Advertisement
E-Paper

জেলা জুড়ে অমিল রক্ত, বিপাকে রোগী

কোথাও রক্ত সংগ্রহ করার ব্যাগ মিলছে না। আর তার জেরে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় রক্ত পাচ্ছেন না রোগীরা। রক্ত নিয়ে এই গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে গোটা জেলা জুড়েই। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম রক্ত আসায় সমস্যায় পড়েছে জেলার তিন মহকুমার প্রধান সরকারি হাসপাতাল। যার নিট ফল, ক্যানসার রোগী থেকে প্রসূতি রক্ত না পাওয়া বাধ্য হয়ে সকলকেই বর্ধমান বা কলকাতার হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০২:৫১
রামপুরহাট হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে ঝুলছে নোটিস।—নিজস্ব চিত্র।

রামপুরহাট হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে ঝুলছে নোটিস।—নিজস্ব চিত্র।

কোথাও রক্ত সংগ্রহ করার ব্যাগ মিলছে না। আর তার জেরে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় রক্ত পাচ্ছেন না রোগীরা। রক্ত নিয়ে এই গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে গোটা জেলা জুড়েই। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম রক্ত আসায় সমস্যায় পড়েছে জেলার তিন মহকুমার প্রধান সরকারি হাসপাতাল। যার নিট ফল, ক্যানসার রোগী থেকে প্রসূতি রক্ত না পাওয়া বাধ্য হয়ে সকলকেই বর্ধমান বা কলকাতার হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল বলেন, “রক্ত নিয়ে সামগ্রিক এক সমস্যা তৈরি হয়েছে। সমাধানের জন্য বর্ধমানের রিজিওনাল ব্লাড ট্রান্সমিশন সেন্টারে ব্যাগ সংগ্রহের জন্য লোকও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও কোনও ব্যাগ পাওয়া যায়নি।”

ইতিমধ্যেই ব্যাগ না থাকায় রক্ত সংগ্রহ করা যাবে না বলে জানিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কে নোটিস ঝুলিয়েছেন রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এই হাসপাতালে রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৫০০টি ব্যাগের ‘রিকুইজেশন’ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রায় কখনই পর্যাপ্ত ব্যাগ মেলে না। বেশির ভাগ সময়ই প্রয়োজনের তুলনায় রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ অনেক কম সংখ্যায় আসে। হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার অমিত হাজরা বলেন, “জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মাত্র ২০০ ব্যাগ এসেছিল। অথচ এই হাসপাতালে শুধু মাত্র ১৮২ জন্য থ্যালাসেমিয়া রোগীকেই রক্ত দিতে হয়। এর বাইরে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী রয়েছে। পাশাপাশি রক্তদান শিবিরের জন্যও ব্যাগ পাঠাতে হয়। ফলে বুঝতেই পারছেন, কেমন চাপে রয়েছি।” তাঁর দাবি, আরও ব্লাড ব্যাগ দেওয়ার জন্য গত ১৫ জুলাই থেকে একাধিক বার বর্ধমান রিজিওনাল ব্লাড ট্রান্সমিশন সেন্টারে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে জানানো হয় ব্লাড ব্যাগ আছে। কিন্তু গত মঙ্গলবার কর্মীরা সেখানে গিয়েও কোনও ব্যাগ পাননি। এই পরিস্থিতিতে যেকোনও দিন রোগীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন এই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন হাসপাতালের কর্মী ও চিকিত্‌সকেরা।

একই চিত্র জেলার অন্য দুই সরকারি হাসপাতালেও। সিউড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার অসিত বিশ্বাস বলেন, “মাত্র ১০০টি ব্যাগ মজুত আছে। দু’দিন কাজ চালানো যাবে। তার পরে কী হবে, জানি না!” আবার বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান, হাসপাতালে এই মুহূর্তে রক্তের ব্যাগের অভাব রয়েছে। ব্যাগ আনতে কর্মীরা বর্ধমানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে একটিও ব্যাগ পাওয়া যায়নি। পরে সিউড়ি থেকে ৫০টি ব্যাগ পাওয়া যায়। আপাতত তা দিয়েই কোনও মতে কাজ চালানো হচ্ছে। অন্য দিকে, রামপুরহাট হাসপাতালের সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল বলেন, “রক্তের ব্যাগ না থাকারয় সমস্যা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইরে থেকে ব্যাগ কেনার জন্য চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন থেকে অনুমতি মেলেনি। আশা করছি, দিন দু’য়েকের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

গত কয়েক দিন ধরে রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও রক্ত পাননি ক্যান্সার রোগী সেবিনা বিবি। পরিবারের লোকেরা তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। একই ভাবে সিজার বেবি জন্ম দেওয়ার পরে শরীরে রক্তের অভাব তৈরি হয়েছিল মুরারইয়ের বালিয়ারা গ্রামের প্রসূতি রোজিনা বিবির। রক্ত না পেয়ে পরিবারের লোকেরা তাঁকে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটেছেন। রক্ত নিয়ে জেলা জুড়েই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যিনি আশার বাণী শোনাতে পারতেন, সেই বর্ধমানে অবস্থিত রিজিওনাল ব্লাড ট্রান্সমিশন সেন্টারের ডিরেক্টর সোমা দত্ত কিন্তু জানিয়েছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন থেকেই রক্ত সংগ্রহের ব্যাগের জোগান আসেনি। তিনি বলেন, “জোগান না থাকলে কী করে জেলায় ব্যাগ পাঠাব!”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য ভবনের ব্লাড সেফটি বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর অরবিন্দ বালা জানান, চাহিদা মতোই জেলার হাসপাতালগুলিতে রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ পাঠানো হয়। ফলে ওই ব্যাগের অভাব হওয়ার কথা নয়। তবে, তাঁর পর্যবেক্ষণ, “সামনেই ১৫ অগস্ট। এই সময় এমনিতেই রক্তদান শিবিরের সংখ্যা বাড়ে। হয়তো সে কারণেই ব্যাগের অভাব দেখা দিয়ে থাকতে পারে। তিনি জানান, টেন্ডার ডেকে নতুন ব্লাড ব্যাগ কেনা হয়েছে। সেই ব্যাগ পরীক্ষা করানোর জন্য গত ১৫ জুলাই দিল্লিতেও পাঠানো হয়েছে। গত বুধবারই পরীক্ষার রিপোর্ট আসার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আজ রিপোর্ট পেলে, কালকেই জোগান পাঠানো হবে।”

scarcity of blood rampurhat hospital problems faced by patients apurba chattopadhay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy