Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল

লিফট বিকল, ভিতরে বন্দি মা ও নবজাতক

প্রসূতি বিভাগে যাওয়ার সময় মাঝপতেই আটকে গেল লিফ্ট। আর তার ভিতরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে আটকে রইলেন এক বধূ। দমকল কর্মীরা এসে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় যখন তাঁকে উদ্ধার করলেন, ততক্ষণে মা-শিশু, দু’জনেরই হাল খারাপ! চরম ভয় পেয়েছিলেন ওই বধূর সঙ্গেই আটকে থাকা তাঁর খুড়শ্বশুরও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০১:৫২
Share: Save:

প্রসূতি বিভাগে যাওয়ার সময় মাঝপতেই আটকে গেল লিফ্ট। আর তার ভিতরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে আটকে রইলেন এক বধূ। দমকল কর্মীরা এসে বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টায় যখন তাঁকে উদ্ধার করলেন, ততক্ষণে মা-শিশু, দু’জনেরই হাল খারাপ! চরম ভয় পেয়েছিলেন ওই বধূর সঙ্গেই আটকে থাকা তাঁর খুড়শ্বশুরও।

রবিবার বিকেলে পুরুলিয়ার সদর হাসপাতালের ওই ঘটনায় পূর্ত দফতরের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ, সম্প্রতি হাসপাতালের লিফটগুলিতে সংস্কারের কাজ হয়েছে। এবং সেই কাজের দায়িত্বে ছিল পূর্ত দফতরই। কেন মেন হল, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ওই দফতরের কর্তারা।

রবিবার বিকেলে পুরুলিয়া মফস্সল থানার সোনাইজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মুলুকচাঁদ মাহাতো তাঁর ভাইপোর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। মুলুকচাঁদের কথায়, “আমার ভাইপোর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা ছিল। রবিবার বিকেলে বাড়িতেই সন্তান প্রসব হয়ে যায়। ওর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বাচ্চাটিও অসুস্থ ছিল। তাই তড়িঘড়ি বিকেল ৪টে নাগাদ মা-শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসক আমাদের প্রসূতি বিভাগে যেতে বলেন।” প্রসূতি বিভাগটি হাসপাতালের দোতলায়। তিনি ভাইপোর স্ত্রী ও তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে লিফটের সামনে যান। তখন কেউ কাছাকাছি ছিলেন না। একজন বলেন, তিনিই লিফট চালাচ্ছেন।

কিছুটা উঠেই একটা শব্দ করে লিফট দাঁড়িয়ে পড়ে!

মুলুকচাঁদ বলেন, “সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। যে ছেলেটি লিফট চালাচ্ছিল, সে একবার এই স্যুইচ টিপছে, আর একবার অন্য স্যুইচ। কিন্তু, লিফট একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। এ দিকে আমার ভাইপোর স্ত্রীর রক্তক্ষরণ হয়েই যাচ্ছে। বাচ্চাটাও নেতিয়ে পড়েছে। আমার যে কী অবস্থা হচ্ছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না।” ঘটনাটি দেখে বাইরে থেকে লোকজন চেঁচামেচি জুড়ে দেন। ভিতর থেকে মুলুকচাঁদবাবুও সাহায্যের জন্য আপ্রাণ চেঁচিয়ে যাচ্ছিলেন। উপায়ান্তর না দেখে হাসপাতাল থেকে খবর দেওয়া হয় দমকল বিভাগে। দমকলের কর্মীরা দোতলা থেকে দড়ির ঝুলিয়ে লিফটের ছাদের উপরে নেমে লিফটের গেট খুলে চার জনকে উদ্ধার।

ততক্ষণে কেটে গিয়েছে পাক্কা সওয়া এক ঘণ্টা!

মুলুকচাঁদবাবু জানান, নবজাতক এখন সুস্থ থাকলেও তার মা বেশ অসুস্থ। তাঁকে রক্ত দিতে হচ্ছে। খোদ সদর হাসপাতালে এমন ঘটনায় দৃশ্যতই অস্বস্তিতে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন স্বীকার করেন, রোগিণী সওয়া এক ঘণ্টা লিফটের ভিতরে মাঝপথে আটকা পড়েছিলেন। তাঁর কথায়, “আরও আশঙ্কাজনক অবস্থায় যদি কোনও রোগী থাকতেন, তাহলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারত।” লিফটে আটকে পড়ার ঘটনা এই হাসপাতালে আগেও দু-একবার ঘটেছে। তবে, তা খুবই অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু, রবিবার দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এর পুরো দায় চাপিয়েছেন পূর্ত দফতরের ঘাড়ে। হাসপাতাল সুপার নিজেই জানিয়েছেন, কিছুদিন আগেই লিফটগুলিতে সংস্কারের কাজ হয়েছে। কিন্তু, কাজের পরেও যদি এ ভাবে ওঠানামার পথে লিফট বিকল হয়ে পড়ে, কেমন কাজ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-পরিজন।

পূর্ত দফতরের (বিদ্যুৎ বিভাগ) এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুকুমার বিশ্বাস বলেন, “এটা সত্যি যে হাসপাতালে ও রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যে সংস্থা লিফট চালনার দায়িত্বে রয়েছে, তাদের কোনও লোক ঘটনার সময় ছিল না। অন্য কেউ লিফট নিয়ে উপরে উঠছিলেন। সে সময় কোনও বিপত্তি হয়ে থাকতে পারে।” কিন্তু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তো সংস্কারের কাজের মান নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন? সুকুমারবাবুর বক্তব্য, “অনেক দিনের পুরনো লিফট। কী হয়েছিল, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। পাশাপাশি লিফট চালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।”

গোটা ঘটনায় ক্ষুদ্ধ জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমাকে এই ঘটনা জানানো পর্যন্ত হয়নি! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পূর্ত দফতর, কেউই দায় এড়াতে পারেন না। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে হবে, কার গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে। আমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট চাইব।” আর মুলুকচাঁদবাবু বলছেন, “এ ভাবে যেন আর কাউকে আটকে থাকতে না হয়। ওই সময়টা আমরা যে কী আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছি, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমি নিজে ব্লাড প্রেশারের রোগী। ওই অভিজ্ঞতার পরে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia metarnity ward lift
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE