Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে বসে চিকিৎসা করানোর নয়া পরিষেবা শহরে এ মাসেই

একান্নবর্তী পরিবার ভাঙতে ভাঙতে আয়তনে প্রায় পরমাণু। চাকরির টানে ছেলে-মেয়ে ঘরছাড়া। কিংবা ঘরে থাকলেও কর্পোরেট সংস্থার কাজের চাপে কাহিল। ফলে বয়স্ক বাবা-মায়ের বাতের ব্যথা হঠাৎ চাগাড় দিলে মস্ত বিপত্তি। মহা ঝঞ্ঝাট নিয়মিত প্রেসার-সুগার দেখানোর ক্ষেত্রেও।

গার্গী গুহঠাকুরতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:২০
Share: Save:

একান্নবর্তী পরিবার ভাঙতে ভাঙতে আয়তনে প্রায় পরমাণু। চাকরির টানে ছেলে-মেয়ে ঘরছাড়া। কিংবা ঘরে থাকলেও কর্পোরেট সংস্থার কাজের চাপে কাহিল। ফলে বয়স্ক বাবা-মায়ের বাতের ব্যথা হঠাৎ চাগাড় দিলে মস্ত বিপত্তি। মহা ঝঞ্ঝাট নিয়মিত প্রেসার-সুগার দেখানোর ক্ষেত্রেও। কাজ ফেলে ডাক্তারের চেম্বারে হত্যে দিয়ে বসে থাকার সময় কই?

এই সমস্যার দাওয়াই হিসেবে বিদেশে বহু দিনই জনপ্রিয় হোম হেলথ্কেয়ার। তা চালু হয়েছে এ দেশের বেশ কয়েকটি বড় শহরেও। প্রোটিয়া মেডিক্যাল-এর হাত ধরে এই পরিষেবা এ বার শুরু হতে চলেছে খাস কলকাতায়। সবকিছু ঠিকঠাক চললে, চলতি মাসেই।

হোম হেলথ্কেয়ার মানে বাড়িতে বসে চিকিৎসা। সর্দি-কাশি-জ্বরের মতো রোজকার অসুখ-বিসুখে কেউ হয়তো কাবু হয়ে পড়লেন। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে ডাক্তার বাড়িতেই আসবেন। সঙ্গে মিলবে প্রশিক্ষিত নার্স ও আয়ার পরিষেবা। বাতের ব্যথা, বার্ধ্যক্যের নানা ব্যথা-যন্ত্রণা ও শারীরিক সমস্যা, গর্ভবতী থাকাকালীন নিয়মিত চেক-আপ ইত্যাদির জন্যও প্রায়ই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু হোম হেলথ্কেয়ার সংস্থার কাছে আগে থেকে পছন্দসই প্যাকেজ বাছা থাকলে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর এসে যাবতীয় ‘চেক আপ’ তারাই করে যাবে। মিলবে ফিজিওথেরাপি ও নানা মেয়াদি অসুখের সেবা-শুশ্রূষা। এমনকী ইসিজি, এক্স-রে সমেত কিছু ছোটখাটো পরীক্ষাও সেরে নেওয়া যাবে বাড়িতে বসেই।

সংস্থার প্রধান কে গণেশের মতে, তাঁদের নিজেদের সমীক্ষা অনুযায়ী, পরিবারের প্রতি টান এবং বয়স্কদের প্রতি দায়িত্ববোধের নিরিখে কলকাতার স্থান বেশ উপরের দিকে। আর সেই কারণে এই ব্যবসার বাজার হিসেবেও তা বেশ সম্ভাবনাময়। তাঁর কথায়, “বয়স্ক বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক নিবিড়। বিশেষত অনাবাসীদের মধ্যে এর চাহিদা বেশ চড়া। নিজেদের অনুপস্থিতিতে বাবা-মায়ের দায়িত্ব পেশাদার সংস্থার হাতে দিতেই আগ্রহী তাঁরা।” এ কথা মাথায় রেখেই দিল্লি, মুম্বই, পুণে, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর পরে এ বার কলকাতায় পা রাখছেন তাঁরা। দাবি করছেন, পরিষেবা চালু হয়ে যাবে এ মাসেই।

সংশ্লিষ্ট মহলের মতে অবশ্য এই পরিষেবা শুধু বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে বাবা-মাকে রেখে বস্টনের উড়ান ধরা ছেলের জন্য নয়। কারণ, চাকরির চাপ সামলে ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ বা সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে দৌড়নো শহরের অধিকাংশ বাসিন্দার কাছেও মস্ত সমস্যা। বিশেষত যাঁদের বাড়িতে বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। কারণ, ডাক্তারের কাছে যেতে একলা চলাফেরায় এঁরা অনেকেই স্বচ্ছন্দ নন। ছেলেমেয়েদের পক্ষে অসুবিধা দিনভর বসে থাকাও। কয়েক বছর আগেও ডাক্তারকে ‘কল’ দিয়ে বাড়িতে আনার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু এখন হয় ডাক্তাররা আসতে চান না, নয়তো ফি হাঁকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর সেই কারণেই হোম হেলথ্কেয়ারের ব্যবসাকে আরও সম্ভাবনাময় মনে করছেন অনেকে।

এর বড় বাজার যে হাতের কাছেই রয়েছে, তার প্রমাণ পরিসংখ্যান। সারা বিশ্বেই এ ধরনের পরিষেবার বাজার বাড়ছে। ২০১৫ সালের মধ্যে তা ছাড়িয়ে যাবে ৩৭ হাজার কোটি ডলার। উপদেষ্টা সংস্থা ফ্রস্ট অ্যান্ড সুলিভানের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের মধ্যে ভারতে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য-পরিষেবা শিল্পের বহর দাঁড়াবে ১৬ হাজার কোটি ডলার। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার একটা বড় অংশ থাকবে হোম হেলথ্কেয়ারের দখলে।

তা ছাড়া, বিপুল চাহিদার তুলনায় এই পরিষেবার জোগান ভারতে এখনও সে ভাবে নেই বললেই চলে। কলকাতায় তো একেবারেই নেই। যে কারণে বছর চারেকের মধ্যেই দেশের অন্তত ৫০টি শহরে ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন প্রোটিয়ার দুই কর্ণধার কে গণেশ ও মীনা গণেশ।

সাফল্যের আকাশছোঁয়া সম্ভাবনার কারণে বিনিয়োগও আসতে শুরু করেছে হোম হেলথ্কেয়ারের ব্যবসায়। চেন্নাইয়ের ইন্ডিয়া হোম হেলথ্কেয়ার-এর ২৬% কিনেছে মার্কিন সংস্থা বায়াদা। ব্রিটিশ সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এই ব্যবসার পা রেখেছে ডাবর। উদ্যোগ-পুঁজি সংস্থার কাছ থেকে ৪৮ কোটি টাকা পেয়েছে প্রোটিয়া মেডিক্যাল-ও।

কে গণেশ এমনিতে ‘সিরিয়াল আন্ত্রেপ্রেনর’। একের পর এক লাভজনক সংস্থা তৈরি করে যিনি বিক্রি করে দেন অন্য সংস্থার হাতে। সে হিসেবে এটি তাঁর তৈরি ষষ্ঠ সংস্থা। এর ঠিক আগেই ২০১১ সালে ২১ কোটি ডলারেরও বেশিতে তাঁর সংস্থা টিউটর ভিস্টা-কে কিনে নিয়েছে মার্কিন মুলুক ও ব্রিটেনের শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত সংস্থা পিয়ার্সন। নতুন উদ্যোগে শুরু করা হোম হেলথ্কেয়ারের বাজার নিয়েও অবশ্য কোনও সংশয় নেই তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE