Advertisement
E-Paper

চিকিৎসায় গাফিলতির নালিশ খারিজ

রোগীর তোলা অস্ত্রোপচারে গাফিলতির অভিযোগ খারিজ হয়ে গেল। কিন্তু, প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর না লেখা এবং রোগীকে ছুটি দেওয়ার সময় নার্সিংহোমের ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ অসম্পূর্ণ হওয়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আর্থিক জরিমানার মুখে পড়লেন সংশ্লিষ্ট শল্য চিকিৎসকও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:২৯

রোগীর তোলা অস্ত্রোপচারে গাফিলতির অভিযোগ খারিজ হয়ে গেল। কিন্তু, প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর না লেখা এবং রোগীকে ছুটি দেওয়ার সময় নার্সিংহোমের ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ অসম্পূর্ণ হওয়ায় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি আর্থিক জরিমানার মুখে পড়লেন সংশ্লিষ্ট শল্য চিকিৎসকও। প্রায় চার বছর ধরে চলতে থাকা চিকিৎসা গাফিলতির মামলায় বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়েছে বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। অভিযুক্ত শল্য চিকিসৎককে ১০ হাজার টাকা ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

বাঁকুড়ার জয়পুর থানার সলদা গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক তরুণকান্তি সরকার ২০১১ সালে শল্য চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় পাল ও বিষ্ণুপুরের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি তুলে বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, ২০০৯ সালে মলদ্বারের যন্ত্রণা নিয়ে তৎকালীন বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয়বাবুর ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়েছিলেন। মৃত্যুঞ্জয়বাবু বিষ্ণুপুরের একটি নার্সিংহোমে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন। তরুণবাবুর দাবি, অস্ত্রোপচারের পরে যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকায় চেন্নাইয়ে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ফের অস্ত্রোপচার করান তিনি। সেখানকার চিকিৎসকেরাই তাঁকে জানান, আগের ডাক্তার অস্ত্রোপচারে গোলমাল করেছিলেন। চেন্নাই থেকে ফেরার বছরখানেকের মধ্যেই ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন তরুণবাবু। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী শল্য চিকিৎসক কুণাল সাহার সংগঠন ‘পিপ্ল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’ তরুণবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে বিশেষ সহযোগিতা করে। গত ১৮ ডিসেম্বর বাঁকুড়ায় এসে তরুণবাবুর হয়ে অভিযুক্ত শল্য চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সওয়ালও করেছিলেন কুণালবাবু। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে নিয়ম রয়েছে, আবেদনকারীর হয়ে যে কেউ সওয়াল করতে পারেন। এই সুযোগটাকেই বার কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি।

যদিও প্রথম থেকেই শল্য চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয়বাবু চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। রায়দানের দিন অবশ্য মৃত্যুঞ্জয়বাবু বা তাঁর আইনজীবী কেউই আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। অভিযোগকারী তরুণবাবুর আইনজীবী জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “মৃত্যুঞ্জয়বাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অস্ত্রোপচারে গাফিলতির অভিযোগ খারিজ হয়ে গিয়েছে। তবে তাঁর প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর না লেখা, ছুটি দেওয়ার সময় ডিসচার্জ রিপোর্টে ডাক্তারের সই না থাকা এবং ওই রিপোর্টে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের ভুলত্রুটির জন্য আদালত ওই ডাক্তার ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে যথাক্রমে ১০ হাজার ও ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে।”

রায় শুনে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি যে চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি করিনি, এটাই প্রমাণ হল। তবে, ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে যে অসম্পূর্ণতা রয়েছে, সেগুলি নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের কাজ, ডাক্তারদের নয়।” তাঁর আরও ক্ষোভ, ওই রোগী প্রথম অস্ত্রোপচারের চার সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি নিজের সিদ্ধান্তে ফের একই জায়গায় অস্ত্রোপচার করানোতেই সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু, তার জন্য এই ভাবে চিকিৎসকদের অকারণে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলে চিকিৎসা করাটাই কঠিন হয়ে পড়বে। বস্তুত, এ দিন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়েও কার্যত একই কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, অভিযোগকারী দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের করিয়ে সমস্যায় পড়ার পরে আরও যে চিকিৎসকদের দেখিয়েছেন, তাঁরাও মৃত্যুঞ্জয়বাবুর গাফিলতির কথা বলেননি।

কুণালবাবু অবশ্য মনে করেন, এ ক্ষেত্রে চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। এ দিন ফোনে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এক জন রোগীকে ছুটি দেওয়ার সময় ডাক্তারের উচিত ভাল করে তাঁকে দেখে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। ফলে, চিকিৎসায় গাফিলতি নেই, এ কথা আমি অন্তত মানতে পারছি না। তবে, এক জন রোগীকে আমরা বিচার দিতে পারলাম, এটাই ভাল লাগছে।” তাঁর সংযোজন, “আমার সংস্থা দেশের সমস্ত প্রান্তের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চায়। আমি চাই, তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” আদালত থেকে বেরিয়ে তরুণবাবু বলেন, “কুণালবাবু আমার হয়ে সওয়াল করেছেন। তাঁর সংস্থা আগাগোড়া আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করেছে। তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”

bankura discharge certificate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy