Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Depression

হোমে ছোটদের মনের ক্ষত বুঝতে এ বার সমীক্ষা শুরু

নাবালক-নাবালিকাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞ একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই কাজে উদ্যোগী হয়েছে শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:১০
Share: Save:

কেউ জন্ম থেকেই মা-বাবা কাকে বলে জানে না। কেউ কম বয়সে পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে শরীর, মনে ধ্বস্ত। কেউ বা পাকেচক্রে কাঁচা বয়সেই ‘অপরাধী’র তকমায় জর্জরিত। সরকারি বা সরকারি অনুদানপুষ্ট হোমের আবাসিক, একেবারে ছোট থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নানা গোত্রের ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখতে সমীক্ষার পথে হাঁটছে রাজ্য।

নাবালক-নাবালিকাদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞ একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই কাজে উদ্যোগী হয়েছে শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন। ইদানীং কালে সরকারি হোমের পরিকাঠামো, স্বাচ্ছন্দ্যে কিছু ইতিবাচক বদল এসেছে। তাতে ছোটদের থাকা-খাওয়ার মান খানিকটা উন্নতও হয়েছে। “কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, সেটাই সব কিছু নয়। ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ’’— বলছিলেন কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “হোমের শিশুরা এমনিতেই স্বাভাবিক শৈশবের স্বাদ থেকে কিছুটা বঞ্চিত থাকে। করোনাকালের নব্য স্বাভাবিকতার ধাক্কা তাদের আরও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার গুরুত্বও বাড়ছে।’’

ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুষম বিকাশের জন্য কী কী দরকার, কোন দিকগুলিতে আরও বেশি নজর দেওয়া সম্ভব, সেটা যাচাই করতে পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষাই রাস্তা বলে মনে করছেন কমিশন কর্তৃপক্ষ। সমীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা শিগগির সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে তাদের সুপারিশ পাঠাবে।

এই কাজে কমিশনের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে রয়েছে, নানা ধরনের নাবালক-নাবালিকার মানসিক ক্ষত নিরাময়ের কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারাই এ ব্যাপারে সমীক্ষার কাজটি শুরু করছে। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে সোহিনী চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘হোমে বিভিন্ন ধরনের বাচ্চারা আসে। তাদের মনের ক্ষতটাও ভালবেসে এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বোঝার চেষ্টা করা দরকার। সব ছোটদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমীক্ষার মাধ্যমে এই কাজটাই করা হবে।”

কমিশনের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ের উপদেষ্টা যশোবন্তী শ্রীমানীর কথায়, “একেবারে ছোট বয়স থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত হোমের আবাসিকদের বিভিন্ন গোত্রে ভাগ করে আমরা কাজটা করতে চাইছি। সেই সঙ্গে দেখে নেওয়া হচ্ছে, তারা কে কী কারণে হোমে রয়েছে। ছোটদের মানসিক অবস্থা বুঝে কার, কী বিশেষ ধরনের যত্ন দরকার, সেটাও ঠিক করা যাবে।’’ চলতি মাসেই সল্টলেকের সুকন্যা হোমে এই সমীক্ষা-প্রকল্পটির প্রাথমিক পদক্ষেপ করা হবে।

করোনার এই অতিমারি পরিস্থিতির জন্য এখনও হোমগুলিতে বাইরের লোকজনের আসা-যাওয়ার উপরে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। এর ফলেও সমীক্ষা শুরু হতে কিছুটা দেরি হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি কোনও মতেই আর ফেলে রাখতে চায় না কমিশন। প্রাথমিক ভাবে কলকাতার সরকারি শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রগুলিতে সমীক্ষার কাজ শুরু হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এর পরে রাজ্য জুড়ে ১৯টি সরকারি হোম এবং সরকারি অনুদানপুষ্ট ৭৩টি হোমে সমীক্ষা র কাজ চালানো হবে।

করোনাকালে সল্টলেকের সুকন্যা হোমে বা মুর্শিদাবাদ, মালদহে অনলাইনে ছোটদের নাচের মাধ্যমে মানসিক ক্ষত নিরাময়ের কাজ করেছে সোহিনীদের সংস্থা। সেই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ছোটদের ‘মিউজ়িক থেরাপি’ও চলেছে।

কমিশনের তরফেও হোমে হোমে ছোটদের জন্য ডাক্তারি পরামর্শের হেল্পলাইন সক্রিয় ছিল। লকডাউনে ছোটদের নিয়ে বিভিন্ন হোমে রবীন্দ্রজয়ন্তী বা বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ি তৈরিতেও উৎসাহ জুগিয়েছে কমিশন।

যশোবন্তীর মতে, “হোমের বাচ্চাদের কারও কারও রাগ নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট সাহায্য দরকার হয়। সেই সঙ্গে কার কিসে আগ্রহ, সেটাও বোঝা দরকার। মানসিক স্বাস্থ্যের সমীক্ষা নানা ভাবেই এই ছোটদের বুঝতে সাহায্য করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Depression Mental Disorder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE