উদ্বেগে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জুড়েই এখন কার্যত এই ছবি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
জলপাইগুড়ি লাগোয়া কোচবিহারেও এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ বাড়ায় নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার প্রশাসনের তরফে জরুরি বৈঠক করে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। এ দিন ভিনরাজ্যের জীবাণু বিজ্ঞানীরাও কোচবিহারে গিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। পরে কোচবিহারে জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, গত পাঁচ মাসে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কোচবিহার জেলায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জন চলতি জুলাই মাসে মারা গিয়েছেন। মৃতদের মধ্যে একজনের দেহে জাপানি এনসেফেল্যাইটিসের জীবাণু মিলেছে। তিন জনের দেহে মেনিনজো এনসেফেল্যাইটিসের জীবাণু মিলেছে। অ্যাকিউট মেনিনজো এনসেফ্যালাইটিসে মারা গিয়েছেন একজন। বাকি ৮ জন এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে মারা গিয়েছেন। জেলায় এখনও পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৭৪৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫ জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে।
এই অবস্থায়, বৃহস্পতিবার একযোগে কোচবিহার জেলা পরিদর্শন করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিশেষ প্রতিনিধি দল এবং পুনের ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউটের জীবাণু বিজ্ঞানীরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নর্থ-ইস্ট ডিভিশনের সিনিয়র রিজিওন্যাল ডাইরেক্টর সত্যজিৎ সেনের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের ৬ জনের ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতাল, মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতাল ও জ্বর প্রবণ মাথাভাঙার কুর্শামারি গ্রাম সরোজমিনে ঘুরে দেখেন। কোচবিহারের জেলাশাসক ও স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গেও দুই দফায় বৈঠক করেন তাঁরা।
কোচবিহার হাসপাতালে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা। —নিজস্ব চিত্র।
কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে জেলাজুড়ে মশা মারতে স্প্রে শুরু হয়েছে। প্রচারপত্র বিলি করে বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়ানোর কাজও হচ্ছে। কোথাও জমা জল থাকলে কেরোসিন তেল ঢেলে দিলে মশার বংশবিস্তার অনেকটাই আটকানো সম্ভব। এনসেফ্যালাইটিস নিয়ে পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।” প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের তরফেও পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুয়োরের খাটাল নিয়েও সতর্ক করে দেন তাঁরা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারে গত মার্চ থেকে জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়। মার্চ মাসেই কোচবিহার পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাপস রাউত (৪৬) মেনিনজো এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এপ্রিলে একই রোগের জীবাণু নিয়ে মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা হামিদুল রহমান (৩৫) উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই মারা যান। অভিযোগ উঠেছে সেসময় বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
এদিন বিজেপির যুব মোর্চার পক্ষ থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রশাসন ও রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে কোচবিহার জেলা সদর এমজেএন হাসপাতালের সুপারকে তারা স্মারকলিপি দেন। প্রশাসন সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে , জ্বরে আক্রান্তদের ভর্তির জন্য জেলা হাসপাতালে ২০টি ও মহকুমা হাসপাতালগুলিতে ১০টি শয্যা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রতিষেধকের বন্দোবস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে। ময়নাগুড়িতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy