মাতৃদুগ্ধের যে কোনও বিকল্প নেই, তা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে অনেক মা-ই বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না। কাজে বেরোতে হলে কিংবা অনেকটা সময়ে শিশুর কাছে উপস্থিত থাকতে না পারলে তখন শরণাপন্ন হতে হয় এক্সপ্রেস ফিডিংয়ের। অর্থাৎ বুকের দুধ বার করে তা বাচ্চাকে খাওয়ানো। এতে ফরমুলা মিল্কের উপরেও নির্ভরশীল হতে হয় না, শিশু ব্রেস্টমিল্কের গুণাগুণও পুরোমাত্রায় পায়। তবে এই এক্সপ্রেসড মিল্ক খাওয়ানোর বা রেখে দেওয়ার কিছু নিয়ম আছে, যা মেনে চলতে হয়।
কেন মায়ের দুধের বিকল্প নেই?
জন্মের পরে অন্তত প্রথম ছ’মাস শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে— এই বিষয়টিতেই সবচেয়ে বেশি জোর দেন চিকিৎসকেরা। এ প্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘সরাসরি না খাওয়াতে পারলে এক্সপ্রেস করে হলেও বুকের দুধ খাওয়ানোটা গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের ও সন্তানের মধ্যকার বন্ডিং তৈরির জন্য তো বটেই, তা ছাড়া শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মায়ের দুধের চেয়ে বড় ভূমিকা আর কিছুর নেই। যে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ খেয়ে বড় হয় তাদের হজমের সমস্যা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা কম হয় সাধারণত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতেও এটি সাহায্য করে।’’
কখন পাম্প করার দরকার পড়ে?
কর্মরতা মায়েদের অনেক সময়েই এই বিকল্প বেছে নিতে হয়। এ ছাড়া কোনও কারণে মাকে বাচ্চার কাছ থেকে অনেকটা সময়ে আলাদা থাকতে হলেও ব্রেস্টমিল্ক পাম্প করে বার করে বাড়িতে রেখে যাওয়ার দরকার পড়ে। এ ছাড়া ফ্ল্যাট নিপল হলে কিংবা নিপলের আকার ছোট বা বড় হলে অনেক সময়ে বাচ্চারা টানতে পারে না।
ছবি: সংগৃহীত।
পদ্ধতি
- হাতের সাহায্যে: মায়েরা নিজেরাই হাতের সাহায্যে পাম্প করে বুকের দুধ বার করে বোতলে ভরতে পারেন। নিপলের অংশটি প্রথমে পিছন দিকে ঠেলে অ্যারিওলার উপরে চাপ দিলেই দুধ বেরিয়ে আসে। এর জন্য আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে, আর স্তনবৃন্ত ও সংলগ্ন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এক্সপ্রেস করতে শুরু করার আগে বেশি করে জল খেতে হবে। আর মানসিক উদ্বেগের মধ্যে না থাকলে দুধের ক্ষরণও বেশি হয়।
- পাম্পের সাহায্যে: যে কোনও ওষুধের দোকানেই হ্যান্ড পাম্প কিনতে পাওয়া যায়। পাম্পের সাহায্যে দুধ বার করে বোতলে ভরে রাখা যায়। ইলেকট্রিক পাম্পও পাওয়া যায়, তবে তা থেকে নিপল ইনজুরি হতে পারে, যদি প্রেশার খুব বেশি হয়। ‘‘আবার বেশি সাকশন হলেও পরের বার প্রোডাকশনে অসুবিধে হতে পারে। তাই পাম্পের ব্যবহার বুঝেশুনে করা উচিত,’’ বললেন ডা. রায়চৌধুরী।
সংরক্ষণ
এক্সপ্রেস করা দুধ বোতলে সাধারণত ঘরের তাপমাত্রায় চার-ছ’ঘণ্টা রেখে খাওয়ানো যেতে পারে। শীতকালে দুধ ঠান্ডা হয়ে গেলে গরম জলের বাটিতে বোতলটি বসিয়ে দুধ গরম করে খাওয়ানো যেতে পারে।
ফ্রিজে রাখলে তিন মাস পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। তবে ফ্রিজ থেকে বার করার পরে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তা খাইয়ে দিতে হবে।
খাওয়াবেন কী ভাবে?
‘‘ছোট বাটি আর চামচ ভাল করে ফুটিয়ে তাতে দুধ ঢেলে খাওয়াবেন। বাটি-চামচ অন্তত ২০ মিনিট গরম জলে ফোটাতে হবে। বাটি-চামচের একাধিক সেট কিনে রাখবেন। বোতলেরও তাই। তবে বোতল থেকে সরাসরি না খাওয়ানোই ভাল। বোতল থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেশি,’’ বললেন ডা. রায়চৌধুরী।
অসুবিধে
‘‘বাচ্চারা বোতল থেকে সহজেই টেনে খেতে পারে, ব্রেস্টমিল্ক সরাসরি টানতে গেলে পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু তাতেই দুধের ক্ষরণও ভাল হয়,’’ বললেন ডা. রায়চৌধুরী। পাম্প ফিডিংয়ে এই ‘লেট ডাউন রিফ্লেক্স’ তত ভাল হয় না। তা ছাড়া মায়ের কাছ থেকে সরাসরি বুকের দুধ খাওয়া শিশুর বেড়ে ওঠায় সহায়ক। এ ছাড়া দুধ এক্সপ্রেস করে খাওয়ালে তা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনাও বাড়ে।
ব্যস্ত মায়েদের কাছে পাম্প ফিডিংয়ের বিকল্প নেই। সন্তানের বেড়ে ওঠার সঙ্গে আপস না করতে অনেকেই তাই বেছে নেন এই বিকল্প পদ্ধতি, যা আখেরে শিশুর বিকাশেরই সহায়ক।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)