Advertisement
E-Paper

ডাক্তারের অপেক্ষায় মৃত্যু কিশোরের

পাঁচ ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের যন্ত্রণায় ছটফট করল বছর পনেরোর এক কিশোর। হাসপাতালেরই অন্য একটি ওয়ার্ডে ছিলেন ডাক্তার। কিন্তু ‘কলবুক’ পাঠিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনবে কে? সেটা যার দায়িত্ব, সেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর দেখা মেলেনি। নার্সরাও কাকুতি-মিনতিতে কান দেননি। শেষে কিশোরটির বাবা-ই চিকিৎসক কোথায় আছেন, খোঁজ করে ছেলেকে পাঁজাকোলা করে তাঁর কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। বাঁচানো যায়নি তালড্যাংরার মান্ডি গ্রামের থ্যালাসেমিয়া-আক্রান্ত দীপঙ্কর রায়কে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০৩:০০
অপেক্ষার শেষ। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে সেই কিশোরের দেহ। ছবি: শুভ্র মিত্র

অপেক্ষার শেষ। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে সেই কিশোরের দেহ। ছবি: শুভ্র মিত্র

পাঁচ ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের যন্ত্রণায় ছটফট করল বছর পনেরোর এক কিশোর। হাসপাতালেরই অন্য একটি ওয়ার্ডে ছিলেন ডাক্তার। কিন্তু ‘কলবুক’ পাঠিয়ে ডাক্তারকে ডেকে আনবে কে? সেটা যার দায়িত্ব, সেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর দেখা মেলেনি। নার্সরাও কাকুতি-মিনতিতে কান দেননি। শেষে কিশোরটির বাবা-ই চিকিৎসক কোথায় আছেন, খোঁজ করে ছেলেকে পাঁজাকোলা করে তাঁর কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। বাঁচানো যায়নি তালড্যাংরার মান্ডি গ্রামের থ্যালাসেমিয়া-আক্রান্ত দীপঙ্কর রায়কে।

এই ঘটনায় বিষ্ণুপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। সুপারের কাছে মৃতের পরিবারের সঙ্গে বিক্ষোভ দেখান বিষ্ণুপুর থ্যালাসেমিক গার্জেন সোসাইটির সদস্যেরাও। মৃত কিশোরের বাবা গৌতম রায় মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) ও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির লিখিত অভিযোগ জানান।

সুপার সুভাষচন্দ্র সাহা বলেন, “কার গাফিলতি, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলা আধিকারিক সুরেশ দাস জানান, তিনি সুপারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, কলবুক পাঠানো হলেও এক কর্মীর গাফিলতিতে তা ওই চিকিৎসকের কাছে পৌঁছয়নি। কিন্তু কিশোরের অবস্থার অবনতির পরেও চিকিৎসক না আসায় কেউ তাঁকে ফোন করে বা ডেকে আনেননি কেন?

এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর মন্তব্য, “এমনটা হয়ে থাকলে অবশ্যই খারাপ হয়েছে। ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ নেব। কারও দোষ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গৌতমবাবু জানান, সাড়ে ছ’মাস বয়সে তাঁর ছেলে দীপঙ্করের থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়ে। রোগ যন্ত্রণা নিয়েই সে এ বার মাধ্যমিকে ৪১৪ নম্বর পেয়ে সাবড়াকোন হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। এ দিন সকাল থেকে দীপঙ্করের পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। গৌতমবাবু সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দীপঙ্করকে পুরুষ মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে চিকিৎসক আর এন তলাপাত্রকে দেখানোর জন্য কলবুক পাঠান। কিন্তু দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেই চিকিৎসকের দেখা মেলেনি।

গৌতমবাবুর অভিযোগ, “ছেলেটার কষ্ট চোখে দেখা যাচ্ছিল না। ডাক্তারবাবুকে ডেকে আনার জন্য বারবার নার্সদের গিয়ে বলছিলাম। কিন্তু ডাক্তারবাবু ঠিক সময়েই আসবেন জানিয়ে তাঁরা ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন।” শেষে তিনি নিজেই ছেলেকে কোলে নিয়ে হাজির করেন চিকিৎসকের কাছে।

ওই ডাক্তারবাবুর দাবি, “আমি সকাল ৭টা থেকে ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে রাউন্ডে ছিলাম। কলবুক আমার কাছে আসেনি। তাহলে আগেই ছেলেটাকে দেখতে পারতাম।” তিনি জানান, তাঁর কাছে যখন ছেলেটাকে আনা হয়েছিল, তখন সে মুমূর্ষু। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার দরকার ছিল। সে জন্য তিনি বাঁকুড়ায় স্থানান্তর করার চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই ছেলেটির মৃত্যু হয়।

bishnupur hospital dipankar roy medical negligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy