবলি ছবির চাহিদা সামাল দিতে গিয়ে চ্যাটজিপিটির গ্রাফিক প্রসেসিং ইউনিটের এখন-তখন দশা। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করা হয়েছিল তা যে সফল হয়েছে, তাতে আমরা খুশি।’’

Studio Ghibli Ghibli Art
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy