Advertisement
E-Paper

ডিউটির সময় অসুস্থ ডাক্তার, তবু বিক্ষোভ

রোগী দেখতে দেখতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কর্তব্যরত চিকিতসক। টেবিলেই মাথা হেলিয়ে দিয়েছিলেন। আর তাতেই বাধল বিপত্তি! রোগীরা ভাবলেন চিকিৎসক নেশাগ্রস্ত। তারই জেরে ওই চিকিৎসককে আটকে রেখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রবিবার রাতের ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৩:০০

রোগী দেখতে দেখতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কর্তব্যরত চিকিতসক। টেবিলেই মাথা হেলিয়ে দিয়েছিলেন। আর তাতেই বাধল বিপত্তি! রোগীরা ভাবলেন চিকিৎসক নেশাগ্রস্ত। তারই জেরে ওই চিকিৎসককে আটকে রেখে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। বাঁকুড়ার সিমলাপাল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রবিবার রাতের ঘটনা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে এই বিক্ষোভ। খবর পেয়ে পুলিশ গেলেও বিক্ষোভ থামেনি। পরে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের (বিএমওএইচ) হস্তক্ষেপে জনতা শান্ত হয়। এই ঘটনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় ইনডোরে ডিউটিতে ছিলেন চিকিৎসক কমলাকান্ত মুদি। রোগী দেখার মধ্যেই সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সামনের টেবিলে মাথা হেলিয়ে বিশ্রামের চেষ্টা করেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শী এক নার্সের কথায়, “ডাক্তারবাবু অসুস্থবোধ করছেন বলে জানালেও রোগীদের ঠিকই দেখছিলেন। হঠাৎই শরীর বেশি খারাপ লাগায় টেবিলে মাথা হেলিয়ে দেন। সেই সময় এক রোগীর আত্মীয় চেম্বারে ঢুকে ডাক্তারবাবুকে ওই অবস্থায় দেখে বলেন, ‘ডিউটির মধ্যে কেন ঘুমোচ্ছেন?’ ডাক্তারবাবু আস্তে আস্তে নিজের অসুবিধার কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে গণ্ডগোল শুরু করে দেয়।” এর পরেই মদ খেয়ে ডাক্তারবাবু ডিউটি করছেন, এই অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে হইচই বাধান রোগী ও তাঁদের আথ্মীয়েরা। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, অসুস্থ ডাক্তারকে বেডে রেখে চিকিৎসা করা হয়। এরই মধ্যেই শতাধিক লোক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতরে ঢুকে পড়ে একই অভিযোগে দীর্ঘক্ষণ ইনডোরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভের জেরে চিকিৎসা পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়।

বিক্ষোভকারীদের তরফে অমিত মহাপাত্র, তপন মহাপাত্র অবশ্য সোমবারও দাবি করেন, “চিকিৎসকের আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। তা ছাড়া, তাঁর বদলি চিকিৎসকও সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া হয়নি।” সিমলাপালের বিএমওএইচ মহুয়া মহান্তি কিন্তু বলেন, “কমলাকান্তবাবু পেট ব্যথা ও গ্যাসট্রাইটিসে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই আর রোগী দেখার অবস্থায় ছিলেন না। সেই সময় আমি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে ছিলাম না। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি বদলি হিসাবে অন্য এক চিকিৎসককে ডিউটিতে পাঠাই। আধঘণ্টার মধ্যে আমিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে আসি। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ স্রেফ গুজব রটিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আমাদেরকে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখালেন।” বিএমওএইচের আরও দাবি, কমলাকান্তবাবু কোনও ভাবেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন না। তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, “অসুস্থতা ডাক্তারকে মদ্যপ আখ্যা দিয়ে কিছু লোক রবিবার যা করল, তাতে আমরা যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। নিরাপত্তার অভাববোধ করছি।”

এ দিনও অসুস্থ থাকায় কমলাকান্তবাবু এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, “যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়েই সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যে আমরা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তারই মধ্যে অসুস্থ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নিছক মিথ্যা অভিযোগ তুলে যেভাবে বিক্ষোভ দেখানো হল, তাতে কাজ করার ইচ্ছেটাই হারিয়ে যাচ্ছে। এমন হলে আমরা কাজ করব কোন ভরসায়?” সিমলাপালের বিডিও সৌম্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “ডিউটিরত অবস্থায় চিকিৎসক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলে শুনেছি। স্থানীয় মানুষজন ভুল বুঝে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমনটা না হলেই ভাল হত। তবে, সমস্যা মিটে গিয়েছে।”

simlapal primary health center on duty feeling sick doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy