Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দুই হাসপাতালে রোগী-মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ

কয়েক ঘণ্টার তফাতে রবিবার রাতে হুগলির জেলা সদর হাসপাতাল-সহ দুই হাসপাতালে দুই রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল। প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ হল দু’টি হাসপাতালেই। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। দু’টি ক্ষেত্রেই তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি হয় কাপাসডাঙার শান্তিপল্লির বাসিন্দা, হুগলি উইমেনস্ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা যাদব (১৯)। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রাতে অর্পিতার অবস্থার অবনতি হলেও কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি। কর্তব্যরত নার্স ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই অর্পিতার অবস্থা আরও খারাপ হয়। রাত তিনটে নাগাদ সে মারা যায়।

চুঁচুড়ায় ইমামবাড়া হাসপাতালের গেটে বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ।

চুঁচুড়ায় ইমামবাড়া হাসপাতালের গেটে বিক্ষোভ। ছবি: তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ১০:১১
Share: Save:

কয়েক ঘণ্টার তফাতে রবিবার রাতে হুগলির জেলা সদর হাসপাতাল-সহ দুই হাসপাতালে দুই রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠল। প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ হল দু’টি হাসপাতালেই। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। দু’টি ক্ষেত্রেই তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রবিবার রাত আড়াইটে নাগাদ চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি হয় কাপাসডাঙার শান্তিপল্লির বাসিন্দা, হুগলি উইমেনস্ কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী অর্পিতা যাদব (১৯)। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রাতে অর্পিতার অবস্থার অবনতি হলেও কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি। কর্তব্যরত নার্স ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই অর্পিতার অবস্থা আরও খারাপ হয়। রাত তিনটে নাগাদ সে মারা যায়।

সোমবার সকালে মৃতের পরিবারের লোকজন এবং পড়শিরা হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে দেহ রেখে বিক্ষোভ দেখান। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। হাসপাতালের সুপার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে। মৃতের বাবা বাপি যাদব বলেন, ‘‘বমি-পায়খানার উপসর্গ নিয়ে মেয়েটা ভর্তি হয়েছিল। রাতে কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি। এমন ইঞ্জেকশন দিল, মেয়েটা একদম শেষ হয়ে গেল। সদর হাসপাতালের অবস্থা যদি এই হয় তা হলে মহকুমা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অবস্থা কী রকম!’’

সুপার সুভাষ মণ্ডলের দাবি, ‘‘ইঞ্জেকশন ঠিকই দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসায় গাফিলতি হয়নি। মৃত্যুর কারণ জানতে আমরা দেহটি ময়না-তদন্ত করতে বলেছিলাম। কিন্তু মৃতের পরিবার রাজি হয়নি। তা সত্ত্বেও আমরা সমস্ত ঘটনা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের জানাব। একটি কমিটি গঠন করে তদন্ত করা হবে। তাতে হাসপাতালের কারও ত্রুটি দেখা দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য ঘটনাটি চন্দননগর হাসপাতালের। জ্বর হওয়ায় চন্দননগরের নিচুপট্টির বাসিন্দা চন্দন সিংহকে (২৫) রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। চিকিৎসক দেখে প্রেসক্রিপশন করে দেন। সেই মতো ওষুধেরও ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ঘণ্টাখানেক পরেই চন্দনের শরীরে ব্যথা শুরু হয়। তা কমাতে একটি ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়। কিন্তু চন্দনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। কিন্তু তার আগেই রাত ১১টা নাগাদ চন্দন মারা যান। চন্দনের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ভর্তির পরে চন্দনের ব্যথা শুরু হলে চিকিৎসক ডাকা হলেও কেউ আসেননি। চন্দনের মা ব্রিজকুমারীদেবী নার্সকে ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তা হয়নি। চিকিৎসায় গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগে সোমবার সকাল থেকে চন্দনের পরিবারের লোকজন হাসপাতালে বিক্ষোভ শুরু করেন। হাসপাতালের সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগও জানান তাঁরা। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।

মৃতের বাবা বিজয় সিংহ বলেন, “ছেলে সামান্য জ্বর নিয়ে নিজেই হেঁটে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছিল। রাতে যখন দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন ভালই ছিল। গা-হাত-পায়ে ব্যথার পর এমন ইঞ্জেকশন দিল, ছেলেটার প্রাণই চলে গেল।’’

হাসপাতালের সুপার শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “মৃতের পরিবারের লোকজন চিকিৎসায় কোনও সাহায্য করেননি। চন্দনের আগে কোনও শারীরিক অসুবিধা ছিল কি না, তা নিয়েও কিছু জানাননি। দ্রুত তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। তবু অভিযোগ যখন হয়েছে, তদন্ত হচ্ছে। কোনও রকম ত্রুটি ধরা পড়লে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তীও জানিয়েছেন, দু’টি ক্ষেত্রেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। গাফিলতি প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chinsurah medical negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE