বন্ধ ডায়ালিসিস বিভাগ। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
ঘটা করে উদ্বোধন করেছিলেন মন্ত্রীরা এসে। কিন্তু উদ্বোধনের কয়েক দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ডায়ালিসিস বিভাগ। ফলে বেশি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে ডায়ালিসিস করতে হচ্ছে রোগীদেরআগের মতোই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জলে আয়রন বেশি বলে যন্ত্র সরবরাহকারী ও মেরামতির দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি এই মুহূর্তে ডায়ালিসিস ইউনিটটি চালাতে নিষেধ করেছে। জলের সমস্যা সমাধানে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আবার পাল্টা দোষারোপ করছে যন্ত্রের উপরে।
১৫ জুলাই নদিয়া জেলা হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিটটির উদ্বোধন করেছিলেন কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও জনস্বাস্থ্য-কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা। পিপিপি মডেলের এই ডায়ালিসিস ইউনিটের শয্যা সংখ্যা পাঁচ। হাসপাতালের মাধ্যমে এই ইউনিটে ডায়ালিসিস করাতে সব মিলিয়ে মোট ৭৮০ টাকা খরচ হবে। বিপিএল তালিকাভুক্ত অথবা বিপিএল তালিকাভুক্ত নয় এমন দরিদ্র মানুষদের আবার ডায়ালিসিসের জন্য পাঁচশো টাকাও দিতে হবে না। কেবলমাত্র ওষুধ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য ২৮০ টাকা দিলেই হবে তাঁদের। আর হাসপাতালের মাধ্যমে না করে এখানে সরাসরি ডায়ালিসিস করালে খরচ হবে ১২৮০ টাকা। ১৫ জুলাই ডায়ালিসিস ইউনিটটি চালু হওয়ার পর কাজেও লাগছিল খুব। ৬ অগস্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেই ২৫ জন রোগীর ডায়ালিসিস হয়ে গিয়েছিল।
কেন বন্ধ হয়ে গেল ইউনিটটি? হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত জলের মান নিয়ে সমস্যার কারণেই ইউনিটটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ডায়ালিসিস ইউনিটের যন্ত্র সরবরাহ ও মেরামতির দায়িত্বে থাকা সংস্থার আধিকারিক পিনাকী মহাপাত্র বলেন, ‘‘হাসপাতালের জলে আয়রনের পরিমাণ অনেকটাই বেশি। তার ফলে শুধু মেশিনই খারাপ হয়ে যাবে না, ওই জল দিয়ে ডায়ালিসিস করলে রোগীদেরও নানান সমস্যা তৈরি হবে। সেই কারণেই আমরা এই মুহূর্তে ডায়ালিসিস বন্ধ রাখতে বলেছি।’’
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের দাবি, হাসপাতালের জলে আয়রনের পরিমাণ সামান্য বেশি (০.৩ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারের জায়গায় ০.৬৮ মিলিগ্রাম প্রতি লিটার) থাকলেও তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দফতরের কৃষ্ণনগর ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তাপস রঞ্জন বেরা বলেন, ‘‘সম্ভবত ওই প্ল্যান্টের মেশিনেরই কোন সমস্যা আছে।’’ পিনাকীবাবু অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘‘আমাদের যন্ত্র বা পরিকাঠামোয় কোনও সমস্যা নেই। ওই প্ল্যান্ট চালু করতে গেলে ঠিক কী কী প্রয়োজন তা আমরা হাসপাতালের সুপারকে জানিয়ে দিয়েছি। সেগুলো পূরণ হলেই এই ইউনিট চালু করা সম্ভব হবে।’’
হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি আয়রন প্ল্যান্ট বসানো হবে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের অধিকারিকরা হাসপাতালে এসে সরেজমিনে দেখেও গিয়েছেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র তাপসবাবু বলেন, ‘‘রোগীদের সমস্যার কথা ভেবে আমরা যত দ্রুত সম্ভব আয়রন প্ল্যান্ট বসানোর চেষ্টা করছি।”
তা হলে কবে থেকে আবার চালু হবে জেলা হাসপাতালের এই ডায়ালিসিস ইউনিটটি? স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার হিমাদ্রী হালদার বলেন,‘‘কবে যে আবার ডায়ালিসিস ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হবে, তা এই মুহুর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করছি যত দ্রুত চালু করা যায়।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অধীপ ঘোষ বলেন, ‘‘জলে আয়রন বেশি থাকার কারণে সমস্যা হচ্ছিল। আয়রন প্ল্যান্ট বসিয়ে দ্রুত ইউনিটটি খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy