দুর্গাপুজোর অপেক্ষা আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। শিউলির গন্ধ, কাশের দোলা, ঢাকের বোলে দুর্গার আবাহন, নতুন পোশাক, জমাটি আড্ডা, বন্দুক হাতে ক্যাপ ফাটানো।
তবে বদলে গিয়েছে একটা ছবি। আগে যেমন সারা বছর পরার জন্য জামা, শাড়ি কেনা হত শুধুই দুর্গাপুজোয়, এখন আর তেমন হয় না। বরং প্রয়োজন থাকুক না থাকুক, বছরভরই চলে কেনাকাটা। তার ফলে অনেক বাড়িতেই পোশাকের ভারে উপচে পড়ছে আলমারি থেকে ওয়ার্ড্রোব। নতুন পোশাকের আকর্ষণ কখনও কমে না বটে, তবে পুজোয় রীতি মেনে শাড়ি, ধুতি, ছোটদের পোশাক না দিয়ে উপহার দেওয়া যায় অন্য কিছুও। সেই উপহারে থাক ভাবনা, ভালবাসা, অভিনবত্ব।
বিছানার চাদরে শৈল্পিক কারিকুরি
সুতো এবং কাপড়ের মেলবন্ধনে বিছানার চাদরে তৈরি হোক শিল্প। ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজো মানেই উৎসবের আবহ। নতুন বিছানার চাদর, পর্দা, টুকিটাকি জিনিসে এই সময় ঘর সাজানোর রেওয়াজ বহু দিনের। বিছানার চাদরও কিন্তু পুজোর উপহার হতে পারে। তবে এতে থাক শৈল্পিক ছোঁয়া। কাঁথা স্টিচ, সিন্ধি স্টিচ, অ্যাপ্লিকের কাজ করা বিছানা চাদর এবং বালিশের ঢাকনার সেট ঘরের ভোল বদলে দেবে।
গয়না
রকমারি গয়নাও হতে পারে শারদীয় উপহার। ছবি: সংগৃহীত।
শাড়ি হোক বা পোশাক— গয়নার আবেদন চিরকালীন। দুর্গাপুজোর কেনাকাটার তালিকায় শাড়ি বা জামার সঙ্গে যুৎসই গয়না না হলে চলে না। ইদানীং ধাতব গয়নার পাশাপাশি ক্লে জুয়েলারি, কাপড়, গামছা, সুতো-কড়ি, গিনির কাজ করা হাতে বানানো গয়নাও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। পুজোর উপহারে থাকতে পারে এমন কিছু, যা নিজে নকশা করে কাউকে দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন। লকেট থেকে ব্রেসলেট, আংটি— পুরুষদের জন্যও রয়েছে অনেক কিছুই।
দুর্গা
পুজোয় উপহার দিন দুর্গার মূর্তি। ঘর সাজানোর জন্য দারুণ। ছবি: সংগৃহীত।
দুর্গাপুজোয় উপহার হতে পারে দুর্গাও। মূর্তি থেকে দেওয়ালে সজ্জার জন্য রকমারি দুর্গা পাওয়া যায়। কাচের বাক্সে বা কাঠের ফ্রেমবন্দি ‘আর্টের দুর্গা’ অন্দরসজ্জার জন্য ব্যবহার করা যায়। নদিয়ার ঘূর্ণির মাটির পুতুলের কদর দেশজোড়া। সেখানে পোড়ামাটির অনেক ধরনের দুর্গা পাবেন। অনলাইনেও অবশ্য এগুলি মেলে। কুমোরটুলি গেলেও কাচের বাক্সবন্দি সপরিবার দুর্গার মূর্তি পেয়ে যাবেন। ডাকের সাজের দুর্গার মুখও কিন্তু বাক্সে করে বিক্রি হয় ঘর সাজানোর জন্য।
ঘড়িতে রকমারি
‘স্মার্ট ওয়াচ’-ও উপহারের জন্য ভাল। ছবি: সংগৃহীত।
ঘড়িও ফ্যাশনের অঙ্গ। ব্র্যান্ডেড ঘড়ির কদর সব সময়েই। তবে উপহার দেওয়ার জন্য স্মার্টওয়াচও কিন্তু ভাল হতে পারে। ছোট থেকে বড়, পুরুষ, মহিলা— যে কোনও বয়সিদেরই ঘড়ি দেওয়া যায়। অনলাইনে বিভিন্ন দামের ঘড়ি মেলে। সেগুলি কম কেতাদুরস্ত নয়।
প্রয়োজনের জিনিস
দৈনন্দিন কাজের জিনিসও কিন্তু দুর্গাপুজোর উপহার হিসাবে বেছে নিতে পারেন। ছবি:সংগৃহীত।
ইলেকট্রিক কেটলি থেকে এয়ার ফ্রায়ার, ট্রিমার, হেয়ার স্ট্রেটনার, কার্লার, ক্রিম্পার, ছোট্ট পাখা— এমন অনেক বৈদ্যুতিক জিনিসই বিশেষ কাজের। ছেলেদের দেওয়া যায় ট্রিমার। স্ট্রেটনার, ক্রিম্পারও সাজসজ্জার অঙ্গ হয়ে উঠেছে। কেশসজ্জা সহজ হয়ে যায় যন্ত্রগুলি হাতের কাছে থাকলে। পুজোর সময় ঠাকুর দেখতে বেরোলে ভিড়ের চাপে ঘেমেনেয়ে একসা হতে হয়। ব্যাটারিচালিত বা রিচার্জবল ছোট পাখা ব্যাগে ভরে রাখা যায়। গরমে একটু স্বস্তি পেতে ভীষণ কাজের হতে পারে।
খুদের জন্য ভাবনা
ছোটদের জন্য শারদীয় উপহার হোক বই। ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর সঙ্গে বইয়ের গভীর সম্পর্ক। এখনও অনেকেই শারদীয় পত্রিকার জন্য অপেক্ষা করেন বছরভর। যদিও এখনকার খুদেদের বড় অংশ বই-বিমুখ। দোষটা অবশ্য তাদের খুব একটা নয়। বোকাবাক্স ছেড়ে জীবন এখন মোবাইলে বন্দি। তারই প্রভাব পড়ছে ছোটদের জীবনেও। ছোটদের বই পড়ানোর অভ্যাস করানো যায় ছোট থেকেই। এক থেকে দেড় বছরের শিশুদের কাপড়ের বই দেওয়া যায়। এগুলি তাদের কাছে খেলনাই। এতে বিভিন্ন সব্জি, প্রাণী, রং, নম্বর দেওয়া থাকে। একেবারে ছোটদের জিনিসপত্র মুখে দেওয়া ছিঁড়ে ফেলার প্রবণতা থাকে। সেই জন্যই এমন বই। ৩ বছরের শিশুদের জন্য ছবি আঁকা, অল্প কথা লেখা অর্থাৎ ইলাস্ট্রেশন করা গল্পের বই বেছে নিতে পারেন। বয়স আরও একটু বাড়লে রূপকথা, ঈশপের গল্পের বই দেওয়া যায়। বয়স অনুযায়ী বই বাছাই জরুরি।
বয়স্কদের জন্য
পুরনো দিনের গানের সম্ভারও দিতে পারেন সঙ্গীতপ্রেমীদের। ছবি: সংগৃহীত।
বয়স্কদের কী দেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবনা! দিতে পারেন কারভাঁ। অসংখ্য পুরনো গানের ভান্ডার রয়েছে এতে। দেখতে কিছুটা রেডিয়োর মতো। নব ঘুরিয়ে গান বদলানো যায়। পুজোর দিনগুলিতে তাঁদের প্রজন্মের গানগুলি মনে করাবে অনেক স্মৃতি।