Advertisement
E-Paper

কথা রাখেনি কেউ, ধুঁকছে হাসপাতাল

মউ স্বাক্ষরের সময় কথা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ফরাক্কা ব্যারাজ হাসপাতালের দায়িত্ব নেবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রক। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারির ওই মউ চুক্তির পরে গঙ্গা দিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক। কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও হাসপাতালের দায়িত্বভার হস্তান্তরিত হয়নি।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১২
ফাঁকা পড়ে শয্যা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ফাঁকা পড়ে শয্যা। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

মউ স্বাক্ষরের সময় কথা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছ থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ফরাক্কা ব্যারাজ হাসপাতালের দায়িত্ব নেবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রক। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারির ওই মউ চুক্তির পরে গঙ্গা দিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক। কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও হাসপাতালের দায়িত্বভার হস্তান্তরিত হয়নি। এ দিকে দু’দফতরের টানাপড়েনে কোনও দিক থেকেই অর্থ সাহায্য পাচ্ছে না হাসপাতাল। এমনকী ফরাক্কা ব্যারাজের হাতে থাকার সময়ে ওষুধপত্রের দিক থেকে যে কিছুটা সুবিধা মিলত, হারিয়েছে তাও। ফলে কার্যত রোগীরা এসে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। কাজ না থাকায় মাছি তাড়াচ্ছেন নার্স, ফার্মাসিস্টরাও।

তৈরির সময় থেকেই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের হাতে ছিল এই হাসপাতালটি। ক্রমে ব্যারাজের কর্মী সংখ্যা কমতে থাকায় হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে পরিষেবার মানও নামতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে গত লোকসভা ভোটের আগে হাসপাতালটিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে এনে ৬ মাসের মধ্যে ৬০ শয্যার একটি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের আধিকারিকদের মধ্যে মউ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। ঠিক হয়, ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে হাসপাতালটি হস্তান্তরের কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু বছর পার হতে চললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ হাসপাতালের চিকিত্‌সক থেকে কর্মী সকলের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মউ অনুযায়ী হাসপাতালটির যাবতীয় আর্থিক দায়ভার নেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রকের। কিন্তু এক বছরে কানাকড়ি সাহায্যও মেলেনি সেখান থেকে। সঙ্গে ফরাক্কা ব্যারাজের হাতে থাকাকালীন ওষুধপত্রের দিক থেকে যেটুকু সুবিধা মিলত, এখন তাও বন্ধ। ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার সৌমিত্র হালদার নিজে স্বাক্ষর করেছিলেন হাসপাতাল হস্তান্তরের মউ চুক্তিতে। কিন্তু এখন সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলে তাঁর সাফ জবাব, “ফরাক্কা ব্যারাজ হাসপাতালের দায়িত্ব পুরোপুরি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রকের। তারাই বলতে পারবে হাসপাতালের বর্তমান পরিস্থিতির হাল।”

আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর না হলেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রক দুই মহিলা চিকিত্‌সককে চিফ মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে ওই হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন। তাঁদেরই এক জন নন্দিনী ভট্টাচার্য বলেন, “মূলত টীকাকরণ, পোলিও কর্মসূচির উপর আমরা কাজ করি। এখানে সে সবেরও প্রয়োজন নেই। হাসপাতাল আছে নামেই। মউ স্বাক্ষরিত হলেও এটির কোনও হস্তান্তর হয়েছে বলে আমার জানা নেই।”

বর্তমানে ৬ চিকিত্‌সক ও ১০ জন নার্স ওই হাসপাতালে রয়েছেন। ফার্মাসিস্ট-সহ অন্যান্য কর্মীর সংখ্যা ২৫। কিন্তু কার্যত কোনও কাজ নেই তাঁদের। ঝাঁ চকচকে মোজাইক করা পাশাপাশি দু’টি ভবনে বর্হিবিভাগ ও অন্তর্বিভাগ। বর্হিবিভাগের এক একটি ঘরে বসেন এক একজন চিকিত্‌সক। কিন্তু হাসপাতালে রোগীর দেখা নেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১০ দিনে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ২ জন রোগী। চিকিত্‌সা, ওষুধ না পেয়ে একদিন কাটিয়েই তাঁরা অন্যত্র চিকিত্‌সার জন্য চলে গিয়েছেন। বর্হিবিভাগে গড়ে জনা ৪০ রোগী আসেন বটে, কিন্তু তাঁদের জন্য না আছে ওষুধ না আছে রোগ নির্ণয়ের কোনও ব্যবস্থা। ফলে বর্হিবিভাগেও আর রোগী তেমন আসেন না বলে জানান চিকিত্‌সকেরা। অ্যাম্বুল্যান্স রাস্তায় নামে না।

ফরাক্কা ব্যারাজ শিল্পশহরটি মালদহ দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। তত্‌কালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়ে নতুন ভাবে ঘটা করে উদ্বোধনও করেছিলেন হাসপাতালের। এ বারেও ওই কেন্দ্রেরই কংগ্রেস সাংসদ তিনি। কিন্তু তার পরেও কেন ওই অবস্থা জানতে চেয়ে সাংসদকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও কোনও জবাব দেননি। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হকও। তিনি বলেন, “বহু আশা করে মউ স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রে কংগ্রেস না থাকায় কাজ থমকে রয়েছে।”

ফরাক্কা ব্যারাজ শহর তৃণমূলের সভাপতি সাহাজাদ হোসেন বলেন, “ভোটের আগে রাজনৈতিক চমক সৃষ্টি করতেই কংগ্রেস মউ-য়ের মোয়া ধরিয়ে দিয়েছিল মানুষকে। সবটাই ধাপ্পা। তথ্য জানার অধিকার আইনে হাসপাতালটির অবস্থা জানতে আবেদন করা হয়েছে। উত্তর পেলেই পথে নামব।”

সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়ক আবুল হাসনাত খান বলেন, “নামে শিল্পশহর হলেও ফরাক্কায় ভাল চিকিত্‌সার ব্যবস্থা নেই। ফরাক্কা ব্যারাজ হাসপাতালটির ভবনের আশপাশে প্রচুর জমি রয়েছে। দিল্লি থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিত্‌সক এসে হাসপাতালটি পরিদর্শনের পরে তাকে সুপার স্পেশ্যালিটি হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে একটি রিপোর্টও জমা দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।

কি ছিল সেই রিপোর্টে?

হাসপাতালের এক চিকিত্‌সক জানান, ২০১৩ সালের ১৪ এপ্রিল অজিত সিংহের নেতৃত্বে দিল্লি থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ৪ জন বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন। তাঁরা ৪ পাতার একটি রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে ৬০ শয্যার এই হাসপাতালে ২১ জন চিকিত্‌সক, ৩৩ জন নার্স-সহ প্রায় ১০০ জন কর্মী নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। সেই সঙ্গে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের জন্য ব্লাড ব্যাঙ্ক-সহ যাবতীয় উন্নত মানের চিকিত্‌সা সরঞ্জামের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান তাঁরা। এ ছাড়াও হাসপাতাল ক্যাম্পাসের জমিতে ভবন ও আবাসন

নির্মাণের কথাও বলা হয়। কিন্তু ‘কথা রাখেনি’ কেউই।

biman hazra farakka barrage hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy