Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Vitamins

শিশুদেহে ভিটামিনই মণিমুক্তো

ভিটামিন— শারীরিক সুস্থতা বজার রাখতে এই উপাদানের কোনও বিকল্প নেই। পুষ্টিবিদরা বলছেন, শরীর সুস্থ রাখতে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিনের গুরুত্ব অপরিসীম।

শ্রেয়া ঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২২ ০৯:০৭
Share: Save:

কাকে বলে ভিটামিন?

বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ হল জৈব উপাদান যা স্বাভাবিক খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণ থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন মূলত দু’প্রকার, ফ্যাটে দ্রাব্য ভিটামিন ও জলে দ্রাব্য ভিটামিন। এ, ডি, ই, কে হল ফ্যাটে দ্রাব্য। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও সি হল জলে দ্রবণীয়।

ভিটামিনের উৎস-

গাজর, টম্যাটো, সবুজ আনাজপাতি, শাক, পাকা আম, পাকা পেঁপে, বাঁধাকপি ইত্যাদি। কড, হাঙর, হ্যালিবাট ইত্যাদি মাছের যকৃৎ থেকে নিষ্কাশিত তেল এবং দুধ, মাখন, ডিমের কুসুম ইত্যাদিতে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ঢেঁকিছাঁটা চাল, গম, চাল ও গমের কুঁড়ো, ভুট্টা, অঙ্কুরিত বীজ, সবুজ শাকসবজি, পাকা কলা, আনারস, পেয়ারা , মাছ, মাংস, দুধ এগুলি ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের উৎস। তবে পলিশড চালে ভিটামিন বি প্রায় থাকেই না। যে কোনও রকম লেবু জাতীয় ফল ভিটামিন সি-এর উৎকৃষ্ট উৎস। বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল, বাঁধাকপি এবং প্রাণিজ খাদ্য ভিটামিন ডি জোগান দেয়। অঙ্কুরিত গম থেকে নিষ্কাশিত তেল, লেটুস শাক, মটরশুঁটি, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস ভিটামিন ‌ই-এর উৎস। টাটকা শাকসবজি, পালংশাক, টম্যাটো, বাঁধাকপি, সয়াবিন, দুধ, মাখন, লিভার হল ভিটামিন কে-এর অন্যতম উৎস।

কোন ভিটামিনের অভাবে কী সমস্যা?

  • ভিটামিন এ: মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. দিব্যেন্দু রায়চৌধুরী জানালেন, ভিটামিন এ-র অভাবে মূলত চোখের সমস্যার সূচনা হয়। আলো ও অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে যথাক্রমে রড ও কোন কোষ। ভিটামিন এ-র অভাবে কোন কোষের ক্ষতি হয়, ফলে নিক্টালোপিয়া বা রাতকানা রোগটি দেখা যায়। এ ছাড়া, কর্নিয়ায় সাদা রঙের অস্বচ্ছ বিটট স্পট দেখা যায়। যথোপযুক্ত চিকিৎসা না হলে কর্নিয়ার আলসারও হতে পারে। ফলে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া দেখা যায় কনজাংটাইভাল জ়েরোসিস, এর ফলে চোখের কনজাংটাইভায় নানা সমস্যা দেখা যায়। পাশাপাশি, জেরোপথালমিয়াও দেখা যায়।
  • ভিটামিন ডি: শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় সকলের মধ্যেই ভিটামিন ডি-র অভাব দেখা যেতে পারে। সদ্যোজাতদের জন্মের পর থেকে ‌এক বছর পর্যন্ত আলাদা ভাবে ভিটামিন ডি খাওয়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। এই ভিটামিনের অভাবে মূলত রিকেট অর্থাৎ পায়ের হাড় সরু হয়ে বেঁকে যায়। এ ছাড়া শিশুর ব্রহ্মতালুর অংশ বা অ্যান্টিরিয়র ফ্রন্টাল লোব দুর্বল হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি, যেহেতু এই ভিটামিনটি আমাদের হাড়ে সঞ্চিত হয় তাই এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়। চেস্ট ডিফর্মিটি বা রিকেটির রোজ়ারিও দেখা যায় এই ভিটামিনের অভাবে। ডা. রায়চৌধুরী জানালেন, এই ভিটামিনের অভাবে শিশুদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানসিক ভাবে। শিশুদের কগনিটিভ বিহেভিয়র সাঙ্ঘাতিক ব্যাহত হয়।n ভিটামিন ই: যেহেতু প্রায় সব খাবারেই ভিটামিন ই পাওয়া যায় তাই চট করে ‌এটির অভাব মানবদেহে ঘটে না। শিশুদের ক্ষেত্রে কখনও কখনও জন্ডিস, হাইপারবিলিরুবিনিমিয়া ও হেমারেজিক অসুখগুলি হতে পারে।n ভিটামিন কে: এই ভিটামিনটি মূলত আমাদের অন্ত্রে সংশ্লেষিত হয়। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার ফলে সেই সংশ্লেষ-প্রক্রিয়া যদি ব্যাহত হয় তা হলেই শিশুদেহে হেমারেজিক ব্লিডিং অব নিউরন দেখা যায়। ফলে অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে ইন্ট্রা-ভেন্ট্রিকুলার অংশগুলি থেকে রক্তক্ষরণ হয়।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স

  • থায়ামিন: এর অভাবে হয় বেরিবেরি। এর ফলে ত্বক ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হয়। পাশাপাশি, পা ফুলে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। খাবারের পুষ্টি উপাদান শরীরে সংশ্লেষিত হওয়া প্রতিহত হয়। এ ছাড়া স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়। শরীরে কোনও কোনও অংশে অনেক সময়েই কোনও সাড় থাকে না। বেরিবেরির ঠিক চিকিৎসা না হলে কনজেস্টিভ কার্ডিয়াক ফেলিয়োর হতে পারে।
  • রাইবোফ্ল্যাভিন: জিভের ঘা বা গ্লসাইটিস, ঠোঁটের কোনার ঘা বা চেলিয়োসিস। কর্নিয়া অস্বচ্ছ ও মোটা হয়ে গিয়ে কেরাটাইসিস হয়। অনেক সময়ে শিশুদের ত্বকে ডার্মাটাইটিস দেখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের মাথায় ক্রেডল ক্যাপ দেখা যায়।
  • পাইরক্সিন: শিশুর প্রবল পরিমাণে অপুষ্টি দেখা যাবে। শিশু বমি করবে, তড়কা বা কনভালশন হবে। এ ছাড়া মাইক্রোসাইটিক অ্যানিমিয়া হতে পারে।
  • কোবালামিন: মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া ও হাইপোটোনিয়া হয় এই ভিটামিনের অভাবে।
  • নিয়াসিন: হাত ও পায়ের পাতায় গ্লাভস বা স্টকিংসের মতো ত্বকের অসুখ পেলেগ্রা হয়। অনেক সময়ে তা গলাতেও হয়, তাকে তখন কাসলস নেকলেস বলা হয়।
  • ভিটামিন সি: এর অভাবে যে অসুখটি হয় তার নাম স্কার্ভি। দাঁতের গোড়া ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। এ ছাড়া হাড়ের সংযোগস্থল থেকে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় ও হাড়ের গঠন নষ্ট হয়। ডা. রায়চৌধুরী জানালেন, অনেক সময়ে শুধু ওষুধ ও সাপ্লিমেন্টে, ভিটামিনের অভাবজনিত অসুখ সারানো না গেলে ইঞ্জেকশন দিতে হয়। বিশেষ করে, রিকেট, ভিটামিন এ-র অভাবজনিত রোগে ইঞ্জেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

আসলে, ভিটামিনের অপর নামই তো খাদ্যপ্রাণ। দেহে প্রাণশক্তি বজায় রাখতে তাই এগুলির এত প্রয়োজন। শুধু ভিটামিন নয়, সমস্ত পুষ্টির উপাদানই প্রয়োজন মানবশরীরকে সুস্থ রাখতে। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ফাইবার পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো থেকে হাড়ের যত্ন নেওয়া, হরমোনের ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা থেকে সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখা— পুষ্টিকর উপাদানের বিকল্প নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vitamins Child Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE