Advertisement
E-Paper

চিকিৎসকের সহকারী সেজে ও টি-তে, ধৃত

তিনি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত নন। পেশায় অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম বিক্রির দোকানের কর্মী। অথচ চিকিৎসকের সহকারী সেজে সরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়মিত কাজ করতে দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। পরনে থাকত অ্যাপ্রন। তবু হাসপাতাল সুপার, অস্ত্রোপচারের ঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসার ও চিকিৎসকরা যেন তাঁকে দেখতেই পাননি। অবশেষে এক রোগিণীর পরিবারের কাছ থেকে অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম বাবদ মোটা টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০১:০৮
স্বাস্থ্যকর্মীদের পোশাক পরা অবস্থায় ধৃত সরঞ্জাম সরবারহকারী।

স্বাস্থ্যকর্মীদের পোশাক পরা অবস্থায় ধৃত সরঞ্জাম সরবারহকারী।

তিনি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত নন। পেশায় অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম বিক্রির দোকানের কর্মী। অথচ চিকিৎসকের সহকারী সেজে সরকারি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়মিত কাজ করতে দেখা যাচ্ছিল তাঁকে। পরনে থাকত অ্যাপ্রন। তবু হাসপাতাল সুপার, অস্ত্রোপচারের ঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসার ও চিকিৎসকরা যেন তাঁকে দেখতেই পাননি। অবশেষে এক রোগিণীর পরিবারের কাছ থেকে অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম বাবদ মোটা টাকা আদায়ের অভিযোগ ওঠায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এই ঘটনায় ধৃতের নাম নির্মল মণ্ডল। তিনি কলকাতার শিয়ালদহ এলাকার একটি অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম বিক্রির দোকানের কর্মী। এই ঘটনার কথা শুনে স্তম্ভিত ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “উদ্বেগজনক ঘটনা। সুপারকে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছি।”

কী করে এমন ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল? হাসপাতালের সুপার অমরেন্দ্র সরকার স্বীকার করেন, “ওই ব্যক্তি যে অস্ত্রোপচারের ঘরেও যান, তা জানতাম না। তবে কেউ এক জন যে চিকিৎসার সরঞ্জাম সরবরাহ করেন, তা জানতাম। ওই ব্যক্তিকে কেন অস্ত্রোপচারের ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের থেকে জানতে চাইব।” অভিযুক্ত নির্মলের দাবি, কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভাশিসরঞ্জন মিত্রের অনুমতি নিয়ে অস্ত্রোপচারের সময়ে ওটিতে হাজির থাকতেন। শুভাশিসবাবু বলেন, “আমি নির্মলবাবুকে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিলাম। অনেক সময়ে সরবরাহকারী সংস্থার প্রতিনিধি থাকলে সরঞ্জাম লাগানোর কাজে সুবিধা হয়।” বর্তমান সুপার অমরেন্দ্রবাবু অবশ্য বলেন, “এমন অনুমতি কেউ দিতে পারেন না।” অমরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘রোগীর পরিবারের তরফে অভিযোগ পেয়ে পুলিশে জানানো হয়েছে। চিকিৎসকের ভূমিকা ঠিক ছিল না। বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অর্থপেডিক বিভাগের প্রধান এবং অন্য চিকিৎসকদের নিয়ে এ ব্যাপারে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার পরে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সুপার রোগিণীর পরিবারের অভিযোগ পুলিশকে পাঠিয়েছেন।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, কোমরে চোট পেয়ে হাড় ভেঙে যাওয়ায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন কদমতলার বাসিন্দা ৬২ বছরের ভারতী দাস। এ দিন তাঁর অস্ত্রোপচারকে ঘিরেই ওই অভিযোগ উঠেছে। ভারতী দেবীর দাদা উদয়শঙ্করবাবু এ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসক জানান ফোন করলে লোক এসে সরঞ্জাম পৌঁছে দেবে। ১৬ হাজার টাকা নিয়ে অস্ত্রোপচারের ঘরের সামনে দাঁড়াতে বলেছিলেন। সেই মতো যোগাযোগ করলে এ দিন সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হন নির্মলবাবু। তিনি অ্যাপ্রন পরে ছিলেন। তাঁর কাছে উদয়বাবু পাকা রসিদ চাইলে তিনি ১৬ হাজার ৮০০ টাকা দাবি করেন। সেই মতো টাকা দিলে রসিদ দেন। রসিদে থাকা নম্বরে ফোন করে রোগীর লোকেরা জানতে পারেন যে সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে, তার দাম ৫ হাজার টাকা। এ দিন নির্মল মণ্ডলকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন রোগীর পরিবারের লোকেরা।

তৃণমূলের বিধায়ক রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “ওটিতে এই ভাবে বাইরের লোক ঢুকতে পারেন না। চিকিৎসকের ভূমিকা সুপারকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’ তা ছাড়া হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানেও হাড়ের অসুখের রোগীদের অস্ত্রোপচারের ব্যবহারের ওই সমস্ত সরঞ্জাম থাকার কথা। তা কেন নেই তা তিনি খোঁজ নেবেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য শঙ্কর মালাকার বলেছেন, “এ ধরনের ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলব।”

siliguri ot fraud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy