Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
রিষড়া সেবাসদন

আশ্বাস সার, বদল হয়নি স্বাস্থ্য-চিত্রের

হাজারো প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হল না রিষড়া সেবাসদনে। অনিয়মের অভিযোগ এনে পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। সুষ্ঠু ভাবে পরিষেবা চালানোর বন্দোবস্ত করা হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। বাস্তবে কিছুই হয়নি। পরিকাঠামোরও এতটুকু উন্নতি হয়নি বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রিষড়া শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

হাজারো প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হল না রিষড়া সেবাসদনে।

অনিয়মের অভিযোগ এনে পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। সুষ্ঠু ভাবে পরিষেবা চালানোর বন্দোবস্ত করা হবে বলে জানিয়েছিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। বাস্তবে কিছুই হয়নি। পরিকাঠামোরও এতটুকু উন্নতি হয়নি বলে এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ। এ দিকে, টানা দু’বছর ধরে অনুদান দিচ্ছে না রাজ্য সরকার। কর্মীদের বেতন মেটাতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে পুরসভার।

রিষড়া স্টেশনের অদূরের এই হাসপাতালটি কয়েক দশকের পুরনো। বাম জমানায় পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ সরকার ছিলেন হাসপাতালের সর্বেসর্বা। রাজ্য সরকার অনুদান হিসেবে বছরে ২৭ লক্ষ টাকা দিত। গত পুর নির্বাচনে বামেদের হারিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। তার আগেই অবশ্য দিলীপবাবু হাসপাতালের নির্দিষ্ট কমিটি ভেঙে দিয়ে পরিচালন কমিটি তৈরি করেন। প্রধান হন দিলীপবাবুই।

২০১১ সালে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার দিলীপবাবুর নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে অনুদান বন্ধ করলে হাসপাতালটি মুখ থুবড়ে পড়ে। দিলীপবাবু-সহ পরিচালন সমিতির সব সদস্য পদত্যাগ করেন। অনুদান না মেলায় বেতন বন্ধ হয়ে যায়। চিকিত্‌সকেরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। রোগী ভর্তিও বন্ধ হয়। কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। বছর খানেক আগে স্বাস্থ্য দফতর ৫ জনের একটি তদারকি কমিটি গড়ে দেয়।

পুরপ্রধান শঙ্কর সাউ সরকারের কাছে চিঠি লিখে জানান, দায়িত্ব দিলে পুরসভা হাসপাতাল দেখভাল করবে। কর্মীরাও সেই দাবিতে সোচ্চার হন। কর্মীদের একাংশ তা চেয়েছিলেন। কিন্তু একাংশের বিরোধিতাও আসে। তাঁরা চাননি, ওখানে স্থানীয় চিকিত্‌সক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায় হস্তক্ষেপ করুন। বিধায়ক হাসপাতালে গেলে তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়ান কর্মীদের একাংশ।

শেষ পর্যন্ত পুরসভা অস্থায়ী ভাবে হাসপাতাল চালানোর দায়িত্ব পায়। অনুদান না মেলা পর্যন্ত কর্মীদের টাকা তারা মেটাবে ঠিক হয়। হাসপাতালে কর্মীর সংখ্যা প্রায় একশো। পুরসভা সূত্রের খবর, গত এক বছরে বেতনের টাকা গুণতেই পুরসভার তহবিল থেকে প্রায় ৫০ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এখনও ক্লিনিক্যাল লাইসেন্স পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে রোগী ভর্তির হার একেবারেই কমে গিয়েছে।

পুরপ্রধান তৃণমূলের শঙ্কর সাউকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই তিনি রেগে গিয়ে বলেন, “ঠিকঠাক হাসপাতাল চলছে কিনা, গিয়ে দেখে আসুন।” এ কথা বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি। শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি হালদার দায়িত্বে এসেছেন সম্প্রতি। তিনি বলেন, “অনুদানের বিষয় নিয়ে আমি খোঁজ নিতে পারিনি। কোনও বৈঠকও হয়নি। তবে নিশ্চয়ই উপযুক্ত পদক্ষেপ করার চেষ্টা করব।”

পেশায় ব্যবসায়ী পুরপ্রধান মানতে না চাইলেও পরিকাঠামোগত সমস্যার বিষয়টি কেনও ভাবেই চোখ এড়ায়নি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক সুদীপ্তবাবুর। তিনি বলেছেন, “আমি বারে বারেই বলে এসেছি, উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে না পারলে এই হাসপাতাল সুষ্ঠু ভাবে চালানো সম্ভব নয়। কারণ পর্যাপ্ত স্টাফও নেই। পুরসভা তো চালাতে চেষ্টা করছে। দেখা যাক, কী হয়।” সুদীপ্তবাবু বলেন, “লাইসেন্স নবীকরণ না হলে অনুদান মিলবে কী ভাবে?” জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলা স্বাস্থ্য দফতর পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

তবে মুখে না বললেও পুর কর্তৃপক্ষ এই হাসপাতালের ভবিষ্যত্‌ নিয়ে চিন্তিত। গত ১ ডিসেম্বর হাসপাতালের আয়-ব্যয়ের হিসাব তদারকির জন্য পুরসভার তরফে তিন জনের একটি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি হাসপাতালের ভবিষ্যত্‌ নিয়ে রিষড়া সেবাসদনের কর্মীরা পুরসভার প্রধানের সঙ্গে দেখাও করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rishra seba sadan medical service bad condition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE