Advertisement
E-Paper

রোগী ফেলে কেন যাওয়া, ডাক্তারকে শো-কজ

বহির্বিভাগে তখনও অপেক্ষায় জনা দশেক রোগী। ভিতরে বসে রোগী দেখছিলেন চিকিত্‌সক। হঠাত্‌ই রোগীদের অপেক্ষা করতে বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেন চিকিত্‌সক। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বহির্বিভাগের রোগীরা। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিছু রোগীর আত্মীয় চিকিত্‌সককে খুঁজতে গিয়েছিলেন হাসপাতালের আবাসনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫

বহির্বিভাগে তখনও অপেক্ষায় জনা দশেক রোগী। ভিতরে বসে রোগী দেখছিলেন চিকিত্‌সক। হঠাত্‌ই রোগীদের অপেক্ষা করতে বলে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেন চিকিত্‌সক। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বহির্বিভাগের রোগীরা।

শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিছু রোগীর আত্মীয় চিকিত্‌সককে খুঁজতে গিয়েছিলেন হাসপাতালের আবাসনে। কিন্তু, সেখানেও দেখা মেলেনি তাঁর। পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “কোনও মতেই এই ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেকেন্ড মেডিক্যাল অফিসার সৌমেন গরাই নামের ওই চিকিত্‌সকে শো-কজ করা হয়েছে। আপাতত অন্য এক জন চিকিত্‌সককে পাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।” সৌমেনবাবুর অবশ্য দাবি, টানা তিন দিন ধরে একা স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালানোর ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ায়, নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছেন তিনি।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকার কথা চার জন চিকিত্‌সকের। কিন্তু রয়েছেন তিন জন। যাঁদের মধ্যে এক জন কমিউনিটি হেলথ সার্ভিস অফিসার। গত তিন দিন ধরে ছুটিতে রয়েছেন পাড়ার বিএমওএইচ শিবরাম হাঁসদা। ফলে, হাসপাতালে মূলত দায়িত্বে ছিলেন সেকেন্ড এমও সৌমেনবাবু। স্থানীয় সূত্রের খবর,শনিবার সকালে বহির্বিভাগ খোলার পরে রোগী দেখতে শুরু করেছিলেন সৌমেনবাবু। ঘণ্টাখানেক রোগী দেখার পরে হঠাত্‌ই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও চিকিত্‌সক আসছেন না দেখে ক্ষুব্ধ রোগীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যদিও সৌমেনবাবুর দাবি, বহির্বিভাগের সমস্ত রোগী দেখার পরেই তিনি হাসপাতাল ছেড়েছিলেন। কয়েক মাস আগেই পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সময়মত অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জনতার ছোড়া পাথরে জখম হয়েছিলেন পাড়ার যুগ্ম-বিডিও। ফলে, শনিবার চিকিত্‌সক না থাকায় বিক্ষোভের খবর পাওয়া মাত্র হাসপাতালে চলে যায় পাড়া থানার পুলিশ। হাসপাতালে যান স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দীপক আচার্য। হাসপাতাল থেকেই ফোনে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘটনার বিষয়ে জানান দীপকবাবু।

স্থানীয় মানুষের প্রশ্ন, এ ভাবে রোগীদের ছেড়ে কি চলে যেতে পারেন কোনও চিকিত্‌সক, যেখানে শুধু বহির্বিভাগই নয়, শনিবার হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন জনা কুড়ি রোগী। তবে এই ঘটনাটিকে নিছকই বিছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখছেন না এলাকাবাসী। কর্মাধ্যক্ষ দীপকবাবুর দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই চিকিত্‌সক সঙ্কটে ভুগছে এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তিনি বলেন, “শনিবার যা ঘটেছে, তাতে শুধুমাত্র এক জন চিকিত্‌সকের ঘাড়ে সব দোষ চাপানো উচিত নয়। অনেক দিন ধরেই হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিত্‌সক নেই। অথচ চল্লিশ শয্যার এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করে গোটা পাড়া এবং পাশের পুরুলিয়া মফস্‌সল থানার বসিন্দাদের একাংশ। বিভিন্ন সময়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতররের কাছে পর্যাপ্ত চিকিত্‌সক পাঠানোর দাবি জানানো হলেও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি।”

বস্তুত, টানা তিন দিন একা হাসপাতালের দায়িত্ব সামলানোর প্রসঙ্গ তুলে সেকেন্ড এমও সৌমেনবাবুও এই প্রশ্ন তুলেছেন। রবিবার সকালে তিনি নিতুড়িয়ার পারবেলিয়াতে নিজের বাড়িতেই ছিলেন। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “তিন দিন ধরে একা হাসপাতালের দায়িত্ব সামলেছি। বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, এ ভাবে রোগীদের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। আমাকে জানানো হয়েছিল শনিবার বিএমওএইচ কাজে যোগ দেবেন। কিন্তু উনি আসেননি। টানা কাজ করার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।” তাঁর আরও দাবি, হাসপাতাল ছাড়ার আগে ফোনে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, গোটা জেলাতেই চিকিত্‌সকের সমস্যা রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “জেলার প্রায় সব হাসপাতালেই চিকিত্‌সকের অভাব রয়েছে। তার মধ্যেই পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু, পাড়ার সেকেন্ড এমও যে ভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গিয়েছিলেন, তা সমর্থনযোগ্য নয়।”

doctor medical negligence para health centre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy