সামনেই দশম শ্রেণির পরীক্ষা। তাই ‘কনে দেখা আলো’র লাজবন্তী ওরফে সাইনা চট্টোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুটিং এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি ছাড়া অন্য কোনও প্রচারমূলক কাজে মন দেবে না। অভিনয় এবং পড়াশোনা— দুটো দিকই সমানতালে চালাতে সাইনার মা সংযুক্তা চট্টোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন ‘হোমস্কুলিং’-এর। যে কারণে, সমালোচিতও হতে হয়েছিল তাঁকে। কোন জায়গা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন সংযুক্তা?
‘হোমস্কুলিং’ বিষয়টির চল কলকাতায় যে এখনও খুব বেশি আছে, তা নয়। ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ ধারাবাহিকে যখন সাইনা সুযোগ পায়, তার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেন সংযুক্তা। তিনি বললেন, “কলকাতায় পরপর দুটো ইন্টারন্যাশনাল বোর্ডের স্কুলে সাইনাকে ভর্তি করিয়েছিলাম। ভবিষ্যতে কী করতে চায়, কোন বিষয় নিয়ে পড়তে চায়—সব ভাবনাই ওর মাথায় পরিষ্কার। মনবিজ্ঞান নিয়ে বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক সাইনা। তাই কেমব্রিজ বা লন্ডনের বোর্ডে প়ড়াশোনা করলে সেই পথ সহজ হবে, এটাই ভেবেছিলাম। আবার অভিনয়টাও ও করতে চেয়েছিল।”
কলকাতার স্কুলে পড়তে পড়তেই তার অভিনয়জীবনের শুরু। প্রথমে সাইনা এবং তার মা সংযুক্তা ভেবেছিলেন সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে যেতে পারবে। কিন্তু শুটিংয়ের চাপ বাড়ায় প্রায় প্রতিদিনই কামাই হতে থাকে। আগে থেকে সবটাই অবশ্য প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে রেখেছিলেন সংযুক্তা। তিনি বলেন, “তাতেও প্রতি দিন স্কুলে অনুপস্থিতির কারণ জানাতে হত। সেটা একটা সময় আমারও খারাপ লাগত। আর আমার মুম্বইয়ের বন্ধুরা তখন বুদ্ধি দিয়েছিল হোমস্কুলিংয়ের।” এক দিকে স্কুলে যেতে না পারার ভাবনা, অন্য দিকে শুটিং— সব মিলিয়ে সাইনার উপরেও চাপ পড়ছিল। এই পদ্ধতিতে খুব সুষ্ঠভাবে পড়াশোনা হয়, মত সংযুক্তার। প্রথাগত বিদ্যালয়ের থেকে খরচ অনেকটা বেশি, কিন্তু শান্ত ভাবে পড়াশোনা আর নিজের ভাললাগার দিকটাতেও নজর দেওয়া যায়।
সংযুক্তা বললেন, “বিদেশের পড়াশোনায় ‘এক্সট্রা কারিকুলার’ কার্যক্রমের উপরেও জোর দেওয়া হয়। তাই অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অভিনয়কেও আমরা ‘এক্সট্রা কারিকুলার’ কার্যক্রম হিসাবে দেখাতে পারব। আরও একটা বিষয় আমি দেখেছি। প্রথাগত বিদ্যালয়ে অনেক সময় ‘বডি শেমিং’ করা হয় ছাত্রছাত্রীদের। যা অনেক সময় শিশুমনে প্রভাব ফেলে। এ দিক থেকে হোমস্কুলিংয়ে অনেকটা লাভ।” এই মাধ্যমে পড়াশোনা করায় সাইনা কি খুশি? তার মা জানিয়েছেন, প্রথাগত ভাবে স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা মিস্ করে সাইনা।
এ প্রসঙ্গে পর্দার লাজবন্তীর কী বক্তব্য? ‘উলসি হল অক্সফোর্ড’ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী সাইনা। সে বলল, “জীবনে এক বার অন্তত প্রথাগত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা উচিত। দু’ধরনের অভিজ্ঞতা হওয়াই ভাল। এক দিকে বন্ধুদের পাওয়া যায়, নিজস্ব জগৎ তৈরি হয়। আবার অন্য দিকে তথাকথিত বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে অন্যের সঙ্গে তুলনা করার প্রবণতা তৈরি হয়। যা বাড়িতে প়়ড়াশোনা করলে হয় না। ‘বুলিং’ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ছোটখাটো বিষয়ে নজরদারি থেকে রেহাই পাওয়া যায়।” সংযুক্তা মনে করেন সাইনার জন্য ‘হোমস্কুলিং’-এর সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক। ফলে তাঁর মেয়ে জীবনের সব দিকটাই উপভোগ করতে পারছে। মাথার উপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে না।