Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Kawasaki Disease

কোভিডের সঙ্গে লড়াই কি বাচ্চাদের মধ্যে নতুন কোনও রোগ ডেকে আনছে?

প্রবল জ্বর আর শরীর জুড়ে লালচে র‍্যাশ, এই ধরনের উপসর্গ দেখলে সেটা মাল্টিপল সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন বা কাওয়াসাকি ডিজিজ হতে পারে।’

বাড়ির শিশুটির জ্বর হলে খায়াল রাখুন।

বাড়ির শিশুটির জ্বর হলে খায়াল রাখুন। ফাইল চিত্র

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২১ ২০:৪১
Share: Save:

অতিমারিতে বাচ্চা থেকে বড়, বেশির ভাগ মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সাধারণ জ্বর সর্দি কমে গিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক বাচ্চাদের জ্বর এবং সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন অংশে র‍্যাশ দেখা যাচ্ছে। হাম বা চিকেন পক্সের সঙ্গে এই উপসর্গগুলির কিছুটা মিল থাকায় বেশির ভাগ বাড়ির লোক এ নিয়ে সে রকম উদ্বিগ্ন হন না। কিন্তু কোভিড আবহে বাচ্চাদের জ্বর হলে ব্যাপারটা মোটেই অগ্রাহ্য করা উচিত নয়। কারণ সেটা হতে পারে নতুন কোনও রোগের লক্ষণও। নাম কাওয়াসাকি রোগ।

ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের শিশু চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল মনে করেন, এ ধরনের উপসর্গ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের পরমর্শ নেওয়া প্রয়োজন। ‘‘প্রবল জ্বর আর শরীর জুড়ে লালচে র‍্যাশ, এই ধরণের উপসর্গ দেখলে সেটা মাল্টিপল সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন বা কাওয়াসাকি ডিজিজ হতে পারে’’, বললেন তিনি।

গত বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ করোনা সংক্রমণ চুড়োয় পৌঁছেছিল। তার মাস দুয়েক পর থেকে বাচ্চাদের মধ্যে কাওয়াসাকি রোগ এবং এমআইএস- সির ঝুঁকি প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। নানা সমীক্ষার পর চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্তে পৌঁছন, যে কোভিডের সঙ্গে সরাসরি কাওয়াসাকি ও কাওয়াসাকির মত উপসর্গ যুক্ত অসুখের (অর্থাৎ এমআইএস- সি) সম্পর্ক রয়েছে। এই প্রসঙ্গে শিশু চিকিৎসক প্রভাস প্রসূন গিরি বললেন, ‘‘মূলত ঋতু পরিবর্তনের সময় কাওয়াসাকি ডিজিজের প্রবণতা বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু কোভিড-১৯’এর সঙ্গে কাওয়াসাকি এবং এমআইএস- সি’র একটি সম্পর্ক থাকায় এ বছরে বাচ্চাদের মধ্যে রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। কেননা করোনার বিরুদ্ধে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তারাই কাওয়াসাকি ও এমআইএস- সি অসুখ ডেকে আনে। তাই কোভিড এড়িয়ে চলতে মাস্ক পরা ও ভিড় এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি।’’

তোমিসাকু কাওয়াসাকি নামে জাপানের এক চিকিৎসক প্রথম এই অসুখটির সম্পর্কে জানতে পারেন। কাওয়াসাকি রোগ বা এমআইএসসি অসুখের শুরুতে ১০২ ডিগ্রি বা তারও বেশি জ্বর হয়। সঙ্গে র‍্যাশ থাকতে পারে। এই সময় ঘাড়ের গ্ল্যান্ড, হাতের তালু ও পায়ের পাতা লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। প্রাথমিকভাব রক্ত পরীক্ষা করে অসুখটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। প্রিয়ঙ্কর পাল জানালেন, পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যেই এই রোগটি বেশি হয়। তবে একটু বড় বাচ্চাদের মধ্যে (৮ – ১৫ বছরে) এমআইএস- সি বেশি দেখা যায়। এমআইএস- সি অসুখটা কাওয়াসাকির থেকে বেশি মারাত্মক। কাওয়াসাকি রোগে হার্টের ধমনিতে প্রদাহ হয়ে ফুলে উঠে ব্লকেজ হতে পারে। অন্য দিকে এমআইএস- সি অসুখে হার্ট, কিডনি, ফুসফুস সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়। হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এই অসুখে বাচ্চাদের হার্টের পেশিগুলি আক্রান্ত হয়ে মায়োকার্ডাইটিস হতে পারে। এই অসুখে দ্রুত চিকিৎসা না করালে হার্ট ফেলিওর হয়ে বাচ্চার অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে যেতে পারে।

কোভিড সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি বাচ্চাদের জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Children Fever COVID-19 Kawasaki Disease
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE