শীতের কলকাতায় রকমারি স্বাদের খাবারে সেজে উঠেছে ‘দ্য ফ্ল্যামবয়েন্ট’। এই পদটির নাম চারকোল ডিমসাম। ছবি:দ্য ফ্ল্যামবয়েন্ট
চিকেন রোল, গন্ধে ভুরভুর করা বিরিয়ানিতে মজে থাকা বাঙালি হাতের কাছে পিৎজ়া, পাস্তা, সুশি, বুরিতো পেলে কি ছেড়ে দেবে?
ভিন্দেশি পদের আস্বাদ পেয়ে বদলাচ্ছে ভোজনরসিক বাঙালির স্বাদকোরকও। এ যেন এক নয়া উড়ান। চপ, কাটলেট, কবিরাজি থেকে সুশি, মেক্সিকান রোল, থিন ক্রাস্ট পিৎজ়া।
চায়ের ঠেকের তার্কিক বাঙালি এখন অভিজাত পানশালায় পরিবার-পরিজন নিয়ে দিব্যি স্বচ্ছন্দ। পানীয়, আড্ডা, সুর, ছন্দ, দেশ-বিদেশের নানা স্বাদ— সবই চাইছে তারা একসঙ্গে।
সেই চাওয়াকে মাথায় রেখেই কলকাতায় তৈরি হচ্ছে নিত্যনতুন ঠিকানা। পাল্টাচ্ছে রেস্তরাঁ। পাল্টাচ্ছে পানশালা। খাবারে, পরিবেশে, পরিবেশনে লাগছে বিশ্বমানের ছোঁয়া। লক্ষ্য, ভোজনরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্ত করা, খানা এবং পিনা, উভয় ক্ষেত্রেই।
বদলে যাওয়ার চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে জাপান, চিন, তাইল্যান্ড, কোরিয়ার কুইজ়িন এক ছাদের তলায় এনে ফেলেছে বহু রেস্তরাঁ-পানশালা। অতিথিদের মন জয়ে নিত্যনতুন চমক দিতে খাবারের স্বাদ-গন্ধ নিয়ে চলছে পরীক্ষানিরীক্ষা। দেশি পদে লাগছে বিদেশি মশলার ছোঁয়া। আদ্যোপান্ত বিদেশি পদেও যোগ হচ্ছে দেশি ট্যুইস্ট। নতুন মেলবন্ধনের গল্প লেখা হচ্ছে রন্ধনশিল্পীদের আধুনিক হেঁশেলে।
বাঙালিকে ভিন্দেশি খানার মহিমা বোঝাতে ব্যস্ত পার্কস্ট্রিটের পানশালা ‘দ্য ফ্ল্যামবয়েন্ট’। রন্ধনশিল্পী সুশি থেকে মেক্সিকান রোলে ঈষৎ ছোঁয়াচ রাখছেন ভারতীয়ত্বের। বদলাচ্ছে নাম। বদলাচ্ছে ভাবনা। তৈরি হচ্ছে ‘সিগনেচার ডিশ’। রং বদলাচ্ছে মোমো থেকে ডিমসামের। জাপানি ‘কুরো’-র আদলে তার সাদা ধবধবে রং হচ্ছে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ। ভিতরে মুরগির মাংস, বিদেশি চিজ়ে ভরা সেই নরম তুলতুলে ডাম্পলিং দিব্যি চেটেপুটে খাচ্ছেন বাংলার ভোজনবিলাসীরা।
দিনকাল পাল্টেছে। মেক্সিকান রোল, সুশি মোটেই বাঙালির কাছে আর হিব্রু, ল্যাটিনের মতো কঠিন নয়। বরং তেল চুঁইয়ে পড়া চাউমিন, মোগলাই ছেড়ে অনেকেই সুন্দর পরিবেশে বসে দিব্যি উপভোগ করছেন চিজ় ভর্তি থিন ক্রাস্ট পিৎজ়া থেকে মাছের ডিম, কাঁকড়ার মাংস সহযোগে তৈরি ক্যালিফোর্নিয়ান রোল।
শুধু দেশি-বিদেশি স্বাদ নয়, তাতে টুইস্টও আনছেন রন্ধনশিল্পীরা। পার্ক স্ট্রিট চত্বরে মাত্র ২ মাস হল তৈরি হয়েছে ‘দ্য ফ্ল্যামবয়েন্ট।’ কলকাতার ‘সদ্যোজাত’ আধুনিক পানশালাটিতে রকমারি পানীয়ের সম্ভার রয়েছেই। তবে নতুনত্ব আনতে, কলকাতাবাসীর রসনাতৃপ্তিতে ভিন্দেশি খাবারের স্বাদ বজায় রাখার পাশাপাশি কোনও কোনও বিদেশি পদকে ভারতীয় স্বাদকোরকের সঙ্গে মিলিয়ে দিতেই অদলবদল করা হচ্ছে মশলা কিংবা পুরে। যেমন সিগারে বুরহাই আ লা কলকাতা। আদতে, মেক্সিকান রোল। কিন্তু স্বাদ বদলাতে সব্জি নয়, পুরে থাকছে ঠাসা চিজ়। তালিকায় নাম রয়েছে আরও। কোরিয়ান বিবিমবাপ। নুড্লস এবং সব্জি সহযোগে তৈরি এই পদটি মশলা, উপকরণের সামান্য বদলে হয়ে উঠেছে এশিয়ান ব্রথ নুড্লস। ঠিক তেমন ভাবেই প্রণ টেম্পুরা উরামাকি এখানে কিছুটা ‘চটপটা’ স্বাদের। রন্ধনশিল্পী অনিমেষ সরকার বলছেন, ‘‘মূল স্বাদ থেকে পুরোপুরি বদল নয়। কার্যক্ষেত্রে একটু-আধটু মশলা বা রন্ধনশৈলীতে বদল আনা হয়, আরও বেশি সুস্বাদু করে তোলার জন্য।’’ শুধু বিদেশি নয়, দেশি খাবারেও ভিন্ন স্বাদ আনতে ভেটকির চপ এখানে মশলা সহযোগে হয়ে উঠেছে ককটেল চপ। পরোটা আর মাংস একযোগে মিশে তৈরি হয়েছে কুট্টো পরোটা। যেখানে পেটাই পরোটার সঙ্গে মিলবে মশলা মাখা কিমার স্বাদ।
রসনা তৃপ্তিতে শুধু বাহারি নাম নয়, খাদ্যদ্রব্য সেজেছে বাহারি রঙেও। যেমন, ব্ল্যাক চিকেন ডিমসাম কিংবা ব্রকোলি অ্যান্ড ওয়াটার চেস্টনাট ডিমসাম— একটির রং কালো, অন্যটি গাঢ় সবুজ।
তবে শুধু খাবারে নয় সুরারসিকদের মন জয়ে ককটেল-মকটেল নিয়েও চলছে বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা। ফ্ল্যামবয়েন্টের পানশালায় রাশিয়ান ফিজ়ি মেলন, ফ্ল্যাম বয়, চটপটা ম্যাঙ্গো, গন্ধরাজ লেমন মোহিতো, থাই জিঞ্জার লেমোনেডে গলা ভেজাতে আসছেন বিভিন্ন বয়সিরা। বার ম্যানেজার শেখর জানা বললেন, ‘‘গন্ধরাজের গন্ধে ভরা মোহিতো বেশ পছন্দ করছেন কলকাতার বাসিন্দারা। থাই জিঞ্জার লেমোনেড-ও বেশ জনপ্রিয়। বিদেশি মশলা সহযোগে তৈরি এটি।’’
আর ককটেল? সুরাপ্রেমীদের জন্যই শ্যাম্পেন দিয়ে ককটেল মিমোসা রাখছেন তাঁরা। চিরপিরচিত ককটেলে নতুন স্বাদ-গন্ধ জুড়তে কখনও জুঁই ফুলের নির্যাস থেকে বিদেশি ফল, সিঙ্কোনা গাছের ছাল-সহ বহু উপাদানই ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন এখানকার ককটেল ব্লু টি ক্রিমসনে বিশেষ উপায়ে যোগ করা হচ্ছে ল্যাভেন্ডারের নির্যাস। উপকরণের সঠিক মিলমিশ নয়, তা পরিবেশনেও আদ্যন্ত বদল এসেছে। শুধু রকমারি কাচের পাত্র নয়, তরলে রঙের ব্যবহার, প্রজাপতির ধাঁচে সজ্জা দেখলে পরিবেশন যে আদতে শিল্প, তা মনে হতে বাধ্য।
শিল্পই বটে! কথা বলে জানা গেল, ককটেলের উপকরণ জোগাড় করতে কখনও বায়ুনিরোধী প্যাকেটে অ্যালকোহলের সঙ্গে জুইঁফুল নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট সময় ধরে গরম করে, পর ক্ষণেই তা হিমশীতল জলে ডুবিয়ে দিতে হয়। কখনও ফল, ভেষজ থেকে তৈরি হয় নানা রকম সিরাপ। সে সব করতে বিভিন্ন পদ্ধতি, যন্ত্রও ব্যবহার হয়। সমস্ত উপকরণের সঠিক মিলমিশে তৈরি হয় সেই পানীয়।
ককটেল থেকে মকটেল শুধু নয়, শেষপাতে মিষ্টিমুখের জন্য দেশ-বিদেশের ‘ডেসার্ট’ও চাখার সুযোগ থাকছে। পার্ক স্ট্রিটের এই পানশালার মেনুতে ক্রিম এবং বিস্কুটির মিশ্রণে তৈরি হয়েছে সেরাদুরা, নলেন গুড়ের ছোঁয়া দিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে ভিয়েতনামিজ় কোকোনাট ক্রিম ক্যারামেল। হরেক খানার সঙ্গে সুর-তাল-ছন্দের পরিবেশও তৈরি। লাউঞ্জে থাকছে সুরের তালে পা মেলানোর ব্যবস্থাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy