নিছকই এক ওষুধ দোকানের কর্মচারী। কিন্তু চিকিৎসকের সহকারী বলে পরিচয় দিয়ে সটান সে ঢুকে পড়েছিল অপারেশন থিয়েটারে। সেই যুবককে মদত দেওয়ায় অভিযুক্ত চিকিৎসক শুভাশিসরঞ্জন মিত্রকে আড়াল করার অভিযোগ উঠল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
শনিবার ওই অভিযোগ তুলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপারকে একযোগে স্মারকলিপি দেন অন্তত ৫টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন রোগিণীর পরিবারের লোকেরাও। অভিযোগ, চিকিৎসকের সহকারী সেজে ওটিতে ঢোকার ঘটনায় বহিরাগত এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওই যুবক ৫ হাজার টাকা দামের অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম দিয়ে রোগিণীর লোকদের কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকা নিয়েছে। দিনের পর দিন হাসপাতালে চিকিৎসকদের একাংশের মদতে এ ভাবে রোগীর পরিবারকে ঠকতে হবে কেন সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ওই সমস্ত সংস্থার প্রতিনিধিরা। অথচ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। তদন্তের কাজ ১০ দিনের মধ্যে শেষ করে রিপোর্ট তৈরির কথা থাকলেও তা হয়নি। দ্রুত তদন্ত শেষ করে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দলনের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
নির্ধারিত সময়ে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি না হলেও হাসপাতাল সুপার বিষয়টকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। রিপোর্ট তৈরি দূরের কথা তদন্তের কাজও অধিকাংশই বাকি বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার বলেন, “তদন্তের কাজ চলছে। ৪ জনের যে কমিটি গড়া হয়েছে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে হাসপাতালের বিভিন্নস্তরের কর্মী, ঘটনার জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তিদের আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সময় লাগছে। কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও তাঁরা কাজের জন্য সময় মতো যেতে পারেননি। তা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। সে কারণেই কিছু বাড়তি সময় দরকার।” কত দিনে রিপোর্ট মিলবে সে ব্যাপারে তদন্ত কমিটির সঙ্গে কথা বলে সোমবারে তিনি তা জানাবেন।
হাসপাতালের একটি সূত্রই জানিয়েছে, অভিযুক্ত চিকিৎসক শুভাশিসরঞ্জন মিত্র ঘটনার পর থেকে স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এখনও তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়নি। স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অনুপ রায়। তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।
গত ১৪ মে কদমতলার বাসিন্দা ভারতী দাসের অস্ত্রোপচার হয়। অভিযোগ ওঠে, চিকিৎসক শুভাশিসবাবুর নির্দেশে তাঁর দেওয়া নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করা হলে একটি কোম্পানির কাছ থেকে সরঞ্জাম কেনে পরিবারের লোকেরা। সরবরাহকারী তথা কোম্পানির কর্মী নির্মাল মণ্ডল ১৭ হাজার টাকায় সরঞ্জাম সরবরাহ করা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। অস্ত্রোপচারের সময় ওই যুবককে চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে ওটিতে দেখতে পেয়ে রোগিণীর লোকদের সন্দেহ হয়। তারা ওই ব্যক্তিকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এ দিন স্মারকলিপি দিতে এসে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা পীযূষকান্তি রায়, অভিরঞ্জন ভাদুড়ি, প্রদীপ দেব, রিপন মজুমদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ওই ঘটনায় জড়িত সকলকে শাস্তি দিতে হবে। হাসপাতাল চত্বর দালাল চক্রের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অথচ জেনে বুঝে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে রয়েছে। পীযূষ কান্তিবাবু বলেন, “এখন তো মনে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনেকেই এ সবে যুক্ত। সুপারও কেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সেটাও স্পষ্ট নয়। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আমরা বড় ধরণের আন্দোলন করব।” রোগিণীর দাদা উদয় শঙ্কর চন্দ বলেন, “দোষীরা দ্রুত শাস্তি দেওয়া হোক এই দাবি জানাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy