Advertisement
০২ মে ২০২৪

শহরেই ভ্রূণ প্রতিস্থাপন, ভূমিষ্ঠ নলজাতক

শহরে নলজাতক শিশুর জন্ম আগেও হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শিশুর ভ্রূণ প্রতিস্থাপন হয়েছিল অন্যত্র। মেদিনীপুরে শুধু শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। এ বার ভ্রূণ প্রতিস্থাপন থেকে নলজাতক শিশুর জন্ম ধাপে ধাপে সব প্রক্রিয়াই হল জেলার সদর শহরে। গত ১৭ জুলাই এই নলজাতক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। মেয়ে পেয়ে খুশি সাঁকরাইলের বহড়াদাড়ির বাসিন্দা পেশায় কৃষিজীবী সৌমেন দত্ত ও তাঁর স্ত্রী অপর্ণাদেবী।

মা-বাবা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে নলজাতক শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র।

মা-বাবা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে নলজাতক শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

শহরে নলজাতক শিশুর জন্ম আগেও হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে শিশুর ভ্রূণ প্রতিস্থাপন হয়েছিল অন্যত্র। মেদিনীপুরে শুধু শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। এ বার ভ্রূণ প্রতিস্থাপন থেকে নলজাতক শিশুর জন্ম ধাপে ধাপে সব প্রক্রিয়াই হল জেলার সদর শহরে।

গত ১৭ জুলাই এই নলজাতক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। মেয়ে পেয়ে খুশি সাঁকরাইলের বহড়াদাড়ির বাসিন্দা পেশায় কৃষিজীবী সৌমেন দত্ত ও তাঁর স্ত্রী অপর্ণাদেবী। অপর্ণাদেবীর কথায়, “চিকিৎসকদের ধন্যবাদ। আমরা ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।”

যে চিকিৎসকের হাত ধরে নলজাতক কন্যাসন্তানটি পৃথিবীর আলো দেখেছে, সেই স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ কাঞ্চনকুমার ধাড়াও এই সাফল্যে তৃপ্ত। তাঁর কথায়, “এই প্রথম শহরে কোনও নলজাতক শিশুর জন্ম হল, যার প্রতিস্থাপনও শহরেই হয়েছে। ওই দম্পতির মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আমরা সকলেই খুশি।” জন্মের পর ওই নবজাতকের চিকিৎসা করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সন্ধ্যা মণ্ডল ধাড়া। সন্ধ্যাদেবীর কথায়, “ওই দম্পতি গত সাত বছর ধরে বন্ধ্যত্বের যন্ত্রণা ভোগ করছিলেন। ওঁদের কোলে সন্তান দিতে পেরে সত্যি ভাল লাগছে।”

বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্তরণের হাইওয়ে ধরে এগোচ্ছে শহর মেদিনীপুর। চিকিৎসা ক্ষেত্রেই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? এই ভাবনা থেকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মেদিনীপুর শহরের রবীন্দ্রনগরে নলজাতক শিশুর একটি বিশেষ কেন্দ্র গড়ে তোলেন চিকিৎসক কাঞ্চনবাবু। তিনি জানালেন, বন্ধ্যত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নলজাতক শিশু। এই প্রক্রিয়ায় মায়ের শরীর থেকে ডিম্বাণু বাইরে নিয়ে আসা হয় এবং বাবার শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে ল্যাবরেটরিতে ভ্রূণ সৃষ্টি করা হয়। এই ভ্রূণ মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। যে সব দম্পতির শারীরিক সমস্যার জন্য শরীরে ফার্টিলাইজেশন হয় না, নলজাতক পদ্ধতিতে তাঁদের সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ১৯৭৮ সালের ২৫ জুলাই ইংল্যান্ডের এক ক্লিনিকে নলজাতক শিশু জন্মের উপায় আবিষ্কার হয়েছিল। এ জন্য জীববিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন রবার্ট এডওয়ার্ড। ওই একই সময়ে কলকাতায় চিকিৎসক সুভাষ মুখোপাধ্যায় নলজাতক শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন। তবে বিভিন্ন কারণে তা তখন স্বীকৃতি পায়নি।

বন্ধ্যত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসক কাঞ্চনবাবুর কাছে এসেছিলেন সৌমেন ও অপর্ণা দত্ত। বহু চেষ্টার পরে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে অপর্ণাদেবীর গর্ভে নলজাতক শিশুর প্রতিস্থাপন করা হয়। ৭ মাসের মাথায় রক্তস্রাব শুরু হওয়ায় অপর্ণাদেবীকে মেদিনীপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৭ জুলাই অস্ত্রোপচারে মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। শিশুটির ওজন ছিল এক কিলোগ্রাম। প্রাথমিক ভাবে ওজন কিছুটা কম হলেও শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।

চিকিৎসক কাঞ্চনবাবু জানালেন, এর আগে মেদিনীপুরের কোনও দম্পতির নলজাতক শিশু হলে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ার জন্য কলকাতায় ছুটতে হত। এখন থেকে শহরে গোটা প্রক্রিয়াটাই সম্ভব। এতে খরচও হবে কম। কাঞ্চনবাবুর চিকিৎসা কেন্দ্রে আরও চার জন মহিলার গর্ভে নলজাতক শিশুর ভ্রূণ ইতিমধ্যেই প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীর আলো দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সেই সব শিশুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE