Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Transgender

দুর্গাপুজোয় ‘পাশে থাকে না সরকার’, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নার ডাক দিলেন শহরের রূপান্তরকামীরা

পুজো হোক বা রোজের কাজ— পাশে থাকে না সরকার। এমনই অভিযোগ রূপান্তরকামীদের। প্রতিবাদ জানাতে বুধবার তাঁরা জড়ো হতে চান মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে। ফেসবুকে সে মর্মে আহ্বান জানানো হয়েছে।

লোকচক্ষের আড়ালে থাকতে চান না তাঁরা। সমাজে যে তাঁদেরও জায়গা আছে, তা মনে করাতে চান। সে কথা জানাতে চান মুখ্যমন্ত্রীকেও।

লোকচক্ষের আড়ালে থাকতে চান না তাঁরা। সমাজে যে তাঁদেরও জায়গা আছে, তা মনে করাতে চান। সে কথা জানাতে চান মুখ্যমন্ত্রীকেও। ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৪:০৬
Share: Save:

গত পাঁচ বছর ধরে নিজেদের পুজো করেন ওঁরা। তবে রূপান্তরকামীদের এই প্রয়াসের কোনও স্বীকৃতি সে ভাবে মেলেনি। রাজ্যের বহু পুজো উদ্যোক্তার ঘরে সরকারি অনুদান গেলেও তাঁরা পাননি কখনও। এমনকি, পুজো কার্নিভালে যোগ দেওয়ার ডাকও আসেনি। এমনই অভিযোগ তুলে বুধবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে ধর্না দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন শহরের রূপান্তরকামীদের একাংশ।

লোকচক্ষের আড়ালে থাকতে চান না তাঁরা। সমাজে যে তাঁদেরও জায়গা আছে, তা মনে করাতে চান। সে কথা জানাতে চান মুখ্যমন্ত্রীকেও। তাই বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ রূপান্তরকামীদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন রূপান্তরকামী সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহ। প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরুর আগে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। রঞ্জিতা বলেন, ‘‘আমরা কিন্তু সম্পূর্ণ নিজেদের চেষ্টায় পুজো করি। যেখানে নেতা-মন্ত্রীদের বড় বড় ক্লাব সরকারি অনুদান পায়, আমরা কখনও পাই না। অথচ আমাদের মতো সংখ্যালঘুদেরই তো সরকারি সাহায্য বেশি দরকার! যাদের অনেক অনেক টাকা আছে, তাদের কেন আরও টাকা দেয় সরকার? সরকারি অনুদান ছাড়াও তাঁদের পুজো দিব্যি হবে।’’

রঞ্জিতার আরও বক্তব্য, রূপান্তরকামীরা যে সমাজেরই অংশ, তা অনেকেই ভুলে যান। কিন্তু পাশে না দাঁড়ালেই যে সকলের চোখের আড়ালে চলে যাবেন তাঁরা, তা তো নয়! রূপান্তরকামীদের লাঞ্ছনার কথা অনেক সময়েই নানা খবরে উঠে আসে। সমাজে তাঁদের জায়গা কতটা রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্নও ওঠে। কিন্তু উৎসব-পার্বণের দিন তাঁরা কোথায় থাকেন, কী ভাবে শামিল হন উৎসবে, আনন্দ করেন, সে কথা ক’জন মনে রাখেন? বিশেষ কেউ রাখেন না। তাই গত পাঁচ বছর ধরে নিজেদের পুজোর আয়োজন করছেন রূপান্তরকামীরা। তাঁরা অন্য পাঁচটা ক্লাবের মতো থিমপুজো করেন না। মুকুন্দপুরে তাঁদের ঘরে পুজো হয় অর্ধনারীশ্বরের। বুধবার রঞ্জিতা বলেন, ‘‘এ তো শুধু পুজো নয়, এর মাধ্যমে সচেতনতার প্রচারও করি আমরা। অর্ধনারীশ্বরও শক্তির একটি রূপ। যে শিব, সে-ই পার্বতী। এই রূপের পুজো আর কোথাও হয় না। এর মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চাই যে, রূপান্তরকামীরা হঠাৎ কোথাও থেকে চলে আসেননি। পুরাণেও ছিলাম আমরা। না হলে ভগবানের এমন রূপ কোথা থেকে আসবে?’’

রূপান্তরকামীরা অন্য ক্লাবের মতো থিমপুজো করেন না। মুকুন্দপুরে তাঁদের ঘরে পুজো হয় অর্ধনারীশ্বরের।

রূপান্তরকামীরা অন্য ক্লাবের মতো থিমপুজো করেন না। মুকুন্দপুরে তাঁদের ঘরে পুজো হয় অর্ধনারীশ্বরের। ছবি: সংগৃহীত

রঞ্জিতার দাবি, ভারতে সবচেয়ে পিছিয়ে-পড়া জনগোষ্ঠী হল রূপান্তরকামীরা। তাঁর বক্তব্য, দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আছে এই মর্মে যে, সব রাজ্যে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলির পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সাহায্য করার জন্য। তাই প্রতিটি রাজ্যে তৈরি হয়েছে ‘ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড’। রঞ্জিতার প্রশ্ন, ‘‘কিন্তু কোথায় কী! বোর্ডও কিছু করে না আর!’’ প্রসঙ্গত, বছর চারেক রাজ্যের সেই বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি নিজেও। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকার কখনওই আসলে রূপান্তরকামীদের কোনও উন্নয়ন করেনি। রাজ্যের কোনও নেতা-মন্ত্রীই আসলে আমাদের পাশে দাঁড়াননি। বহু রাজ্যেই কিন্তু সরকারি উদ্যোগে রূপান্তরকামীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে তেমন কিছুই হয়নি। তার উপরে এই পুজোর সময়ে যে ভাবে বৈষম্য দেখা গেল, তা তো বলারই নয়। এখন যাঁরা ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডে আছেন, তাঁরাও বুঝি সরকারের কথায় ওঠাবসা করেন। তাই আসলে কাজের কাজটা হয় না।’’

পুজোর জন্য সরকারি সাহায্য পেতে হলে সঠিক পথে আবেদন জানাতে হয়। খরচ এবং জোগানের হিসাব দিতে হয়। সে সব গুছিয়েই দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি রঞ্জিতার। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা ৬০ হাজার টাকার এককালীন ‘পুজো অনুদান’ পাননি। ফলে তাঁদের প্রতি অবহেলাই হচ্ছে বলে দাবি রঞ্জিতার। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের এই পুজোয় দিল্লি থেকে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত এসেছিলেন। তাঁর জন্য পুলিশও ছিল যথেষ্ট। ফলে আমাদের পুজো কী ভাবে করা হয়, তা ঠিকই সরকারের নজরে পড়েছে।’’ তবু সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারেনি সরকার। সেই সূত্রেই এই রূপান্তরকামী সমাজকর্মীর প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি আমরা এই রাজ্যে থাকি না?’’

সেই কারণেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনতে চান বিষয়টি। সেই কারণেই বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার বাড়ির সামনে ধর্নার সিদ্ধান্ত এবং আহ্বান। কারণ, তাঁরা এই ‘অবহেলা’ আর মানতে চান না। তাই সকলের সামনে এসে নিজেদের লাঞ্ছনার কথা বলতে চান। মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনতে চান গোটা বিষয়টি। তাই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন ওঁরা। রঞ্জিতার আশা, যাঁরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চান, তাঁরা নিজেদের মতো করেই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনও দলাদলিতে বিশ্বাসী নই। যাঁরা রূপান্তরকামীদের উন্নয়নে বিশ্বাস করেন, তাঁরা আসবেন। আমাদের উদ্দেশ্য হইচই করা নয়, সচেতনতা বাড়ানো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE