Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সোশ্যাল মিডিয়া কেন মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে?

টুইটারে তর্ক জুড়তে না পারলে স্নান-খাওয়া মাথায় ওঠে বিজনেস অ্যানালিস্ট অর্ক সেনের। স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো দূর অস্ত্, প্রয়োজনের কথা বলার সুযোগও মেলে না টুইটার হ্যান্ডেলে বুঁদ হয়ে থাকার সময়ে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০৫
Share: Save:

দিনভর অফিসের কাজে ব্যস্ত আইটি ইঞ্জিনিয়ার পৌলমী সাহার সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো অবসরের সংজ্ঞা হয়ে উঠেছে। রাত জেগে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে আড্ডা দেওয়া কিংবা ফেসবুকের নিউজ ফিডে নজর দিতে গিয়ে কখন যে ঘুমের বরাদ্দ সময় ফুরিয়ে যায়, বুঝতেই পারেন না বছর তিরিশের ওই তরুণী। কয়েক সপ্তাহ ধরে ছোটখাটো বিষয়েও দুশ্চিন্তায় ভুগছেন পৌলমী। কখনও অফিস যেতে পাঁচ মিনিট দেরি হলে চাকরি হারানোর ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে, আবার কখনও বন্ধুকে দু’বার ফোনে ব্যস্ত পেলে অস্থির হয়ে উঠছেন।

কলেজ পড়ুয়া ঋত্বিক বসুর ছবি তোলার শখ। সেই শখেই ইনস্টাগ্রামে প্রোফাইল খুলেছিলেন। এখন দিনে খান দশেক ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করতে না পারলে রাতের ঘুম উড়ে যায় তাঁর। শেয়ার করা ছবিতে ফলোয়ারেরা ‘রিঅ্যাক্ট’ না করলে সিগারেটের সংখ্যাও বাড়ে।

টুইটারে তর্ক জুড়তে না পারলে স্নান-খাওয়া মাথায় ওঠে বিজনেস অ্যানালিস্ট অর্ক সেনের। স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো দূর অস্ত্, প্রয়োজনের কথা বলার সুযোগও মেলে না টুইটার হ্যান্ডেলে বুঁদ হয়ে থাকার সময়ে।

টুইটারে তর্ক জুড়তে না পারলে স্নান-খাওয়া মাথায় ওঠে বিজনেস অ্যানালিস্ট অর্ক সেনের। স্ত্রীর সঙ্গে সময় কাটানো দূর অস্ত্, প্রয়োজনের কথা বলার সুযোগও মেলে না টুইটার হ্যান্ডেলে বুঁদ হয়ে থাকার সময়ে।

প্রায় এক হাজার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল এক বেসরকারি সংস্থা। তাতে দেখা যাচ্ছে, পৌলমী-ঋত্বিক-অর্কের মতো তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের মানসিক চাপের কারণ সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানে অতিরিক্ত সময় কাটানোয় ৯০ শতাংশ ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। কম ঘুমের জেরে তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ সম্পর্ক হারানো বা সামাজিক সম্মান হারানোর মতো বিভিন্ন আশঙ্কায় ভুগছেন। আবার ১৪ শতাংশ সেই মানসিক চাপ কমাতে অতিরিক্ত তামাকজাত দ্রব্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। মোট ব্যবহারকারীর ৮৪ শতাংশ মনে করছেন, তাঁদের প্রতিদিনের জীবনে পারিবারিক সম্পর্কে কুপ্রভাব ফেলছে সোশ্যাল মিডিয়া।

ওই বেসরকারি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং এগ্‌জিকিউটিভ চেয়ারম্যান বি এল মিত্তল এই সমীক্ষা সম্পর্কে বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া দৈনন্দিন জীবনের অংশ। ব্যক্তিত্ব বিকাশে এই মাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে অবশ্যই। কিন্তু অতিরিক্ত সময় কাটানোর জেরে কম ঘুম, ক্লান্তি ও যে কোনও বিষয়ে অকারণ উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। কমে যাচ্ছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।’’ সমীক্ষায় উঠে আসছে, মানসিক চাপে ভুক্তভোগীদের বড় অংশ চাপ কমানোর জন্যে বিজ্ঞাপন দেখে পণ্য ব্যবহার করছেন, কেউ কেউ মদ বা তামাকজাত দ্রব্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।

কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় কাটানো কেন মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে? মনস্তত্ত্বের শিক্ষক নীলাঞ্জনা সান্যাল মনে করেন, প্রতিযোগিতার যুগে সোশ্যাল মিডিয়া আরও বেশি ভোগবিলাসী করে তুলছে। ভার্চুয়াল বন্ধুর দামি গাড়ি বা সাজানো বাড়ির ছবি কখনও জাগাচ্ছে ঈর্ষা। কখনও আবার কাল্পনিক শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব থেকে তৈরি হয় স্নায়ুজনিত উত্তেজনা। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার এই অসীম আকারের সঙ্গে মানাতে না পারার জেরে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

আশপাশের সম্পর্কগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমেই এর সমাধানের পথ মিলতে পারে, পরামর্শ মনোরোগ চিকিৎসকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, তরুণ প্রজন্ম মাঠে নেমে খেলার সঙ্গে অভ্যস্ত হোক। নিয়মিত বই প়ড়া, পরিবারের সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়া কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে গান গেয়ে সময় কাটানো ভার্চুয়াল জগতের নেশা ছাড়াতে সাহায্য করবে। মনোরোগ চিকিৎসক জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার নেশাকে ‘আচরণগত আসক্তি’ বলা হয়। অন্যান্য নেশা থেকে বেরোনোর জন্য যেমন চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া যায়, এ ক্ষেত্রেও সেটা করা যেতে পারে। এই নেশা মনের পক্ষে ক্ষতিকর। মানবিক সম্পর্ককে অস্ত্র করেই এর থেকে বেরোনো যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

anxiety depression social media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE