Advertisement
E-Paper

সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তুললে সায়টিকার ব্যথা বাড়ে

৪০ শতাংশ মানুষ কোনও না কোনও সময় লোব্যাক পেনে ভোগেন। মাঝবয়সি মহিলাদের মধ্যে কোমর, পায়ের যন্ত্রণার ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি।

সামনে ঝুঁকলে বাড়ে ব্যাথা।

সামনে ঝুঁকলে বাড়ে ব্যাথা। শাটারস্টক

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৩:২৬
Share
Save

হাঁটতে গেলেই কোমর থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত অসহ্য যন্ত্রণা। সায়টিক নার্ভে কোনও ভাবে চোট বা চাপ লাগলে কোমর ও পায়ের ব্যথায় ভয়ানক কষ্ট পেতে হয়। ব্যথার ওষুধ, গরম সেঁক, ফিজিওথেরাপি কিছুতেই যেন ব্যথার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না। ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০ জন জীবনের কোনও না কোনও সময় লোব্যাক পেনে ভোগেন। মাঝবয়সি মহিলাদের মধ্যে কোমর, পায়ের যন্ত্রণার ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি। বললেন ব্যথা বিশেষজ্ঞ (পেন ম্যানেজমেন্ট) গৌতম দাস। তবে সাধারণ লোব্যাক পেনের সঙ্গে সায়টিকার কোমর ও পায়ের ব্যথার তফাৎ আছে।

সায়টিকা ও লো ব্যাক পেনের পার্থক্য

আমাদের দেশে প্রতি বছর এক কোটি মানুষ সায়টিকার ব্যথায় কষ্ট পান। অবশ্য লো ব্যাক পেনের সঙ্গে সায়টিকার ব্যথার কিছু মূলগত পার্থক্য আছে। মেরুদণ্ডের নীচের দিকে ব্যথা হলেই সাধারণ মানুষ লো ব্যাক পেন শব্দটি ব্যবহার করেন। কোমরের পিছনে ও মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যথা মানেই লো ব্যাক পেন। কিন্তু সব লো ব্যাক পেন সায়টিকা নয়, বললেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ মৌলিমাধব ঘটক। লো ব্যাক পেন হলে কোমরে খুব ব্যথা অনুভূত হয়। হাঁটতে চলতে গেলে কষ্ট হয়। সিঁড়ি ওঠানামা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে সায়টিকার ব্যথায় কোমরের তীব্র ব্যথা নিচে পায়ের নীচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সায়টিকার ব্যথা সাধারণত ডান বা বাম যে কোনও একদিকে হয়। গৌতম দাস জানালেন, আদতে সায়টিকা আমাদের শরীরের দীর্ঘতম নার্ভ বা স্নায়ু। দু’দিকের কোমরের পিছনে দুটি সায়টিকা নার্ভ থাকে। কোমরের পেছন দিক থেকে বেরিয়ে পায়ের পেছন দিক দিয়ে গিয়ে নীচে পর্যন্ত এই দুটি নার্ভ বিস্তৃত। মেরুদণ্ডের কোনও সমস্যায় সায়টিকা নার্ভে চাপ পড়লে কোমর থেকে ব্যথা ক্রমশ পায়ের নীচের দিকে নেমে যায়। লো ব্যাক পেনের সঙ্গে সায়টিকার ব্যথার আরও কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন সায়টিকা হলে ব্যথার পাশাপাশি পা ঝিনঝিন করে ও অবশ হয়ে যায়। সাধারণ লো ব্যাক পেন হলে শুধু ব্যথাই হয়, বললেন মৌলিমাধব।

