Advertisement
E-Paper

জল থেকে পেটের রোগ টোটোপাড়ায়

পাহাড়তলিতে ছোট্ট গ্রাম। ডুয়ার্সে মাদারিহাট ব্লকে, ভুটান পাহাড়ের নীচে সেই গ্রামেই থাকেন দেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী টোটো সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। তাঁদের পানীয় জলের উৎস বলতে ঝর্নার জল। সেই জল পান করে বাসিন্দারা পেটের রোগে ভুগছেন। টোটোপাড়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পেটের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। টোটোপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক পরিতোষ সরকার বলেন, “দিনে চার থেকে পাঁচ জন জলবাহিত পেটের অসুখ নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসছেন।

নিলয় দাস

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০২:১৫
নিত্যচিত্র টোটোপাড়ার। —নিজস্ব চিত্র।

নিত্যচিত্র টোটোপাড়ার। —নিজস্ব চিত্র।

পাহাড়তলিতে ছোট্ট গ্রাম। ডুয়ার্সে মাদারিহাট ব্লকে, ভুটান পাহাড়ের নীচে সেই গ্রামেই থাকেন দেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী টোটো সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। তাঁদের পানীয় জলের উৎস বলতে ঝর্নার জল। সেই জল পান করে বাসিন্দারা পেটের রোগে ভুগছেন।

টোটোপাড়ার স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পেটের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। টোটোপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক পরিতোষ সরকার বলেন, “দিনে চার থেকে পাঁচ জন জলবাহিত পেটের অসুখ নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসছেন। চর্ম রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে।” এলাকায় পরিস্রুত জল সরবরাহ করার আবেদন নিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাসিন্দারা।

টোটোপাড়ায় জল আসত ছ’টি ঝর্নাধারা থেকে। তবে ক্রমাগত গাছের সংখ্যা কমায় সেই জলও কমেছে। একসময়ে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা এসে এলাকার গাছ কাটতে শুরু করেছিল। কয়েক হাজার গাছ তারা কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। আগের তুলনায় গাছের সংখ্যা কমতে থাকায় ঝর্ণাগুলি থেকেও প্রয়োজন মতো জল মিলছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। টোটোপাড়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দশ বছর আগে এলাকায় সহজে জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাইপ বসিয়ে জলাধার তৈরি করা হয়। ঝর্ণা থেকে পাইপের মাধ্যমে জলাধারে জল আনা হয়। সেখান থেকেই জল সংগ্রহ করেন টোটোপাড়ার মানুষ। জলের পরিমাণ কমতে থাকে বছরখানেক আগে ভুটান থেকে পাইপের মাধ্যমে জল আনার ব্যবস্থা হয়। তৈরি হয় আর একটি জলাধার। বাসিন্দাদের অভিযোগ ভুটান থেকে যে জল আসছে, তাতে প্রচুর পরিমাণে ডলোমাইটের গুড়ো মিশে রয়েছে। যার ফলে পেটের রোগের সংক্রমণ হচ্ছে বলে অভিযোগ, অন্য দিকে, বাকি দুই জলাধার ১০ বছরে একবার সাফ করা না হওয়ায়, শ্যাওলা থেকে শুরু করে ময়লার পুরু স্তর জমেছে। সে জলাধারের জল পান করা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যদিও, প্রশাসনের আধিকারিকরা জলের সমস্যার কথা জানেন না বলে দাবি করেন। মহকুমাশাসক নিখিল নির্মল বলেন, “ডলোমাইট উত্তোলন নিয়ে টোটোপাড়ায় জলের কী ধরনের সমস্যা রয়েছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব।” জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকেই জলাধার তৈরি হয়েছিল। দফতরের সহকারী বাস্তুকার বিকাশ রায় বলেন, “সমস্যাটি খোঁজ নিয়ে দেখব।”

এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য রূপচাঁদ টোটো বলেছেন, “নেতৃত্বের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত ভাবে জলের সমস্যার কথা জানিয়েছি। ওই ঝর্নার জল খেয়ে লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাসিন্দারা আর ঝর্ণার জল খেতে চাইছেন না। মাটি থেকে ৪৮০ ফুট নীচে জলস্তর রয়েছে। স্থানীয় স্কুলে তা বাসানো হয়েছে। কুপ খনন করে পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে পৌঁছে দেওয়ার আবেদন করেছি।” টোটোদের মোড়ল সুগ্রীব টোটোর অভিযোগ, “জলাধারগুলি পরিষ্কার করা হয় না। বহু জায়গা পাইপ পৌঁছয়নি। ঝর্নাগুলির জল কমে যাচ্ছে। সেগুলির সংরক্ষণ না করায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ বর্তমানে টোটো সংখ্যা ১৫৬৩ জন। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে জলের চাহিদা। দূষিত জলই তাঁরা এখন পান করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয় টোটো যুবক বুদ্ধিমান টোটো ও তাঁর স্ত্রী দেড় মাস ধরে চর্মরোগ ও পেটের অসুখের শিকার বলে জানিয়েছেন। বুদ্ধিমানের অভিযোগ, “একে ঘোলা জল, সেই সঙ্গে মরা পোকামাকড় ভেসে আসছে। জল দেখেই শিউরে উঠতে হচ্ছে।”

niloy das totopara diarrhoea drinking water spreading deseases
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy