Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ইমার্জেন্সিতে দেখা নেই চিকিৎসকের, রোগীর লাইন

শুধু দুই মেদিনীপুরই নয়, আরও দূরের এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। অথচ বারবারই এই হাসপাতাল ঘিরে উঠেছে নানা অভিযোগ। কখনও হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে, কখনও চিকিৎসরা গাফিলতি, কখনও বা চিকিৎসকদের গরহাজিরা নিয়ে।

সকাল ৮টা: ১৫ইমার্জেন্সিতে ডাক্তারের শূন্য চেয়ার।

সকাল ৮টা: ১৫ইমার্জেন্সিতে ডাক্তারের শূন্য চেয়ার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

শুধু দুই মেদিনীপুরই নয়, আরও দূরের এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারাও চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। অথচ বারবারই এই হাসপাতাল ঘিরে উঠেছে নানা অভিযোগ। কখনও হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে, কখনও চিকিৎসরা গাফিলতি, কখনও বা চিকিৎসকদের গরহাজিরা নিয়ে।

দিন কয়েক আগেই সিনিয়র চিকিৎসকদের হাজিরা নিয়ে কলেজের পরিচালক সমিতির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পরিচালন সমিতির সভাপতি মৃগেন মাইতি। তারপর কি বদলেছে ছবিটা? তারই খোঁজে রবিবার মেদিনীপুর হাসপাতালে নজর রাখলেন আনন্দবাজার পত্রিকার চিত্র সাংবাদিক।

রবিবার সকাল আটটা থেকেই ডিউটির কথা ছিল ইমার্জেন্সির চিকিৎসকের। অথচ ৮টা ১৫ মিনিটেও ইমার্জেন্সি টেবিলে দেখা মিলল না সেই চিকিৎসকের। তাঁর জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইলেন রোগীরা। বাড়তে লাগল লাইন। দীর্ঘক্ষণ পর জানা গেল ইমার্জেন্সি ঘরটি পরিষ্কারের কাজ চলছে। তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক পাশের অবজার্ভেশন রুমে রয়েছেন। আর একটু ঘুরে দেখা গেল, ইমার্জেন্সি থেকে ওয়ার্ডে রোগীর ট্রলি টানার জন্য হাসপাতালের কর্মীরা নয়, ভরসা রোগীর পরিজনরাই। ওয়ার্ডে রোগী নামিয়ে ট্রলি ইমার্জেন্সিতে ফেরত দিলে মেলে গেট-পাশ টিকিট।

রোগীর পরিজনদের অনেকেরই অভিযোগ ছিল, ইমার্জেন্সির সামনের রাস্তায় ইমারতি দ্রব্য পড়ে থাকে। ফলে রোগীর গাড়ি রাখতে অসুবিধা হয়। বাস্তবিকই দেখা গেল ইমার্জেন্সির সামনে ঢাঁই করে পড়ে রয়েছে স্টোন চিপস্। একসঙ্গে কয়েকটি গাড়ি এলেই লাইন পড়ে যায়। দাঁড়ানোরই জায়গা পাওয়া যায় না।

জখম রোগীদের আপৎকালীন অবস্থায় চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ রয়েছে অবজার্ভেশন রুম। অথচ বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটেও সেখানে দেখা মেলেনি কোনও চিকিৎসক, নার্স বা কোনও স্বাস্থ্য কর্মীর। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, এই ঘরে শৌচালায়েরও কোনও ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের বেহাল অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন রোগীরা। কোথাও ছাদ থেকে চাঙর খসে পড়েছে, আবার কোথাও রোগীর বিছানায় পড়েছে বৃষ্টির জল। এ দিন দেখা গেল, বিধান ব্লকে অপারেশন থিয়েটারের সামনে ছাদ চুঁইয়ে পড়েছে বৃষ্টির জল।

সারা রাজ্য জুড়ে এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অথচ হাসপাতালের ভিতরেই যে পুকুর রয়েছে তা দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না হওয়ার ফলে সেটাই মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। আবার বেহাল নিকাশির কারণে হাসপাতাল চত্বরের রাস্তায় বৃষ্টির জল বের হতে পারেনি। জমা জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর ওই জমা জল পেরিয়েই যাতায়াতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীর পরিজনরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হাসপাতালের ছাদ মেরামতের ব্যাপারে পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুকুর সংস্কারেও উদ্যোগী হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের এমন অবস্থায় ক্ষুব্ধ রোগীর আত্মীয়রাও। রবীন্দ্রনাথ শীট নামে এক আত্মীয়ের বক্তব্য, “রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলি টানতে হয়েছে আমাদেরই। ট্রলি ফেরত দেওয়ার পর মিলেছে গেট পাশ। হাসপাতালের নিকাশি ব্যবস্থাও ভাল নয়। তাই হাসপাতাল চত্বরের জমা জল পেরিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। জমা জলে মশা তো রয়েছেই। তাই সঙ্গে মশারি নিয়ে এসেছি।”

মেদিনীপুরে সিনিয়র ডাক্তারদের সময় মতো না থাকার অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে একাংশ জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যেও অসন্তোষ রয়েছে। দিন কয়েক আগে মেদিনীপুর মেডিক্যাল পরিদর্শনে এসেছিল স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল। সেই দলে ছিলেন চিকিৎসক সুব্রত মৈত্রও। দলটির আসার খবর মেডিক্যালে জানানো সত্ত্বেও মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি এক্সপার্ট গ্রুপের সদস্যরা যখন আসেন, তখন সেখানে হাজির ছিলেন শুধুমাত্র একজন সহকারী-সুপার এবং একজন বিভাগীয় প্রধান। গরহাজির ছিলেন অধ্যক্ষ তমালকান্তি ঘোষ থেকে শুরু করে উপাধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার যুগল কর, ডেপুটি সুপার বিশ্বনাথ দাস।

মেদিনীপুর থেকে ফিরে গিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে এ নিয়ে এক রিপোর্টও দিয়েছেন সুব্রতবাবুরা। এক্সপার্ট গ্রুপের সদস্যরা মনে করেন, শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত থাকলে সমস্যার খুঁটিনাটি জানা যেত।

বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন খোদ মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি মৃগেন মাইতি। তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, “সিনিয়র ডাক্তারদের সময় মতো হাসপাতালে থাকতে হবে। কাজে ফাঁকি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।” কলেজে এক সূত্রে খবর, কখনও কর্তাদের সতর্ক করে মৃগেনবাবু বলেন, “রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। আর আপনারা বলছেন হচ্ছে-হবে! কেন হাসপাতালে এসে রোগীর পরিবারের লোকেরা সমস্যায় পড়বেন বলতে পারেন!’

তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে এ বিষয়ে বিশেষ কিছু তিনি বলেননি। তাঁর বক্তব্য ছিল, “সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত কার্যকর হবে। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকবেই। তার মধ্যেই কাজ করতে হবে।” সিনিয়র ডাক্তারদের সময় মতো না থাকা নিয়ে বৈঠকে উষ্মা প্রকাশের প্রসঙ্গে তাঁর উত্তর ছিল, “ যা বলার বৈঠকে বলেছি। এ নিয়ে আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে কিছু বলব না।”

রোগীদের নিরাপত্তায় নজরদারির জন্য হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে বসানো হয়েছিল ক্লোজ সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) ক্যামেরা। হাসপাতালের এমন অব্যবস্থার ছবি সেই ক্যামেরায় কি ফুটে ওঠে না?

রবিবার হাসপাতালে চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, সেই ক্যামেরার মুখ নীচে করে রাখা রয়েছে।

তাহলে ছবি আর উঠবে কীসে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore medical college midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE