Advertisement
E-Paper

বীজ থেকে চারা বেরোতেই অঙ্কুরিত ওঁদের আনন্দ

দিনভর এক পাশে চুপচাপ বসে থাকতেন কেউ। কারও বা অস্থিরতা কমত না কোনও ওষুধেই। সহ-আবাসিকদের মারধর করার প্রবণতাও ছিল কারও কারও। প্রচলিত চিকিৎসায় সাড়া মিলছিল না অনেকের ক্ষেত্রেই।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১০
সবে মিলে: নিজেদের হাতে গড়া বাগানের ফসল নিয়ে পাভলভ মানসিক হাসপাতালের রোগীরা। নিজস্ব চিত্র

সবে মিলে: নিজেদের হাতে গড়া বাগানের ফসল নিয়ে পাভলভ মানসিক হাসপাতালের রোগীরা। নিজস্ব চিত্র

ম্যাজিকের মতোই যেন ফল মিলল!

দিনভর এক পাশে চুপচাপ বসে থাকতেন কেউ। কারও বা অস্থিরতা কমত না কোনও ওষুধেই। সহ-আবাসিকদের মারধর করার প্রবণতাও ছিল কারও কারও। প্রচলিত চিকিৎসায় সাড়া মিলছিল না অনেকের ক্ষেত্রেই। তা হলে উপায় কী? চিকিৎসকদের একাংশ ভাবনা-চিন্তা করে স্থির করলেন, কোনও সৃজনশীল কাজের সঙ্গে এঁদের যুক্ত করতে হবে। কী ধরনের হবে সেই কাজ? নাচ-গান, আঁকা, সেলাই? অনেক ভেবে ঠিক হয়, বাগান করানো হবে ওই রোগীদের দিয়ে।

সেই অনুযায়ী ওয়ার্ডের বাইরে, হাসপাতাল চত্বরের খালি জমিতে শুরু হয় বাগান করার কাজ। ফুল আর আনাজ। গোড়ায় বেশির ভাগেরই কোনও আগ্রহ ছিল না। তাই বীজ বোনার কাজটা শুরু হয়েছিল নেহাৎ অবহেলাতেই। কিন্তু বীজ থেকে যে মুহূর্তে উঁকি দিতে শুরু
করল চারাগাছ, তখনই ছবিটা বদলে গেল। নিজের সন্তানের বেড়ে ওঠার মতো করে চারাগুলির বেড়ে ওঠা দেখতে দেখতে বদলাতে শুরু করল ওঁদের মানসিকতাও।

কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতাল, বহরমপুর মানসিক হাসপাতাল এবং পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালে শুরু হয়েছে এই প্রকল্প। কী ভাবে এই ভাবনাকে অন্যত্রও কাজে লাগানো যায়, চলছে সেই ভাবনাও। রং-বেরঙের ফুল এবং আনাজে ভরে উঠছে বাগান। স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, এই বাগানগুলিকে বলা হচ্ছে ‘পুষ্টি বাগান’। রোগীদের প্রত্যেক দিনের খাবারে যাতে তাজা শাক-সব্জি থাকে, সেটা নিশ্চিত করাটাও এই প্রকল্পের আর এক লক্ষ্য। বীজ লাগানো থেকে শুরু করে গাছের পরিচর্যা, সবটাই হাতে-কলমে শিখিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা।

এই বাগান করার মাধ্যমেই রোগীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। গাছের পরিচর্যাকে কেন্দ্র করে এই যে মিলেমিশে থাকার অনুভূতি, পরস্পরের সঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার উপলব্ধি, এটাই আসল বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘একটা গাছ তো এক জনের একার নয়। তাকে বড় করে তোলার পিছনে অনেকের অবদান থাকে। এখানেও তেমন হয়তো কাজ করছেন কয়েক জন, কিন্তু সেই কাজের ফসল অর্থাৎ ফুল ও আনাজ ভাগ করে নিচ্ছেন বাকিরা। কিন্তু মিলেমিশে থাকাটাই আসল। এমন কয়েক
জন আবাসিক যাঁরা নিজেদের মধ্যে প্রায়ই মারপিট করতেন, তাঁরা এখন সব ভুলে মেতে থাকছেন এই সৃষ্টিসুখের উল্লাসে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পরবর্তী সময়ে এ থেকে আয়ের কথাও ভাবা হবে। উপার্জিত অর্থের অংশ খরচ করা হবে রোগীদেরই উন্নয়নে।’’

মানসিক হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আগাগোড়া বিষয়টি পরিচালনা করেছে। তাদের তরফে রত্নাবলী রায় জানান, সামগ্রিক ভাবে হাসপাতাল প্রশাসনের কাছ থেকেও তাঁরা খুবই সাড়া পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আগেও এক বার বাগান করার কথা হয়েছিল। কিন্তু সেটা নাকচ করে দেওয়া হয় নানা তুচ্ছ কারণে। যেমন, কাঁচালঙ্কার গাছ লাগালে রোগীরা কাঁচালঙ্কা চিবিয়ে খেয়ে মারা যেতে পারেন! এই সব ধারণার বদল তো হয়েছেই, পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব রকম ভাবে সাহায্যও করছেন।’’

কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল মনোরম ছবি। লাউয়ের মাচায় ফুল ধরেছে। এক রোগী আর এক জনকে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘‘লাউ হলে কী করবি?’’
তাঁর উত্তর, ‘‘মুগ ডাল দিয়ে খাব। অনেক আগে আমার মা রান্না করত।’’ মুহূর্তে নানা স্মৃতি যেন ভিড় করে আসে তাঁর চোখে।

Mental Hospitals Gardening Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy