Advertisement
E-Paper

থ্যালাসেমিয়া রোধে এ বার স্কুলেই পাঠ সচেতনতার

খাস কলকাতায় থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার দু’দুটি নোডাল সেন্টার রয়েছে। সরকারি তরফে টিভি, রেডিও, পোস্টার, হোর্ডিংয়ে নানা প্রচারও চালানো হয়। তার পরেও বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা থেকে গিয়েছে স্রেফ কাগজে-কলমেই। আর তাই এ রাজ্যে থ্যালাসেমিয়ার মতো রক্তের জটিল রোগকে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে স্কুলপাঠ্যে থ্যালাসেমিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে উদোগী হল স্বাস্থ্য দফতর।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৭

খাস কলকাতায় থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার দু’দুটি নোডাল সেন্টার রয়েছে। সরকারি তরফে টিভি, রেডিও, পোস্টার, হোর্ডিংয়ে নানা প্রচারও চালানো হয়। তার পরেও বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টা থেকে গিয়েছে স্রেফ কাগজে-কলমেই। আর তাই এ রাজ্যে থ্যালাসেমিয়ার মতো রক্তের জটিল রোগকে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে স্কুলপাঠ্যে থ্যালাসেমিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে উদোগী হল স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই স্কুলশিক্ষা দফতরকে এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দফতরের কর্তারা।

রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সঠিক সংখ্যা এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নেই। সরকারি ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা নেন প্রায় আট হাজার রোগী। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি বলেই মনে করেন চিকিৎসকেরা। বেসরকারি সংস্থাগুলির মতে, রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংখ্যার বিচারে যা যথেষ্ট উদ্বেগের।

এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় এ রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল কমিটি তৈরি হয়েছে। রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে রক্ত, ওষুধ এবং শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত আয়রন বার করার প্রক্রিয়া সরকারি প্রতিষ্ঠানে সবটাই নিখরচায় করানোর সুযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, পশ্চিমবঙ্গই একমাত্র রাজ্য যেখানে থ্যালাসেমিয়া নিয়ন্ত্রণে সরকারি তরফে এই ধরনের কর্মসূচি রয়েছে। গুজরাতে একটি কর্মসূচি চলে, কিন্তু সেটা চালায় মূলত এক বেসরকারি সংস্থা।

স্কুলপাঠ্যে থ্যালাসেমিয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে তা এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আরও কিছুটা এগোতে সাহায্য করবে বলে মত চিকিৎসকদের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের আশা, স্কুল স্তরে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বিষয়টি চালু হয়ে যাবে। এর আগে কলেজ স্তরেও থ্যালাসেমিয়া নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কলেজে ভর্তি হয়ে ছ’মাসের মধ্যেই যাতে ছাত্রছাত্রীরা থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং করে নেন, সে ব্যাপারে সার্কুলার গিয়েছে।” এতে আর কিছু না হোক, এই পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তরুণ বয়স থেকেই একটা ধারণা তৈরি হবে বলে তিনি মনে করেন।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, “নবম শ্রেণির পাঠ্যক্রমে জেনেটিক্স পড়ানোর সময়ে থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য ছাত্রছাত্রীদের জানানোর কথা ভাবা হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া বাহক কাকে বলে, কী ভাবে থ্যালাসেমিয়া ছড়ায়, এ সম্পর্কে অল্প বয়স থেকে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হলে পরবর্তী সময়ে তারা নিজেরাও সচেতন থাকবে।”

এ রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার দু’টি নোডাল সেন্টার রয়েছে। একটি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে, অন্যটি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। এ ছাড়া সমস্ত জেলা হাসপাতালে এক জন করে থ্যালাসেমিয়া অফিসার থাকার কথা। এখনও পর্যন্ত সব জেলা হাসপাতালে এই ব্যবস্থা করা না গেলেও ধাপে ধাপে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।

থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। এমনই একটি সংগঠনের তরফে তাপস সেনগুপ্ত বলেন, “এটা আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি। রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাটা শুধু ভারী ভারী কথা বলে বোঝানো যায় না। আসল প্রয়োজনীয়তাটা যদি ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারে, তা হলে নিজেদের সুস্থ ভবিষ্যতের স্বার্থেই তারা এটা করবে।”

স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে এক জন থ্যালাসেমিয়া বাহক (কেরিয়ার) হলে তেমন সমস্যা নেই। কারণ সে ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের সন্তান সুস্থ জন্মানোর সম্ভাবনা, বাকি ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের কেরিয়ার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই যদি কেরিয়ার হন, তা হলে বিপদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। সেটা কী রকম? হেমাটোলজিস্ট আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, “সে ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তানের থ্যালাসেমিক হওয়ার আশঙ্কা। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হওয়ার ভয় থাকে। বাকি ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তান সুস্থ-স্বাভাবিক হওয়ার আশা রয়েছে। সেই ঝুঁকি না নিয়ে তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটাই জরুরি।”

কিন্তু যদি কোনও দম্পতির বিয়ের পরে জানা যায় যে তাঁরা দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তা হলে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের দু’মাসের মাথায় প্ল্যাসেন্টা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে গর্ভস্থ শিশুটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত কি না।

thalassemia soma mukhopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy