পায়ের শিরা ফুলে চামড়ার উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। কখনও আবার মনে হচ্ছে, শিরাগুলো যেন জড়িয়ে যাচ্ছে পরস্পরের সঙ্গে। ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে ত্বকের সেই অংশের রংও। এই রকম লক্ষণ দেখা গেলেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সহজ কথায় একে বলে ভ্যারিকোস ভেনস। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম, ক্রনিক ভিনাস ইনসাফিশিয়েন্সি। সময় থাকতে চিকিৎসা না করালে যা আলসারের দিকে গড়াতে পারে।
সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতের একটি ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের হাতের তালুর উপরের অংশের শিরা ফুলে জড়িয়ে গিয়েছে, রংও পাল্টে গিয়েছে সেই অংশের। পরে জানা যায়, ক্রনিক ভিনাস ইনসাফিশিয়েন্সির উপসর্গে ভুগছেন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের হাতে দেখা গেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পায়েই এই উপসর্গ দেখা যায়।
কী এই অসুখ?
শিরায় রক্তপ্রবাহ যখন ঠিক মতো হয় না, তখনই দেখা দেয় এই উপসর্গ। শিরাগুলি মাকড়সার জালের মতো পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে যায় বলে একে চলতি কথায় স্পাইডার ভেনসও বলে। ইন্টারভেনশন রেডিয়োলজিস্ট ডা. মৌসম দে বললেন, “পায়ের শিরার মধ্য দিয়ে যে দূষিত রক্ত হার্টে ফেরার কথা, তা না ফিরে যদি উল্টো পথে প্রবাহিত হয় ও পায়েই জমতে আরম্ভ করে, তখনই এই উপসর্গ দেখা দেয়। ভালভগুলি খারাপ হয়ে গেলেই এই অসুখ দেখা দেয়। ভ্যারিকোস ভেনস এরই প্রথম ধাপ।”
পরবর্তীতে এই উপসর্গ বাড়তে থাকলে পা ফুলতে শুরু করে। অনেকে অফিস থেকে ফিরে মোজা খুললে দেখেন, পায়ের একটা অংশ চেপে বসে গিয়েছে। এর পরের পর্যায়ে পায়ের ত্বকের রং পাল্টানো শুরু হয়ে যায়। এই ধাপে পৌঁছে গেলে সেই অবস্থাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় লাইপোডার্মাটোস্ক্লেরোসিস। এই পর্যায়ে গেলে চিন্তার কারণ রয়েছে। কারণ, এর পরের ধাপ আলসার বা ঘা। সেটি সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা কঠিন। চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তুললেও পরে সেই আলসার আবার ফিরে আসতে পারে।
কেন হয় এই অসুখ?
যাঁরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করেন, তাঁদেরই এই অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও যে কোনও বয়সেই এই অসুখ হতে পারে। ডা. দে বললেন, “সাধারণত কাজের প্রয়োজনে দিনের অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাঁদের, যেমন ট্রাফিক পুলিশ বা শিক্ষক, তাঁদের পায়ে এই ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় সাধারণত। ভালভগুলি কাজ না করার ফলে মাধ্যাকর্ষণের টানে তা পায়ের নীচের দিকে এসে জমা হয়, হার্টে না গিয়ে। ভ্যারিকোস ভেনসের সমস্যা প্রথম দু’টি স্টেজের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে পরে বিপদ বাড়তে পারে।” তাঁর পরামর্শ পায়ের শিরা জড়িয়ে যাচ্ছে দেখলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
—প্রতীকী চিত্র।
চিকিৎসা ও সাবধানতা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যা পায়ে দেখা যায়। তাই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করার মাঝে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নেওয়া, রাতে ঘুমোনোর সময়ে বালিশের উপরে পা একটু উঁচু করে রেখে শোয়া, অফিসে একটানা চেয়ারে বসে পা ঝুলিয়ে কাজ করলে পায়ের কাছে একটা ছোট টুল রাখার মতো বিকল্পগুলি ভাবা যেতে পারে। যাঁরা টানা বসে কাজ করছেন, তাঁদের মাঝেমধ্যে উঠে একটু হেঁটে আসতে হবে। মেডিক্যাল কমপ্রেশন স্টকিংস এ ক্ষেত্রে কাজে দেয়।
ডা. দে-র কথায়, “ক্রনিক ভিনাস ইনসাফিশিয়েন্সির এখন সবচেয়ে আধুনিক ও কার্যকর চিকিৎসা হল এন্ডোভিনাস লেজ়ার অ্যাব্লেশন। ভেনাসিল বলে এক ধরনের মেডিক্যাল গ্লু পাওয়া যায়, তা দিয়েও এর চিকিৎসা খুব ভাল ভাবে করা সম্ভব। গোড়ালি বা তার উপরের কোনও অংশে একটি সুচ ফুটিয়ে ফাইবার প্রবেশ করানো হয়। তা শিরায় ঢুকে পুরো শিরাটিকে ঠিক করে বেরিয়ে যায়। পুরো চিকিৎসা পদ্ধতিটিই ব্যথাহীন। রোগী সকালে চিকিৎসা করিয়ে বিকেলে অফিস পর্যন্ত করতে পারেন। একটি কমপ্রেশন স্টকিংস পরে রোগী হেঁটেও বাড়ি ফিরতে পারবেন।”
আলসারের পর্যায়ে চলে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, প্রয়োজনে ড্রেসিং করাতে হয়। তবে এই আলসার সারানো হলেও আবার ফিরে আসতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে শিরার গড়ন পাল্টাতে দেখলেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)