Advertisement
E-Paper

মশা থেকে দুই মারণ রোগ, মৃত্যু

একযোগে ডেঙ্গি ও এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল শিলিগুড়ি শহরের এক কিশোরের। অন্য দিকে, বারবার গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পরে অবশেষে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষার কিট এসে পৌঁছল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সঞ্জয় খাতি (১৪) নামে এক কিশোরের। তার বাড়ি শিলিগুড়ির গঙ্গানগর এলাকায়। দু’সপ্তাহ আগে তার শরীরে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ধরা পড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০২
এখনও নেই সচেতনতা। শিলিগুড়ি শহরে ঘুরছে শুয়োর। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

এখনও নেই সচেতনতা। শিলিগুড়ি শহরে ঘুরছে শুয়োর। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

একযোগে ডেঙ্গি ও এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল শিলিগুড়ি শহরের এক কিশোরের। অন্য দিকে, বারবার গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পরে অবশেষে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষার কিট এসে পৌঁছল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সঞ্জয় খাতি (১৪) নামে এক কিশোরের। তার বাড়ি শিলিগুড়ির গঙ্গানগর এলাকায়। দু’সপ্তাহ আগে তার শরীরে এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ধরা পড়ে। চিকিৎসা চলাকালীন দেখা যায় তার রক্তে ডেঙ্গির জীবাণুও রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বিজয় থাপা বলেন, “রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। শরীরে এনসেফেলাইটিস ও ডেঙ্গি দুটি রোগের উপসর্গ ছিল। তুলনায় মারাত্মক এনসেফেলাইটিসেই মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”

এই ঘটনার পরে সরকারি তরফে ডেঙ্গি ও এনসেফেলাইটিসে রোঝে ব্যর্থতার অভিযোগে সরব হয়েছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সঞ্জয়দের বাড়িতে গিয়েছিলেন। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “শহরে ডেঙ্গি নেই। এনসেফ্যালাইটিস নেই। এ সব বলে প্রচার চলছে। অথচ সঞ্জয়ের মতো ছেলেকে অকালে চলে যেতে হচ্ছে ওই দুই রোগের প্রকোপে। রোগ প্রতিরোধে কাজের কাজ ছাড়া সবই হচ্ছে শহরে।”

শিলিগুড়ি পুরসভার ৪-৯, ৩১, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে খবর পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেখান থেকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেও ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ। ওই ওয়ার্ডে এক তরুণীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে বাড়ির লোকজনদের দাবি। ওই ওয়ার্ডে বাড়ি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের। মন্ত্রীর দাবি, “ওই তরুণীর ডেঙ্গি হয়নি। এন এস ওয়ান পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েনি।”

শহরের সাফাই পরিষেবা নিয়ে এখনও ক্ষোভ রয়েছে ৪, ৫, ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডগুলিতে। পুরসভার তরফে ডেঙ্গি আক্রান্ত ১২ টি ওয়ার্ড ছাড়া অন্যান্য ওয়ার্ডে মশা মারতে তেল ছড়ানো বা সচেতনতা প্রচারের কাজ কিছুই হচ্ছে না বলে বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ শহরে ডেঙ্গি হচ্ছে। যে সমস্ত ওয়ার্ডে এখনও ডেঙ্গির সংক্রমণ হয়নি সেখানে আগাম ব্যবস্থা না নেওয়া হলে যে কোনও সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে শহরে মশার উপদ্রব বেড়েছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। অথচ মশা মারতে তেল স্প্রে করা বা ধোঁয়া ছড়ানোর হচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ। শহরে অবাধে শুয়োর ঘুরে বেড়াতেও দেখা যাচ্ছে।

এ দিনই ডেঙ্গি ও জাপানি এনসেফ্যালাইটিস নির্ণয়ের কিট পৌঁছেছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে। শুক্রবার কলকাতা থেকে ডেঙ্গির দু’টি কিট ও জাপানি এনসেফ্যালাইটিস চিহ্নিতকরণের দু’টি কিট মালদহে পৌঁছেছে। কিটের অভাবে ডেঙ্গি উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত রোগী ও তাঁদের পরিজনের রক্ত সংগ্রহ করা বন্ধ রেখেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা মহলে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল কংগ্রেসও। এ দিন কিট আসার পরে জ্বরে আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের রক্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এ দিন দুপুরে কালিয়াচকের নয়াবস্তি গ্রামের ৫৭ জনের রক্ত সংগ্রহ করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জ্বর নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় যে ২২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করা হবে বলে হাসপাতালের সুপার মহম্মদ আব্দুর রসিদ জানিয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, “নয়াবস্তিতে ডেঙ্গি উপসর্গ নিয়ে আক্রান্তদের পরিজনদের রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই রক্ত ম্যাক-অ্যালাইজা পরীক্ষার জন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।”

তবে রক্ত সংগ্রহের কাজ শুরু হলেও ফের ক্ষোভ জানিয়েছে কংগ্রেস। কালিয়াচকের মোথাবাড়ি বিধানসভার কংগ্রেস বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনের ক্ষোভ, “যেখানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই নয়াবস্তি গ্রামে জেলা স্বাস্থ্য দফতর এক দিন ক্যাম্প করে রক্ত সংগ্রহ করেছে। তার পর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ স্বাস্থ্য দফতরের কাউকে এলাকায় দেখা যায়নি।” তিনি বলেন, “কিটের অভাবে বহু রোগী রক্ত পরীক্ষা করতে না পেরে মোটা টাকা খরচ করে বাইরে নার্সিংহোম থেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে বাধ্য হয়েছেন। আমি জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের অনুরোধ করেছি যে সমস্ত রোগীরা বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন তাঁদের টাকা ফেরানো হোক।”

ডেঙ্গির চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগের মধ্যেই মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭২ ঘণ্টায় ১৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সুপার বলেন, “আড়াইশোর বেশি শিশুর চিকিৎসা চলছে। যে ১৩টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তার একটিতেও চিকিৎসকের কোনও গাফিলতি নেই। ওই ১৩টি শিশু খুবই খারাপ অবস্থায় জেলার বিভিন্ন ব্লক, পাশের জেলা ও ঝাড়খণ্ড থেকে ভর্তি হয়েছিল।” তিনি জানান, ৮টি শিশু কম ওজনে ও বাকি ৫টি শিশু শ্বাসকষ্টজনিত রোগে মারা গিয়েছে।

dengue encephalitis mosquito siliguri malda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy