নাটকের একটি দৃশ্যে অভিনেতারা। ছবি: সংগৃহীত
৩২ নম্বর অশ্বিনী দত্ত রোড।দক্ষিণ কলকাতার একটি দোতলা বাড়ি। টর্চের আলো ফেলে টিকিট দেখে নয়,গোটা নাটকটির যিনি সূত্রধর সেই অমৃতা নামক চরিত্রটির হাত ধরে দর্শক প্রবেশ করেন বাড়ির বৈঠকখানায়। কাঠের নকশা করা সোফায় আয়েশ করে বসে অমৃতার জীবনের গল্প শুনতে শুনতে দর্শক হয়ে ওঠেন নাটকের অংশ। নির্বাক কতগুলি চরিত্র।
এর পর একতলা থেকে সূত্রধরের ডাকে সাড়া দিয়ে নাটকের নির্বাক চরিত্ররা উঠে যান দোতলার একটি ঘরে। সেখানে এই নির্বাক দর্শকের সঙ্গে আলাপ হয় ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘেঁটে থাকা পিয়াল নামক চরিত্রের। ধীরে ধীরে পরত খুলতে থাকে কাহিনির।
বাড়ির সদ্য গর্ভপাত হওয়াছোট মেয়ে প্রিয়া এবং অবিবাহিতা অথচ এক হৃদয় প্রেমের মালিক এ বাড়ির বড় মেয়ের সঙ্গেও পরিচয় ঘটে দর্শকের। খাওয়ার ঘর থেকে পাশের ঘর, সেখান থেকে ছাদ। অবশেষে যবনিকা পতন ঘটে ‘৩২, অশ্বিনী দত্ত রোড’ এবং একটি ইমার্সিভ নাট্য প্রযোজনার।
ইমার্সিভ-নাটকের এই ধারাটি সম্পর্কে কলকাতার নিয়মিত থিয়েটারের দর্শক খুব একটা ওয়াকিবহাল নন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে ইমার্সিভ থিয়েটারের সূচনা হয় ২০০০ সাল নাগাদ লন্ডনের পাঞ্চড্রাঙ্ক থিয়েটার কোম্পানির হাত ধরে। নিউ ইয়র্কের একটি অপরিত্যক্ত হোটেলে ‘স্লিপ নো মোর’ নাটকে শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ অভিনয় করেছিল তাঁরা। সেই শুরু। ধীরে ধীরে বিদেশের মাটিতে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ইমার্সিভ থিয়েটারের। অগস্ত বোয়াল, ব্রাজিলের বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব। তাঁর পরিচালিত ইমার্সিভ নাটকেও কখনও কখনও দর্শকও হয়ে উঠত অভিনয়ের অংশ।
‘এসপিসি ক্রাফ্ট’-এর উদ্যেগে ‘৩২,অশ্বিনী দত্ত রোড’মহানগরীর বুকে বাংলা ভাষায় করা প্রথম ইমার্সিভ নাট্য প্রযোজনা। ২০১৯ সালে যখন বাতাসে কোভিড ছিল না, শুধুই শীতকাল ছিল সেই সময় এই নাটকটি প্রথম কলকাতায় অভিনীত হয়। তারপর প্রায় দু’বছর পর আবার এক শীতকালে অতিমারির সঙ্গে লড়াই করে ‘৩২, অশ্বিনী দত্ত রোড’অভিনীত হল।
এই নাটক মূলত একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে তার ঘর-অলিন্দে ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলির জীবনের অন্বেষণ। ইমার্সিভ প্রযোজনাগুলি প্রসেনিয়ামের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চলে, তাই এই ধরনের নাটকের কাহিনি এগোয় চরিত্রের হাত ধরে। আলাদা করে তৈরি করা নাটকের সেট,আলো, থার্ড বেল, পর্দা ইত্যাদি অনুষঙ্গের প্রয়োজন পড়ে না।
প্রথাগত থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে এই রকম অভিনব বিষয় ভাবনার নেপথ্যে রয়েছেন অভিনেতা(সব শিল্প এসে মেশে যেখানে) সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। তিনি নিজেও এই নাটকের একটি চরিত্র।
টরন্টোর ঐতিহাসিক ক্যাম্পবেল হাউসে প্রথমবার ইমার্সিভ থিয়েটার ‘হগটাউন’দেখার পর কলকাতার দর্শকের জন্যে বাংলা ভাষায় এই রকম একটি প্রযোজনা করার কথা মাথায় আসে তাঁর।
সুজয় প্রসাদের কথায়,‘‘আমার একজন বন্ধুর পুরনো আমলের এই বাড়িতে এসে মনে হয়েছিল, ইমার্সিভ নাটকের জন্য বেশ উপযুক্ত এটি। নাটকের জন্য ভিন্ন পরিবেশ তৈরি না করে, সব কিছু ঠিক যেমন আছে তেমনটি রেখেই নাটকটি করতে চেয়েছিলাম’।
তবে নাটকের বিষয় এবং অবয়বে অভিনবত্ব থাকলেও হাতে গোনা দর্শক সংখ্যা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে আদৌও সফল এবং লাভজনক কি এই প্রযোজনা? এ বিষয়ে সুজয়প্রসাদ বলেন,‘‘আর্থিক অসঙ্গতি আছে ঠিকই। কেউ ভালবেসে ফান্ডে কিছু দিতে চাইলে দিতে পারেন। তবে অল্প হলেও কিছু মানুষকে যে কিছুক্ষণের জন্য বিস্মিত করে তুলতে পারি তাই বা কম কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy