Advertisement
E-Paper

দু’দশক পরেও স্বাস্থ্যে বঞ্চিত পুজালি এলাকা

সম্প্রতি হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যান পুজালির বাসিন্দা বছর একত্রিশের আজিদা বিবি। এক্টোপিক প্রেগনেন্সির সমস্যা ছিল তাঁর। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তাঁকে ২৬ কিলোমিটার দূরে কলকাতায় আনা হচ্ছিল। একই ভাবে ১৯৮৮-তে বোন পিঙ্কির জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান আজিদার মা সুনীতা।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
রোগীর অপেক্ষায়।  —নিজস্ব চিত্র

রোগীর অপেক্ষায়। —নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা যান পুজালির বাসিন্দা বছর একত্রিশের আজিদা বিবি। এক্টোপিক প্রেগনেন্সির সমস্যা ছিল তাঁর। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তাঁকে ২৬ কিলোমিটার দূরে কলকাতায় আনা হচ্ছিল। একই ভাবে ১৯৮৮-তে বোন পিঙ্কির জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান আজিদার মা সুনীতা। অন্তঃসত্ত্বা সুনীতার হঠাৎ রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এলাকার হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে। কারণ, পুজালিতে তখন কোনও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ছিল না। মাঝে পেরিয়েছে ২৬ বছর। পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা হয়েছে পুজালি। মাত্র তিন বছর হল একটি মাতৃসদনও তৈরি হয়েছে। তবু ছবি বদলায়নি।

অভিযোগ, সামান্য জটিলতায় রোগী রেফার করে এই মাতৃসদন। যদিও মাতৃসদনের এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এখানে স্বাভাবিক প্রসব হয়। জটিলতা দেখলেই জানিয়ে দেওয়া হয়। মেডিসিন, শিশুরোগ, স্ত্রী-রোগ, শল্য, ইএনটি, চোখ, দাঁত, ফিজিওথেরাপি-সহ কয়েকটি বহির্বিভাগ রয়েছে সেখানে। মাতৃসদনের হিসেব অনুযায়ী, ২০১১-এর জুন থেকে শুরু হওয়া বহির্বিভাগের রোগীর ভিড় যথেষ্ট হলেও অন্তর্বিভাগে রোগী ভর্তি তুলনায় অনেক কম। গত বছর থেকে রোগী ভর্তিতেও ভাঁটার টান। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিনামূল্যে চিকিৎসা না হওয়া। এই পুর এলাকায় বেশিরভাগ বাসিন্দা দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। খড়িবেড়িয়া ব্লক হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার পাশাপাশি উপঢৌকনও পান। ফলে মাতৃসদনের বহির্বিভাগে এলেও চূড়ান্ত সময়ে ওখানেই যান।

অ্যাপেনডিক্স, গলব্লাডার, হার্নিয়ার মতো সাধারণ অস্ত্রোপচার থেকে কোনও দুর্ঘটনা বাসিন্দাদের ভরসা এমআর বাঙুর, চিত্তরঞ্জন সেবাসদন, চিত্তরঞ্জন শিশু সদন বা এসএসকেএম। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দূরত্বের কারণে জরুরি ক্ষেত্রে অনেক সময়ে মৃত্যুও ঘটে। দীর্ঘ দিন পুজালি পুরসভার চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রঞ্জন ভট্টার্চায। তাঁর কথায়, “কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলির চাপ কমাতে অবিলম্বে পার্শ্ববর্তী পুরসভাগুলির স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে।”

আট হাজার বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি এলাকা নিয়ে পুজালি পুরসভা তৈরি হয়েছিল ১৯৯৬-এ। পুরসভার হিসেবে, পুর এলাকার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এলাকায় রয়েছে ৬৮টি বস্তি। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই বস্তিবাসী। চিকিৎসায় সরকারি সাহায্য তাঁদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মানছেন চিকিৎসকেরাও। পুরপ্রধান ফজলুল হক বলেন, “পুজালি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত। তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুরসভা মাতৃসদন তৈরি করে। চিকিৎসক, নার্স-সহ অন্যান্য স্টাফদের বেতন বাবদ মাসে তিন লক্ষ টাকা খরচ করছে পুরসভা। তাতেও সে ভাবে রোগী হয় না। ছোট পুরসভা তাই অনুদানও মেলে না। ফলে চিকিৎসার পুরোটা বিনামূল্যে করা যায়নি।” বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকায় নামকাওয়াস্তে একটি

সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র আছে। সেখানে সপ্তাহে এক-দু’দিন ডাক্তার দেখেন। বজবজ পুর হাসপাতাল নিজস্ব রোগীর ভিড় সামলে পেরে ওঠে না। অতএব ভরসা সেই কলকাতা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি জানান, মাতৃসদনের ব্যাপারে পুরসভার সঙ্গে কথা

বলবেন। যদিও পুজালির স্বাস্থ্যপরিষেবার উন্নতির বিষয়ে তিনি কোনও আশ্বাস দেননি।


jayati raha pujali
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy