Advertisement
E-Paper

টাকা অমিল, রাজ্য ইএসআই পরিষেবা সঙ্কটে

রাজ্যে ইএসআই স্কিমভুক্ত প্রায় ১৪ লক্ষ শ্রমিকের বিশেষ চিকিৎসা (স্পেশ্যালিটি ট্রিটমেন্ট) এবং ওষুধ পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মুখে। কারণ, কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি মতো ২৩ কোটি টাকা পাঠায়নি। টাকা না আসায় বিভিন্ন ওষুধ সংস্থার কাছে প্রায় বাকি পড়েছে ১৩ কোটি টাকা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৪:২৭

রাজ্যে ইএসআই স্কিমভুক্ত প্রায় ১৪ লক্ষ শ্রমিকের বিশেষ চিকিৎসা (স্পেশ্যালিটি ট্রিটমেন্ট) এবং ওষুধ পরিষেবা বন্ধ হওয়ার মুখে। কারণ, কেন্দ্র প্রতিশ্রুতি মতো ২৩ কোটি টাকা পাঠায়নি। টাকা না আসায় বিভিন্ন ওষুধ সংস্থার কাছে প্রায় বাকি পড়েছে ১৩ কোটি টাকা। বিশেষ চিকিৎসার ব্যাপারে রাজ্য ইএসআইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে বাকি রয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। আগামী সাত দিনের মধ্যে টাকা না-পেলে ইএসআইয়ের রেফার করা রোগীদের চিকিৎসা করা আর সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ওই সব বেসরকারি হাসপাতাল। একই ভাবে ওষুধ দেওয়া বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওষুধ সংস্থার কর্তারাও।

রাজ্য ইএসআই-এর অন্তর্গত হাসপাতালের সংখ্যা ১৩টি। এর মধ্যে তিনটি রয়েছে খাস কলকাতায়। ছ’টি রয়েছে কলকাতার কাছে হাওড়া, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। বাকি তিনটি রয়েছে জেলায়। এর মধ্যে একমাত্র কলকাতার মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার হয়। যা ১৪ লক্ষ শ্রমিকের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার জন্য কলকাতার কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ এবং শিলিগুড়ির দু’টি নার্সিংহোমের সঙ্গে চুক্তি করেছিল কেন্দ্রের ইএসআই কর্পোরেশন।

স্থির হয়, ১৩টি হাসপাতাল থেকে ওই তিনটি বেসরকারি জায়গায় বিশেষ চিকিৎসার জন্য রোগীদের রেফার করা হবে। পরিবর্তে ওই হাসপাতালগুলিকে টাকা দেওয়া হবে। এই টাকার ৯৯ শতাংশ দেবে কেন্দ্র আর এক ভাগ দেবে রাজ্য। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ২০১৩ সালের নভেম্বরের পর থেকে আর প্রয়োজনীয় টাকা পাঠায়নি কেন্দ্র। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজে বাকি টাকার পরিমাণ ৪ কোটি, শিলিগুড়ির দুই নার্সিংহোমের বকেয়া আরও ৪ কোটি। অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবায় বাকি পড়েছে প্রায় ২ কোটি।

শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, রাজ্যের ইএসআই হাসপাতালগুলির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতের টাকাও কেন্দ্র বহু দিন বকেয়া রেখেছিল। দীর্ঘ দিন অনুরোধ জানানোর পরে সম্প্রতি তারা ২৩ কোটি টাকা পাঠিয়েছে। কিন্তু বিশেষ চিকিৎসার জন্য চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালগুলির বকেয়া ও ওষুধের বকেয়া মেটানোর ২৩ কোটি এখনও দেয়নি। কবে দেবে তা-ও জানায়নি। তাঁর কথায়, “গত বছরের মাঝামাঝি আমরা দিল্লিকে জানিয়েছিলাম, রাজ্যে ইএসআই স্কিমভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ১২ লক্ষ থেকে বেড়ে প্রায় ১৪ লক্ষ হয়েছে। ফলে চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আমাদের রেফার করা রোগীর সংখ্যাও ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তাই দিল্লির টাকার পরিমাণও বাড়াতে হবে।”

মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “বিশেষ চিকিৎসা ও ওষুধ বাবদ দিল্লি ২০১৩-১৪ সালে ৫২ কোটি টাকা দিয়েছিল। আমরা হিসাব করে দেখাই, নথিভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ায় আরও ২৩ কোটি টাকা প্রয়োজন। কেন্দ্র রাজি-ও হয়। কিন্তু তার পর থেকে আজ নয়-কাল নয় চলছে। এই ভাবে চললে আর কয়েক দিনের মধ্যে বিশেষ চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা আর রোগী রেফার করতেও পারব না। টান পড়বে ওষুধে।”

চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে কী ধরনের বিশেষ চিকিৎসা পান ইএসআই স্কিমভুক্ত শ্রমিকেরা। শ্রম দফতর জানিয়েছে, বড় দুর্ঘটনায় শরীরে মারাত্মক আঘাত লাগলে, মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, কিডনি, হাড়ের জটিল অসুখে বা বিরল কোনও রোগের ক্ষেত্রে ওই হাসপাতালগুলিতে রেফার হয়। কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এই রেফার হওয়া রোগীর সংখ্যা মাসে ১২০-১৫০। কেপিসি-র চিফ মেডিক্যাল অফিসার জয়দীপ মিত্রের কথায়, “গত বছর জুনের পরে ইএসআই থেকে কোনও টাকা পাইনি। এই ভাবে কোটি-কোটি টাকা ধারে কী করে চিকিৎসা চালানো সম্ভব?”

কেন্দ্রের ইএসআই কর্পোরেশনের তরফে রাজ্যে নিযুক্ত সিনিয়ার মেডিক্যাল কমিশনার সমীর রায়চৌধুরী জানান, টাকা বাড়ানো নিয়ে ফাইল চালাচালিতে সময় লেগে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্র ২৭ ফেব্রুয়ারি কিছু তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল। রাজ্য তা পাঠিয়েছে ৪ মার্চ। ইএসআই কর্পোরেশনের ডিরেক্টর জেনারেল ওই তথ্য বিবেচনা করার পরে টাকা ছাড়া হতে পারে।

parijat bandyopadhyay esi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy