প্ল্যাটফর্মে ওঠার সিড়িতে বসে রয়েছে সুনীল। হাফ প্যান্ট, ময়লা জামা পরা সুনীলের শীর্ণ দুটি পায়ে সংক্রমণের কয়েকটি ক্ষত। সেই ক্ষতস্থানের পাশে উড়ে বেড়াচ্ছে মাছি। ওই অবস্থা দেখে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আহ্বায়ক দ্রুত সুনীলকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। চিকিৎসকদের জন্য তৈরি চারটি অস্থায়ী চেম্বারে তখন লম্বা লাইন। ময়লা জামা-ফ্রকের শিশু কিশোরদের ভিড়। সকাল ১১টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত তিনশো জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেন চার চিকিৎসক। রবিবার শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনের শিশুসুরক্ষা কমিটির উদ্যোগে প্ল্যাটফর্মে থাকা অনাথ ভবঘুরে শিশু কিশোরদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হল।
জংশন স্টেশনে রেলের অফিসার, রেল পুলিশ, আরপিএফ, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি হয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিটি। রবিবারের শিবিরে চার জন চিকিৎসক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এক জন শিশু বিশেষজ্ঞ, এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও দুই জেনারেল ফিজিশিয়ান ছিলেন। কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে এ দিন ওষুধও দেওয়া হয়েছে। এ দিন যাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের রোগ, দুর্বলতা সহ অনান্য বিষয় নথিভুক্ত করে রাখা হবে। যাদের শরীরের বেশি মাত্রায় রোগ সংক্রমণ পাওয়া যাবে, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। শিশু সুরক্ষা কমিটির সদস্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনির উত্তরবঙ্গের কোঅর্ডিনেটর শেখর সাহা বলেন, “তিনশো জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষায় কী জানা গেল তা নিয়ে নথি তৈরি হবে। সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ হবে।”
বছরখানেক ধরে জংশন স্টেশনে ঘোরাফেরা করতে দেখে ১২ বছরের সৈয়দকে স্টেশন লাগোয়া স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ‘ড্রপিং সেন্টারে’ রাখা হয়েছে। এ দিন লাইনে সৈয়দের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল বিকাশ। মাস ছয়েক আগে কাটিহার স্টেশন থেকে চলে এসেছে সে। স্টেশনে এসে দাঁড়ানো ট্রেনে ঝাড়ু দিয়ে যাত্রীদের থেকে টাকা-পয়সা পায় বিকাশ। তেল না পেয়ে লালচে হয়ে যাওয়া কোকড়া চুল, খালি গা আর হাফ প্যান্ট পরা বিকাশের চর্মরোগ ধরা পড়েছে। বেশ কয়েকটি মলমও দেওয়া হয়েছে তাকে। অপুষ্টিতে আক্রান্ত কিশোরী মিনিকে দেওয়া হয়েছে ভিটামিন ট্যাবলেট। লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মধ্যবয়সী তপন দাস। তাঁর কথায়, “জংশন স্টেশনে ভিক্ষে করতে আসি। এ দিন পরীক্ষা হচ্ছে শুনে লাইন দিলাম। ওষুধও পেয়েছি। এমন শিবির মাঝেমধ্যে হলে ভালই হয়।” এ দিন সকালে শিবির শুরু হতেই ভিড় শুরু হয়ে যায়। প্ল্যাটফর্মে ঢোকার মুখেই প্যান্ডেল বেঁধে চার জন চিকিৎসকের অস্থায়ী চেম্বার করা হয়েছিল। সকালে শিলিগুড়ির বিধায়র চিকিৎসক রূদ্রনাথ ভট্টাচার্যও শিবিরে এসে কয়েকজনেরক স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে শেখরবাবু বলেন, “শুধু প্ল্যাটফর্মের শিশু কিশোররাই নয়, আশেপাশের কয়েকটি বস্তি এলাকার শিশুদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।”