কী কী কারণে সায়টিকার ব্যথা হয়

সায়টিকা নার্ভে চাপ পড়লেই ব্যথা শুরু হয়। চাপ না কমা পর্যন্ত ব্যথা চলতেই থাকে, জানালেন গৌতম দাস। কোমরের পিছনে থাকায় নার্ভে চাপ পড়ার কারণগুলির মধ্যে অন্যতম দুর্ঘটনায় চোট বা খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়ে সায়টিকা নার্ভে চাপ পড়া। আবার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজেনারেটিভ আর্থ্রাইটিসের কারণে মেরুদণ্ডের দুটি কশেরুকার মাঝখানের কুশন বা ডিস্ক হার্নিয়েটেড হওয়া অর্থাৎ বেরিয়ে আসা। জেলির মত ডিস্ক স্থানচ্যুত হয়ে সায়টিকা নার্ভে চাপ দিতে শুরু করলেই ব্যথার চোটে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় পেট বড় হয়ে যায় বলে কোমরের পেছনের নার্ভে চাপ বাড়ে। তাই এই সময়ে কোমরের ব্যথা প্রায় অবধারিত। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ব্যথা সাময়িক অর্থাৎ প্রসবের পর ধীরে ধীরে চলে যায়।

সায়টিকার ব্যথার লক্ষণ

ডান ও বাম দিকে দুটি সায়টিকা নার্ভ থাকলেও ব্যথা শুরু হয় একদিকে। কোমরের পিছন দিক থেকে ব্যথা শুরু হয়ে নিচের দিকে নেমে যায়। হাঁচি কাশি হলে ব্যথা বেড়ে যায়। অনেক সময় চেয়ারে বা বসলেও ব্যথা তীব্র আকার নিতে পারে বললেন মৌলিমাধব। আবার অনেক সময় ব্যথার বদলে পায়ের নীচের দিক অসাড় হয়ে যায়। হাঁটা চলা করতে অসুবিধে হয়। আচমকাই এই উপসর্গ শুরু হয় এবং অনেক সময় ব্যথা থেকেই যায়, উত্তরোত্তর ব্যথা বেড়ে চলে। কখনও ব্যথা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে চলে যেতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি ৫০ জনের মধ্যে ১ জনের জীবনের কোনও না কোনও সময় সায়টিকার ব্যথার ভোগান্তি হয়। তাঁদের মধ্যে আবার এক চতুর্থাংশের ব্যথা ছয় সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে চলতে থাকে। প্রচলিত চিকিৎসায় অনেকের কাজ না হওয়ায় ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্টের সাহায্য নিতে হতে পারে।

সামনে ঝুঁকে ওজন তুললে সায়টিকার ঝুঁকি বেশি

সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তুললে কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক স্লিপ করার ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া চোট লেগে অথবা মেরুদণ্ডে টিউমার হলে, কোনও সংক্রমণ হলেও সায়টিকার ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে। ভারী ও মোটাসোটা পার্স সায়টিকার ব্যথা ডেকে আনতে পারে। মোটা ওয়ালেট হিপ পকেটে রাখলে সায়টিকা নার্ভে চাপ পড়ে ব্যথার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

স্ট্রেচিং এক্সারসাইজে ব্যথা কমে

প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সায়টিকার ব্যথা প্রচলিত চিকিৎসা আর সঙ্গে কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করে সারানো যায়। নইলে ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্ট করে ব্যথা কমানো যায়, বললেন গৌতম দাস। তবে তার আগে চিকিৎসক কয়েকটি পরীক্ষা করে দেখে নেন অসুখটি সত্যিই সায়টিকা কি না। লেগ রাইজিং, স্কোয়াট, গোড়ালি ও আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দরকার হলে সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করাতে হতে পারে। এরপর ইন্টারভেনশনাল পেন ম্যানেজমেন্টের সাহায্যে সায়টিকার ব্যথা সারানো হয়। মৌলিমাধব জানালেন, চিকিৎসার সঙ্গে কিছু এক্সারসাইজ আবশ্যিক। তবে প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর এই আপ্তবাক্য মেনে সায়টিকা নার্ভ সুস্থ রাখার জন্যে ছোট থেকেই স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করা ও সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তোলা বন্ধ রাখতেই হবে।

Health Tips Back Pain Pain Knee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy