বাঙালির আলু-প্রেম!
জ্যোতি, চন্দ্রমুখী, কলম্বিয়া ও হেমাঙ্গিনী। শুনেই টের পাওয়া যায়, আলুর নামকরণে কত আদর ও যত্ন বাঙালির। যতই স্বাস্থ্য-সচেতন মানুষের সংখ্যা বাড়ুক, গৃহস্থের হেঁশেল থেকে আলু পুরোপুরি বাদ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু খাওয়ার সময়ে সব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে নেওয়াও খুব জরুরি। অঙ্কুরিত আলু নিয়ে অনেকের মনেই ধন্দ রয়েছে। প্রশ্ন জাগে, আলুতে গজানো অঙ্কুর আসলে কিসের ইঙ্গিত দেয়? কী কী থাকে তার মধ্যে? রান্নার আগে জেনে নেওয়া দরকার।
উত্তর দিচ্ছেন ‘দ্য এভরিথিং ইজ়ি প্রি-ডায়াবেটিস কুকবুক’ এবং ‘দ্য প্রোটিন-প্যাকড ব্রেকফাস্ট ক্লাব’ গ্রন্থের লেখক লরেন হ্যারিস-পিনকাস এবং তাঁর সঙ্গে সহমত ডায়েটিশিয়ান ক্রিস্টা ব্রাউন।

অঙ্কুরিত আলু বা সবুজ অংশ ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলে খাওয়া যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
লেখকের কথায়, ‘‘আলু অত্যন্ত পুষ্টিকর। ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ। কিন্তু আলুতে দু’ধরনের গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড থাকে, দু’টিই প্রাকৃতিক বিষ, সোলানাইন এবং চ্যাকোনিন। যদিও গোটা আলুতেই এই গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড থাকে, তবুও এর পরিমাণ অঙ্কুরিত স্থানে বেশি। আর আলু যখন সবুজাভ হয়ে আসে, সেটি আসলে ক্লোরোফিল থেকে তৈরি হয়, যা বিষাক্ত নয়। তবে এই রং থেকে বোঝা যায়, অতিরিক্ত গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড জমে রয়েছে সেখানে। আলু অনেক দিন ফেলে রাখলে এই পরিবর্তন আসে। কিন্তু তাজা আলুতে অঙ্কুর দেখা যায় না। এমনকি সবুজ রংও থাকে না। আলুর বয়স বাড়তে থাকলে অথবা সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করলে অঙ্কুরোদ্গম ঘটে এবং সবুজ দাগ দেখা দিতে পারে। যদি অঙ্কুরোদগম না হয়, তা হলে দেখতে হবে, সবুজ রং ধরেছে কি না আলুতে। যদি দেখা যায়, অনেক বেশি পরিমাণে অঙ্কুর হয়েছে এবং রংও বদলেছে অনেকটা, তা হলে আলু থেকে সেই অংশটিকে বাদ দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। কারণ, রান্নার সময়েও এগুলি ধ্বংস হয় না। তাই অঙ্কুরিত আলু বা সবুজ অংশ খাওয়া ঠিক নয়। ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলে খাওয়া যেতে পারে।’’
আরও পড়ুন:
ওয়াশিংটনের চিকিৎসক ডায়ানা এম পেই-এর মতে, সোলানাইন এবং চ্যাকোনিনের প্রভাবে বমি, পেটে ব্যথা, পেটের সমস্যা, ডায়েরিয়া, মাথাব্যথা অথবা জ্বরের মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে। তাই পরামর্শ দেওয়া হয়, অঙ্কুরিত হওয়া এবং পচন রোধ করতে কয়েকটি টোটকা মেনে চলতে হয়।
১. ঠান্ডা, শুষ্ক, অন্ধকার জায়গায় রাখা উচিত। এতে আলুর মেয়াদ বৃদ্ধি পায়।
২. সরাসরি সূর্যের আলোয় বা কলা এবং পেঁয়াজের মতো এথিলিন উৎপাদনকারী ফলের কাছে রাখা উচিত নয়।
৩. সংরক্ষণ করার আগে জলে ধুয়ে ফেলবেন না। এতে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে অঙ্কুরোদ্গম হতে পারে সহজে।
৪. শুষ্কতা বজায় রাখতে কাগজের ব্যাগ বা কার্ডবোর্ডের বাক্সে সংরক্ষণ করুন আলুগুলি।