Advertisement
E-Paper

ইবোলা গরিব দেশের, তাই কি অমিল প্রতিষেধক

রোগীরা বেশির ভাগই বড় গরিব। হয়তো বা প্রতিষেধকের দামও দিতে পারবেন না অনেকে। এই ভেবেই গত চল্লিশ বছরে ইবোলার প্রতিষেধক তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়নি বিশ্বের নামীদামি ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি। সোমবার পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে এক বক্তৃতায় এমন কথা বললেন স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(হু) ডিরেক্টর জেনারেল মার্গারেট চ্যান।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৬

রোগীরা বেশির ভাগই বড় গরিব। হয়তো বা প্রতিষেধকের দামও দিতে পারবেন না অনেকে। এই ভেবেই গত চল্লিশ বছরে ইবোলার প্রতিষেধক তৈরির জন্য উদ্যোগী হয়নি বিশ্বের নামীদামি ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি। সোমবার পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে এক বক্তৃতায় এমন কথা বললেন স্বয়ং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(হু) ডিরেক্টর জেনারেল মার্গারেট চ্যান। পেশায় চিকিৎসক চ্যানের আরও দাবি, যথাযথ পরিকাঠামো থাকলে সহজেই ইবোলা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু আফ্রিকার গরিব দেশগুলিতে তা না থাকাতেই এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ইবোলা।

ইতিহাস বলছে, প্রায় চার দশক আগে এই রোগে প্রথম আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। তার পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ বার ইবোলার প্রকোপ দেখা গিয়েছে। তাতে প্রায় ১৫০০ মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু প্রতি বারই আফ্রিকার ভিতরের দিকের দেশগুলিতেই তার প্রকোপ থেমে থেকেছিল। এই দেশগুলির বেশিরভাগেরই আর্থিক হাল খারাপ। সুতরাং প্রতিষেধক তৈরি হলেও তা দাম দিয়ে কিনতে পারবেন এমন ক্রেতা মিলবে না এই দেশগুলিতে। লাভ-লোকসানের এই সহজ হিসেব করেই এত দিন প্রতিষেধক তৈরির কাজ করেনি ওষুধ-নির্মাতা সংস্থাগুলি, মনে করেন চ্যান। তাঁর বয়ানে, “ইবোলার সন্ধান মেলার পর চার দশক পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও ডাক্তারদের হাতে কোনও প্রতিষেধক ও দাওয়াই নেই কেন? কারণ ইতিহাস বলছে ইবোলা শুধুমাত্র আফ্রিকার গরিব দেশগুলিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। আর তাই প্রতিষেধক তৈরিতে ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেয়নি ওষুধ-নির্মাতা সংস্থাগুলি। ...আসলে যে বাজার দাম দিতে পারবে না তার জন্য কেন ওষুধ তৈরি করবে লাভসর্বস্ব ব্যবসায়িক দুনিয়া।” ফল? চলতি বছরে আফ্রিকার পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন এই প্রাণঘাতী রোগে। তবে এতেই শেষ নয়। এ বার সংক্রমণের ঢেউ লেগেছে উন্নত পশ্চিমী দুনিয়ার দেশগুলিতেও।

সম্ভবত সে কারণেই প্রতিষেধক বানানোর তাড়াহুড়ো শুরু হয়েছে এ বার। এবং গোটাটাই হয়েছে হু-র উদ্যোগে। সাধারণত কোনও রোগের প্রতিষেধক তৈরি হতে বছর দশেক লেগে যায়। কিন্তু এ বার গোটা প্রক্রিয়াটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চায় হু। এবং সে কারণে একই সঙ্গে আলাদা আলাদা জায়গায় প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ দিতে পারে বলে যেটিকে নিয়ে আশা করা হচ্ছে, সেটির প্রথম ‘ট্রায়াল’ই হবে আগামী বছরের শেষে। তবে কানাডায় যে প্রতিষেধক বানানোর চেষ্টা চলছে, তা ইঁদুরের উপর প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাতে সাফল্য মেলায় শুরু হয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (মানুষের উপর পরীক্ষা)। সফল হলেই দ্রুত সেটিকে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা-আক্রান্ত দেশগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের এক দল বিজ্ঞানী আবার দাবি করেছেন, তাঁদের তৈরি প্রতিষেধকও প্রাণীদের উপর কাজ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ প্রতিষেধক নিতে সূঁচের যন্ত্রণাও সহ্য করতে হবে না। শুঁকলেই কাজ হবে। এবং এটি ইবোলার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু তারও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। সুতরাং সেটিও আফ্রিকার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছতে দেরি আছে। তত দিন নজরদারিই সম্বল।

তবে তাতেও অসুবিধা রয়েছে। এই যেমন সিয়েরা লিওন। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে ইবোলার প্রকোপ মারাত্মক। আর সে জন্যই নিয়মের কড়াকড়ি রয়েছে। এতটাই যে কিছুু এলাকায় মানুষজনকে বাড়ি থেকে বের হতেও বারণ করা হয়েছে। স্থির হয়েছিল, রাষ্ট্রপুঞ্জের পাঠানো খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ওই গৃহবন্দি মানুষদের কাছে পৌঁছে দেবে সে দেশের প্রশাসন। কিন্তু তা হয়নি। সম্ভবত সংক্রমণের ভয় এর অন্যতম কারণ। দীর্ঘদিন অর্ধাহারে, অনাহারে থাকা মানুষগুলো তাই এখন বাড়ি ছেড়ে বেরোতে ব্যাকুল। না খেয়ে ক’দিনই বা থাকা যায়? কিন্তু বেরোলেই সংক্রমণের ভয়। মঙ্গলবার আবার খবর আসে, সে দেশের কিগবাল গ্রামে নতুন করে ইবোলার প্রকোপ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সে গ্রামের ৩০ জন বাসিন্দা মারা গিয়েছেন তাতে। অনেকেরই গায়ে ধূম জ্বর। ফলে কিগবালকে কেন্দ্র করে ইবোলা আবার ভয়াবহ রূপ নেবে কিনা, তা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।

চ্যানের দাবি, এমন বাড়বাড়ন্ত হওয়াই উচিত নয়। কারণ ইবোলার সংক্রমণ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু খলনায়ক অর্থনীতি। যার বেহাল দশার জেরে ন্যূনতম পরিকাঠামোটুকুও তৈরি করতে পারেনি পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি। তাই এমন মহামারীর রূপ নিয়েছে ইবোলা।

ebola who antidote of ebola margaret chan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy