দিনে এক-দু’বার যত্ন পেলেও বাকি সময়ে বঞ্চিত হয়েই থাকে ৩২ পাটি দাঁত। সেই দাঁতই কিন্তু দেহের অলঙ্কার। হাসিতেই যদি মন জয় করতে চান, তা হলে অবশ্যই নজর দিতে হবে দাঁতের দিকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে হলদেটে ভাব চলে আসে, কখনও বা কালো ছোপ। যত্ন নিতে হলে প্রথমেই জানতে হবে, কেন সাদা দাঁত ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যায়। নেপথ্য কারণ এবং এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে কথা বললেন কলকাতার দন্ত্যচিকিৎসক ময়ূখ রায়।
চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের দাঁতের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ হল এনামেল। যা দাঁতের একদম উপরের স্তর। সেটি ক্ষয়ে যেতে থাকলে নীচের স্তরগুলি উন্মুক্ত হয়ে যায়। এনামেলের তুলনায় সেই স্তরগুলির রং খানিক হলদেটে। ফলে প্রথমেই রক্ষা করতে হবে এনামেলকে। এমনিতে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দাঁতে হলুদ ছাপ পড়ে যায়। এনামেল নষ্ট হতে থাকে। তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা খুব অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কম বয়সেও দাঁতে দাগ পড়ে যাওয়ার নানাবিধ কারণ রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেড়ে গিয়েছে এই সমস্যা।’’

চিকিৎসকের পরামর্শ, বছরে এক বার করে স্কেলিং করে নেওয়া। ছবি: সংগৃহীত।
দাঁতের উপরের স্তর ক্ষয়ে যায় কেন?
মানুষের জীবনযাত্রা, খাওয়াদাওয়া, দৈনন্দিন ব্যবহারে এনামেলের পরত পাতলা হতে থাকে। এই ঘটনা প্রায়শই বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু কম বয়সেও এই সমস্যা কেন হয়, সেটিই জানতে হবে।
১. চিকিৎসকের মতে, এর প্রধান কারণ, আমাদের খাওয়াদাওয়া। যিনি তেল-মশলাজাতীয় খাবার বেশি খান, তাঁর দাঁতে খুব তাড়াতাড়ি হলুদ ছোপ পড়ে যায়। লাল চা বা কালো কফির অত্যধিক সেবনের ফলেও এই ঘটনা ঘটতে পারে।
২. যাঁদের শরীরে আয়রনের পরিমাণ কম, তাঁরা যদি আয়রনের সাপ্লিমেন্ট বেশি খেতে থাকেন, তাতেও দাঁতের সাদা রং দূর হয়ে যায়।
৩. আজকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাউথওয়াশ বিক্রি হয়। সেগুলি দিয়ে বহু দিন ধরে রোজ কুলকুচি করতে থাকলে দাঁতে হলদে ভাব দেখা দেয়।
৪. এ ছাড়া ধূমপান, পানমশলা, পানের মতো নেশার দ্রব্য ব্যবহারে দাঁতে কালো কালো ছোপ পড়ে যায়।
৫. কিছু বিরল কারণ রয়েছে দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার পিছনে। যাঁদের থুতু গাঢ় বা ঘন হয়, তাঁদের দাঁত তুলনায় দ্রুত রং বদলাতে পারে। দাগ বেশি পড়ে তাঁদের দাঁতে।
৬. যাঁরা গ্যাস-অম্বলে বেশি ভোগেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা দেয়।
৭. এ ছাড়া অতি সাধারণ কারণও রয়েছে। ঠিক মতো দাঁত না মাজলে হলদেটে হয়ে যায় দাঁত।
হলুদ বা কালো ছোপ দূর করার উপায় কী?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, সবার প্রথমে যে যে কারণে দাঁতের রং বদলাচ্ছে, সেই কারণগুলির থেকে মুক্তি পেতে হবে। কারও ক্ষেত্রে অভ্যাস বদলানো, কারও আবার স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। তবে স্কেলিং বা দাঁত পরিষ্কার করানো খুবই জনপ্রিয় একটি উপায়। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বছরে এক বার করে স্কেলিং করানোর পরামর্শ দিই আমরা। যাঁদের বার বার রং বদলাতে থাকে, তাঁদের জন্য এই উপায় খুবই কার্যকরী। তবে যদি দেখা যায়, স্কেলিংয়ের এক বছর পর অতটাও হলুদ ছোপ পড়েনি, তবে তাঁর ক্ষেত্রে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করা যেতে পারে। তবে বছরে এক বার করে অন্তত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দেখিয়ে নেওয়া উচিত।’’
পাশাপাশি, প্রাচীন কাল থেকে কয়েকটি টোটকার প্রচলন রয়েছে এই দেশে। নুন, সর্ষের তেল, চারকোল, বেকিং সোডা, টম্যাটোর খোসা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত মাজলে অনেকেই মনে করেন, হলদে ছোপ দূর হয়। এগুলি কি আদৌ কার্যকরী?
চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই ধরনের টোটকার কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। কারও ক্ষেত্রে কাজ হয়, কারও ক্ষেত্রে হয় না। চিকিৎসক হিসেবে এই টোটকাগুলি প্রয়োগ করার উপদেশ দিতে পারি না। কারণ নুন এবং তেল দিয়ে দাঁত ঘষলে কখনও কখনও মাড়ির সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই বলপ্রয়োগ করে দাঁতের ক্ষতি করেন। তবে সতর্ক থাকলে এই টোটকাগুলির কোনও কুপ্রভাব নেই। তবে কার্যকরী না-ও হতে পারে।’’
মূলত জীবনযাপনের অভ্যাসে বদল আনলে তবেই দাঁতের ক্ষতি কম হবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, বছরে এক বার করে স্কেলিং করে নেওয়াই একমাত্র উপায়।