Advertisement
E-Paper

আয়ুর্বেদকে গুরুত্ব, তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

অ্যালোপ্যাথির মতো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে তুলে ধরার বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। শুধু তাই নয়, ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে আয়ুর্বেদই সেরা মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁর দাবি। এ বিষয়ে শীঘ্রই বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসবেন বলে জানান। শুক্র বার পানজিমে এক স্বাস্থ্য সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বার্তাকে ঘিরে চিকিৎসক মহলের এক অংশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪

অ্যালোপ্যাথির মতো আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে তুলে ধরার বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। শুধু তাই নয়, ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গির মতো মশাবাহিত রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে আয়ুর্বেদই সেরা মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁর দাবি। এ বিষয়ে শীঘ্রই বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসবেন বলে জানান। শুক্র বার পানজিমে এক স্বাস্থ্য সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই বার্তাকে ঘিরে চিকিৎসক মহলের এক অংশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, অ্যালোপ্যাথ চিকিৎসার উন্নতি ও গবেষণা নিয়ে কোনও শব্দ খরচ না করে শুধু আয়ুর্বেদকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

হর্ষ বর্ধন জানান, ভারতীয় সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতিকে সার্কভুক্ত দেশগুলিতেও ছড়িয়ে দিতে চায় বিজেপি সরকার। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে তাদের প্রাথমিক চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশে আয়ুর্বেদের প্রচার ও প্রসারে সব রকম ভাবে সাহায্য করবে ভারত। মাসখানেক আগে জেনিভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সার্কভুক্ত দেশগুলির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শুধু আয়ুর্বেদ নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিতে ইউনানি, যোগ বা সিদ্ধার মতো চিকিৎসা প্রক্রিয়াকেও অন্যতম হাতিয়ার করতে চায় বিজেপি সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ‘ইনসিওরেন্স রেগুলেটারি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অথরিটি’র সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। চিকিৎসা বিমার খরচ পাওয়ার ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদকেও যাতে অর্ন্তভুক্ত করা যায়, আলোচনা চলছে সে নিয়েও। বেশ কিছু বিমা সংস্থা এ বিষয়ে প্রাথমিক ভাবে সম্মত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর।

হর্ষ বর্ধনের বক্তব্য, আয়ুর্বেদকে গুরুত্ব না দিলে এ দেশে ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য নীতি’ বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। আর তাই অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)-এর নামের সঙ্গেও শীঘ্রই আয়ুর্বেদ শব্দটা যুক্ত করা হবে বলে তিনি জানান। যদিও তাঁর এই সিদ্ধান্তে চিকিৎসক মহলের একটা বড় অংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য, নিজে এক জন অ্যালোপ্যাথ চিকিৎসক হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটা কী ভাবে করছেন? আয়ুর্বেদ চিকিৎসা প্রসারে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়ে এইমস-এর এক কর্তা বলেন, “এইমস এ আয়ুর্বেদ নিয়ে আলাদা কেন্দ্র হোক। এ নিয়ে আপত্তি নেই। কিন্তু নামের সঙ্গে আয়ুর্বেদ জুড়লে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হবে।”

একই কথা বলেছে চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-ও। মশাবাহিত রোগের চিকিৎসায় আয়ুর্বেদ সেরা মাধ্যম বলে হর্ষ বর্ধন যে মন্তব্যটি করেছেন, সে প্রসঙ্গে আইএমএ-এর এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “উনি নিজে এক সময় আইএমএ-র সভাপতি ছিলেন। তাঁর মুখে এই কথা মানায় না।” বিষয়টি নিয়ে তাঁরা শীঘ্রই হর্ষ বর্ধনকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। পরে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কলকাতা স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভ নন্দী বলেন, “এক জন চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি যে আয়ুর্বেদে কী ভাবে এর চিকিৎসা সম্ভব, তার কোনও ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই।”

এর আগে কংগ্রেস সরকারও অবশ্য আয়ুর্বেদের প্রসারে কম গুরুত্ব দেয়নি। এক সময় সব রাজ্যে ‘আয়ুষের’ পৃথক বিভাগ খোলার নির্দেশ দিয়েছিল কংগ্রেস সরকার। সেই নির্দেশ মেনে পশ্চিমবঙ্গে শুধু বিভাগ নয়, আয়ুষের ভার সামলানোর জন্য পৃথক প্রতিমন্ত্রীও আছেন। তবে বিজেপি আমলে আয়ুর্বেদের প্রচার ঘিরে চিকিৎসার গৈরিকীকরণ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কিছু দিন আগে রামদেবের আশ্রমে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে প্রচার করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন হর্ষ বর্ধন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রসার ও গবেষণায় জোর না দিয়ে শুধু বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির প্রসারে অর্থ ও লোকবল ব্যয় করে বিজেপি দেশকে ক্রমশ পেছনের দিকে ঠেলছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

হর্ষ বর্ধন অবশ্য জানিয়েছেন, সমালোচনাকে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাই দেশ জুড়ে ১২ হাজার আয়ুর্বেদিক ডাক্তার নিয়োগ করা হয়েছে। তৈরি হচ্ছে বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক গবেষণাগারও। মন্ত্রীর বক্তব্য, দেশ থেকে প্রতি বছর বহু কোটি টাকার ভেষজ পাচার হয়ে যায়। আর বিদেশে সেই ভেষজ ব্যবহার করে তৈরি হয় ওষুধ। এ বার সেই পাচারও রুখতে সচেষ্ট হচ্ছে কেন্দ্র।

ayurveda soma mukhopadhyay panjim health ministry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy