Advertisement
E-Paper

পুজোয় টানা ছুটি নয়, মন্ত্রীদের কড়া বার্তা চিকিৎসকদের

পুজোর দিনগুলোয় জেলার হাসপাতালগুলি চিকিৎসকের তেমন দেখা মেলে না। অধিকাংশই পুজোর ক’টা দিন টানা ছুটি কাটান। রোগীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ প্রায় প্রতি বছরই মেলে। অথচ পুজোর সময় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের রোটেশন পদ্ধতিতে কাজ করা দীর্ঘ দিনের প্রথা। ফি বছরই প্রশাসনের কর্তারা তা মেনে হাসপাতাল সচল রাখার কড়া বার্তা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয় না বলেই রোগীদের অভিযোগ। তখন হাসপাতাল চলে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভরসাতেই।

অরুণ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১৩
পাল্টাবে কবে? রোগী রয়েছেন, চিকিৎসক নেই। —ফাইল চিত্র

পাল্টাবে কবে? রোগী রয়েছেন, চিকিৎসক নেই। —ফাইল চিত্র

পুজোর দিনগুলোয় জেলার হাসপাতালগুলি চিকিৎসকের তেমন দেখা মেলে না। অধিকাংশই পুজোর ক’টা দিন টানা ছুটি কাটান। রোগীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ প্রায় প্রতি বছরই মেলে। অথচ পুজোর সময় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের রোটেশন পদ্ধতিতে কাজ করা দীর্ঘ দিনের প্রথা। ফি বছরই প্রশাসনের কর্তারা তা মেনে হাসপাতাল সচল রাখার কড়া বার্তা দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হয় না বলেই রোগীদের অভিযোগ। তখন হাসপাতাল চলে স্বাস্থ্যকর্মীদের ভরসাতেই। এ বার সেই ছবি পাল্টাতে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন জেলার দুই মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের প্রতি তাঁদের বার্তা, পুজোর দিনগুলোয় জেলার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কোনও ভাবেই ওই করুণ দৃশ্য বরদাস্ত করা হবে না।

রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী তথা জেলা রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতির পদে থাকা চন্দ্রনাথবাবু সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, “পুজোয় টানা ছুটি নেওয়া চলবে না। চিকিৎসকেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এক-দেড় দিন ছুটি নিতে পারেন। হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে হবে।” এ বিষয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী তথা রামপুরহাট হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “পুজোর সময়ে হাসপাতাল খালি করে চিকিৎসকেরা ছুটি উপভোগ করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁরা ওই সময়ে নিয়মিত ডিউটি করছেন কি না, তা-ও নজরে রাখা হবে।” এ নিয়ে রাজ্য থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা এসে না পৌঁছলেও দুই মন্ত্রীর বার্তা পৌঁছেছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডলের কাছে। তিনি অবশ্য বলছেন, “মন্ত্রী আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে, এটা নতুন কিছু নয়। বরাবরই পুজোর সময় রোটেশন ভিত্তিতে চিকিৎসকেরা ডিউটি করেন। এ বারও হবে। তা ছাড়া চিকিৎসকদের টানা ছুটি নেওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, তা-ও ঠিক নয়।”

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বীরভূমে এমনিতেই বহু বছর ধরে ১৫২টি চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। তার জেরে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান ক্রমশ নিম্নমুখী। সব থেকে হাল খারাপ গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির। বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চলছে কার্যত ফার্মাসিস্টের ভরসাতেই। একই অবস্থা স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রেও। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী না থাকাতে জেলার বেশ কিছু হাসপাতালের হাল খারাপ হয়ে উঠছে। অথচ নতুন মাল্টিসুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ঘোষণা হলেও আগেরগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রায় কিছুই করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যেমন, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সিউড়ি সদর হাসপাতালে এক জন মাত্র সাধারণ শল্য চিকিৎসক রয়েছেন। থাকার কথা তিন জনের। আবার দু’জনের বদলে অস্থি শল্য বিশেষজ্ঞও রয়েছেন এক জনই। শিশু বিভাগেও চার জনের পরিবর্তে রয়েছেন মাত্র দু’জন। ফলে ওই সব কেসের রোগীরা সদর হাসপাতালে গেলেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দিতে হয় বলে অভিযোগ। জেলার অন্য দুই মহকুমা হাসাপাতালেও রোগীদের একই অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়। এই অবস্থায় পুজোর সময়ে যদি উপস্থিত চিকিৎসকদের বেশির ভাগই টানা ছুটিতে চলে যান, তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। সে দিক থেকে মন্ত্রীদের এই কড়া অবস্থান যদি শেষপর্যন্ত বজায় থাকে, তাহলে সমস্যা খানিকটা কাটবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ দিকে, জেলার সরকারি হাসপাতালগুলির কোনও সুপারই পুজোর সময় চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ মানতে চাননি। রোটেশন পদ্ধতিতে আগের মতো এ বারও হাসপাতালগুলির চিকিৎসকেরা কাজ করবেন। সে ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেই তাঁদের দাবি। রামপুরহাট হাসপাতালের সুপার সুবোধকুমার মণ্ডল, সিউড়ি হাসপাতালের সুপার শোভন দে এবং বোলপুর হাসপাতালের সুপার অমিত মজুমদার, প্রত্যকেরই বক্তব্য, “পুজোর সময় হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যাতেই ডাক্তার থাকেন। আমরা রোস্টার মেনে কাজ করি। এটা কোনও নতুন কথা নয়। তাতে তেমন চাপ না পড়ারই কথা।” একই দাবি প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি দেবব্রত দাসেরও।

যদিও রোগী থেকে স্বাস্থ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত একাধিক অংশের অভিজ্ঞতা অবশ্য আলাদা। সিউড়ির স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার কর্ণধার রমণীমোহন ভট্টাচার্য বলেন, “রোগীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি পুজোর সময় হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসকের সংখ্যা একদম কমে যায়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগে কেবল মাত্র এক জন চিকিৎসককে কাজ করতে দেখা যায়। চিকিৎসক না পেয়ে বহু ক্ষেত্রেই রোগীদের বর্ধমান মেডিক্যালে ছুটতে হয়।” জেলায় পুজোর সময় ডাক্তারদের আকাল থাকে বলে জানিয়েছেন জেলা ওষুধ ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্পাদক জয়দীপ রায়ও। তিনি এবং সিউড়ির ওষুধ ব্যবসায়ী অতনু সেনগুপ্ত বলছেন, “পুজোর সময় বহু চিকিৎসকই ছুটিতে থাকায় চাপ তো পড়েই। আমাদের ব্যবসাও মার খায়।” এই পরিস্থিতিতে জেলার চিকিৎসকদের জন্য মন্ত্রীদের কড়া বার্তার টোটকা কাজে দেবে বলেই মনে করছেন জেলার বহু অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক। সিউড়ির এমনই দুই চিকিৎসক অজয় সেন এবং আর কে নাগের আশা, “এতে ভাল কাজ হবে। পুজোর সময় হাসপাতালে চিকিৎসকের আকাল মিটবে।”

(সহ-প্রতিবেদন: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়)

arun mukhopadhyay chandranath singh leave of doctors apurba chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy