Advertisement
E-Paper

যন্ত্র বিকল, ক্যানসার চিকিত্‌সা খোঁড়াচ্ছে পিজিতে

স্বাস্থ্য পরিষেবায় সাফল্যের দাবিকে কার্যত নস্যাত্‌ করে দিয়ে গত ছ’মাস রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে ধাক্কা খাচ্ছে ক্যানসার চিকিত্‌সা। তারও আগে দু’বছরেরও বেশি সময় এই বিভাগে কাজ চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কারণ একটাই, ক্যানসার রোগীদের রেডিয়েশন দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কোবাল্ট যন্ত্রটি অকেজো।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৮

স্বাস্থ্য পরিষেবায় সাফল্যের দাবিকে কার্যত নস্যাত্‌ করে দিয়ে গত ছ’মাস রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে ধাক্কা খাচ্ছে ক্যানসার চিকিত্‌সা। তারও আগে দু’বছরেরও বেশি সময় এই বিভাগে কাজ চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কারণ একটাই, ক্যানসার রোগীদের রেডিয়েশন দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কোবাল্ট যন্ত্রটি অকেজো।

২২ বছরের পুরনো যন্ত্রটি যে কাজ করার ক্ষমতা হারাচ্ছে, সে সম্পর্কে আগেই সতর্ক করেছিল ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র। এসএসকেএমের চিকিত্‌সকেরা জানান, যন্ত্রের আয়ু ফুরিয়ে আসার কথা দু’বছর ধরে ক্রমাগত তাঁরা স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু বিষয়টিকে ন্যূনতম গুরুত্বও দেওয়া হয়নি। ছ’মাস আগে যন্ত্রটি কাজ করা বন্ধ করে। তার পর থেকেই মুমূর্ষু রোগীদের অন্যত্র রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজেও ক্যানসার বিভাগে প্রচণ্ড ভিড়। যে রোগীর ক্যানসার ধরা পড়ছে প্রাথমিক পর্যায়ে, তাঁরই চিকিত্‌সা শুরু হতে হতে রোগ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে।

এই যন্ত্র না থাকায় এক দিকে যেমন হাজার হাজার ক্যানসার রোগীর চিকিত্‌সা ব্যাহত হচ্ছে, তেমনই এমসিআই রেজিস্ট্রেশন বাতিল হওয়ার ভয়ও থেকে যাচ্ছে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রছাত্রীরা এই কেন্দ্রে এমডি, রেডিওথেরাপিতে ডিএম এবং মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানের কোর্স করতে আসেন। স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে এর সুনাম যথেষ্টই। রয়েছে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতাও। বিভাগের শিক্ষক-চিকিত্‌সকেরা জানিয়েছেন, যন্ত্র খারাপ থাকায় রোগীদের চিকিত্‌সা বন্ধ। যে কেন্দ্রে হাতেকলমে রোগীদের চিকিত্‌সাই সম্ভব নয়, সেখানে স্নাতকোত্তর স্তরে পঠনপাঠনের ছাড়পত্র নিয়েও যে কোনও দিন প্রশ্ন তুলবে এমসিআই।

বছরে তিন থেকে চার হাজার নতুন ক্যানসার রোগী আসেন এসএসকেএমে। নতুন-পুরনো মিলিয়ে রোগীর সংখ্যা বছরে ১৩ থেকে ১৪ হাজার। বিভাগের এক চিকিত্‌সকের কথায়, “ক্যানসারের মতো এমন একটা রোগের চিকিত্‌সা নিয়ে যে এ ভাবে টালবাহানা চলতে পারে, তা না দেখলে ভাবা যায় না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁরা আগাগোড়া নির্বিকার থেকেছেন।”

সম্প্রতি এক ক্যানসার রোগীও এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ভবনে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। হবিবুর রহমান নামে ওই রোগীর অভিযোগ, তাঁর রোগ ধরা পড়ার পরে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি করলে সেরে যাবে। কেমোথেরাপি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু রেডিওথেরাপির জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছর। তত দিনে রোগ অনেকটাই ছড়িয়ে গিয়েছে। হবিবুরের বক্তব্য, “নিজের জীবনের বিনিময়ে আমাকে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার হালটা টের পেতে হচ্ছে।”

রেডিয়েশন চিকিত্‌সার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ‘সোর্স’ আনার জন্য ভাবা পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের ছাড়পত্র লাগে। নানা নিয়মকানুন মিটিয়ে সোর্স আনাটা যেহেতু বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, সেই কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগে থেকে প্রক্রিয়া শুরু করাটাই দস্তুর। বিভাগের চিকিত্‌সকদের অভিযোগ, চলতি বছরের গোড়াতেই যে সোর্স শেষ হতে চলেছে এবং যন্ত্রটাই যে বদলানো দরকার, সে কথা হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য ভবনে বারবার জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ কান দেননি। এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “যন্ত্র পুরোপুরি অকেজো হওয়ার আগেই আমরা ফাইল পাঠিয়েছি। আমাদের তরফে কোনও দেরি হয়নি। স্বাস্থ্য ভবন এখন আমাদের টেন্ডার ডাকতে বলেছে। সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি।” এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা চালু রাখার ক্ষেত্রে এই বিলম্ব কেন? প্রদীপবাবু বলেন, “আমাদের তরফে কোনও বিলম্ব হয়নি। আমরা ফাইল পাঠিয়েছি। নিজেরাও যোগাযোগ করেছি একাধিক বার।”

স্বাস্থ্য ভবনের তরফে দেরি হল কেন? দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে, সেটা ঠিক। এখন সকলেই দায়িত্ব নিয়ে টালবাহানা করছেন। নতুন যন্ত্র আগে কেনা হোক। তার পরে এই বিলম্বের কারণ খুঁজে বার করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে স্বাস্থ্য ভবনের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের এটাই কিন্তু একমাত্র নজির নয়। কোবাল্ট যন্ত্রের ক্ষেত্রে ক্যানসার আক্রান্ত কোষের পাশাপাশি অনেক সুস্থ কোষও রেডিয়েশনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লিনিয়র অ্যাক্সিলেরেটর যন্ত্রের মাধ্যমে রেডিয়েশন দিলে নির্দিষ্ট ভাবে শুধুমাত্র ক্যানসার আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলা সম্ভব হয়। রাজ্যের সব চেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালে সেই পরিষেবার সুযোগ কেন থাকবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন এখানকার চিকিত্‌সকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই যন্ত্র কেনার প্রস্তাব দিয়ে অন্তত পাঁচ বার স্বাস্থ্য ভবনে ফাইল পাঠানো হয়েছিল। পাঁচ বারই স্বাস্থ্য ভবন সেই ফাইল হারিয়ে ফেলেছে!

pg hospital soma mukhopadhyay cancer treatment health service disrupted
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy