Advertisement
E-Paper

একটি পুতুলের দাম দেড় কোটি টাকা! দাঁত খিঁচোনো খোক্কস পুতুল নিয়ে কিসের এত মাতামাতি? কোথা থেকে এল?

পুতুলের নাম লাবুবু। যদিও সেই পুতুল আর নিছক পুতুল নেই। রাক্ষস কিংবা খোক্কসের ছোটখাটো কার্টুন সংস্করণের মতো দেখতে ওই পুতুল এই মুহূর্তে এক রকম স্ট্যাটাস সিম্বল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৫ ০৯:৫৭
what is the history of Labubu doll, how does it came to fame

ছবি : সংগৃহীত।

পুতুল বললে যেমন মিষ্টি মিষ্টি ব্যাপার চোখের সামনে ভাসে, একে দেখে মোটেই তা মনে হবে না। বরং প্রথম দর্শনে ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথার গল্পের খোক্কসের কথা মনে পড়তে পারে। ঠিক সেই রকমই ঘন রোমশ শরীর। খাড়া খাড়া কান, বড় বড় দাঁত আর তাতে ভীষণদর্শন এক হাসি! আর আপাতত এমন দেখতে একটি পুতুল নিয়েই গোটা পৃথিবীর গদগদ দশা!

ছোটরা নয়, এই পুতুল কেনার জন্য হুড়োহুড়ি পড়েছে ‘বড় শিশু’দের মধ্যে। যাঁরা তথাকথিত জেন জ়ি অথবা মিলেনিয়াল। বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে! বয়স্ক এই ‘শিশু’রা অবশ্য খেলার জন্য পুতুল কিনছেন না। তাঁরা আপাতত খোক্কস পুতুল কিনে, তার সঙ্গে ছবি দিচ্ছেন। কারণ ওই পুতুলের মালিক হওয়ার ঘোষণাই এখন ‘বড় ব্যাপার’। যা গত জুন মাসের পরে আরও বড় হয়েছে। কারণ জুনে এমন একটি পুতুল নিলামে বিক্রি হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকায়!

পুতুলের নাম লাবুবু। যদিও সেই পুতুল আর নিছক পুতুল নেই। রাক্ষস কিংবা খোক্কসের ছোটখাটো কার্টুন সংস্করণের মতো দেখতে ওই পুতুল এই মুহূর্তে এক রকম ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’। অধিকাংশ মানুষ নতুন গাড়ি, দামি ঘড়ি, ভাল ফোন কিনলে যেমন প্রদর্শন করেন, লাবুবুও সে ভাবেই দেখাচ্ছেন তাঁরা।

ট্রেন্ডে গা ভাসিয়েছেন মার্কিন পপ তারকা রিহানা, ডুয়া লিপা থেকে শুরু ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহ্যাম। এমনকি, হালে ভারতীয় অভিনেত্রী উর্বশী রৌতেলাও উইম্বলডনে টেনিস দেখতে হাজির হয়েছিলেন চার চারটি অমন পুতুল ব্যাগে আটকে। উর্বশীর সেই সংগ্রহ দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু কেন?

what is the history of Labubu doll, how does it came to fame

ছবি : সংগৃহীত।

লাবুবু নিয়ে এত মাতামাতি কিসের?

লাবুবু নিয়ে এই মাতামাতির শুরু ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে। কে-পপ ব্যান্ড ‘ব্ল্যাকপিঙ্ক’-এর শিল্পী লিসা ওই লাবুবু পুতুল নিয়ে ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন। জানান লাবুবুর প্রতি তাঁর একান্ত অনুরাগের কথা। সেই ইনস্টাগ্রাম স্টোরিই বদলে দেয় লাবুবুর ভাগ্য। তা নয়তো লাবুবু পুতুল ২০১৯ সাল থেকেই ছিল বাজারে। তারও চার বছর আগে লাবুবু চরিত্রটি তৈরি হয় খেলনার দুনিয়ায়। লেখা হয় বই। কিন্তু তার পরও লাবুবুর নাম সে ভাবে ছড়ায়নি। অবশ্য সব জিনিসেরই সঠিক সময় থাকে। লাবুবু পুতুল হয়তো সেই সৌভাগ্যেরই অপেক্ষা করছিল।

লাবুবু কোথা থেকে এল?

লাবুবুর স্রষ্টা কাসিং লুং হংকংয়ের শিল্পী। যদিও তাঁর ছোটবেলা কেটেছে নরওয়েতে। আর সেখানেই অদ্ভুতদর্শন লাবুবুর সৃষ্টির শুরুয়াত।

বছর সাতেকের ছোট্ট কাসিং নতুন দেশে এলেও সেখানকার ভাষা বুঝতে পারত না। স্কুলের শিক্ষকেরা বোঝার সুবিধার জন্য তাকে নরওয়ের লোকগাথার ছবি দেওয়া বই উপহার দেন। সেই বইয়েরই রাক্ষস, খোক্কাস, ভূত, প্রেত, অলৌকিকের দুনিয়াকে ভালবেসে ফেলে কাসিং। শুরু হয় তাদের নিয়ে আঁকিবুকি। সেই অভ্যাস বড় হয়েও কাটল না।

আঁকাকেই পেশা বানালেন কসিং। অবসর পেলেই ফুটিয়ে তুলতেন ছোটবেলায় পড়া নরওয়ের লোকগাথার অদ্ভুত চরিত্রদের। কেউ অদ্ভুতদর্শন বামন, তো কেউ জঙ্গলের ভূত। কখনও-সখনও সেই সব চরিত্রদের মিলিয়েমিশিয়ে একেবারে নতুন ধরনের চরিত্রও তৈরি করতেন। ২০১৫ সালে সেই সব চরিত্রদের আদলেই তৈরি করলেন পুতুলের সিরিজ়। নাম দিলেন মনস্টার কার্নিভ্যাল। বিদঘুটে দেখতে, ঝকঝকে ধারালো দাঁত আর রহস্যময় দুষ্টু হাসির সেই পুতুলদের নাম রাখা হল লাবুবু। কিন্তু মিষ্টি দেখতে পুতুলদের ভিড়ে অদ্ভুতদর্শন ওই পুতুল হালে পানি পায়নি।

২০১৯ সালে অন্য একটি খেলনা সংস্থা পপ মার্ট লাবুবুর দায়িত্ব নেয়। রহস্যময় পুতুলকে আরও রহস্যময় বানাতে তারা লাবুবুর জন্য তৈরি করে ‘ব্লাইন্ড বক্স’। যেখানে প্যাকেট না খোলা পর্যন্ত ক্রেতা বুঝতে পারবেন না তাঁর ভাগ্যে লাবুবুর কোন সংস্করণটি জুটতে চলেছে (তত দিনে নানা রকমের লাবুবু বানিয়ে ফেলেছেন কংসি আর পপ মার্ট)। এই ‘স্ট্র্যাটেজি’ লাবুবুর কাজে লাগে। ধীরে ধীরে ওই পুতুল নিয়ে বাড়তে শুরু করে আগ্রহ। পুতুলের সংগ্রাহকেরা লাবুবুর বিরল মডেল গুলির জন্য মাত্রাছাড়া অর্থব্যয় করতে শুরু করেন। আর ঠিক এই সময়েই গত বছর এপ্রিলে ইনস্টাগ্রামে ভেসে ওঠে ওই ছবি। যা লহমায় ‘গ্লোবাল সেনসেশন’ বানিয়ে দেয় লাবুবুকে।

what is the history of Labubu doll, how does it came to fame

ছবি : সংগৃহীত।

লাবুবু সংস্কৃতি

গত আড়াই মাসে লাবুবু নিয়ে মাতামাতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতটাই যে, হাই এন্ড ফ্যাশন থেকে শুরু করে নরম পানীয়ের ব্র্যান্ড— সবেতেই জুড়েছে ওই পুতুল। আন্তর্জাতিক বিলাসী ফ্যাশন সংস্থাগুলি লাবুবু ভাবনায় ভর করে এনেছে বিশেষ পোশাকের সম্ভার। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন সপ্তাহের মঞ্চেও দেখা মিলেছে ওই আদুরে অথচ রহস্যময় পুতুলের। লাবুবুর এক ঝলক নিজেদের সঙ্গে জুড়তে কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছে জনপ্রিয় খাবার কিম্বা পানীয়ের ব্র্যান্ডগুলির মধ্যেও। কারণ সবাই ট্রেন্ডে থাকতে চায়। আর এই ‘ট্রেন্ডের’ প্রভাবেই একটি সাধারণ পুতুলের দাম প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে।

লাবুবুর দাম কী রকম?

লাবুবু বিভিন্ন মাপের বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। ৮ সেন্টিমিটার থেকে ১৩১ সেন্টিমিটার, (অর্থাৎ ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি) পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের ৩০০ রকমের লাবুবু পুতুল পাওয়া যায়। তাদের প্রত্যেকেই গায়ের রং, চোখের রং, দাঁতের রং আলাদা। আলাদা হাবভাবও। দাম নির্ভর করে নকশা এবং আকৃতির উপর। সাধারণত সবচেয়ে ছোট লাবুবু ১৩০০ টাকা থেকে শুরু। বড়গুলির দাম প্রায় লাখখানেকের মতো। তবে বিশেষ বিশেষ লাবুবু এই দামের ধার ধারে না। যেমন চিনে ৪ ফুট ৩ ইঞ্চির লাবুবু নিলামে উঠেছে প্রায় দেড় কোটি টাকায়। ৪০ সেন্টিমিটারের তিনটি বিশেষ লাবুবু বিক্রি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকায়।

সমালোচনা

ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে যাঁরা লাবুবু কেনার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন, লাখ টাকা ব্যয় করছেন, তাঁদের সমালোচনাও হচ্ছে বিস্তর। অনেকেই বলছেন, আজ ট্রেন্ডে থাকতে যে পুতুলের পিছনে টাকা ওড়াচ্ছেন, ট্রেন্ড স্তিমিত হলে সেই পুতুলে ধুলো জমবে। অথচ ওই টাকা অনেকের উপকারে লাগতে পারত।

Labubu Doll
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy