Advertisement
০২ মে ২০২৪

স্বামীর ভাঙা দাঁতটা দেখেই ডুকরে উঠলেন আরবিনা

ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবু নিখোঁজ স্বামীর হদিস পেতে ছবি হাতে ট্রেনে কলকাতা চলে এসেছিলেন উলুবেড়িয়ার পাড়াগেঁয়ে তরুণী। তিনি আরবিনা বিবি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেলে নিহত কোরপান শা-র স্ত্রী। সঙ্গী ছিলেন আরবিনার মা রিজিয়া বিবিও। কিন্তু শিয়ালদহের কাছের হাসপাতালটার কী নাম, তাঁরা ভাল ভাবে বলতে পারেননি কাউকে। ফলে, জিআরপি, শিয়ালদহ কোর্ট-চত্বর সর্বত্র হন্যে হয়ে ঘুরেও ফিরে আসতে হয় খালি হাতে।

শোকস্তব্ধ। নিহত কোরপান শা-র পরিবার। ছবি: সুব্রত জানা

শোকস্তব্ধ। নিহত কোরপান শা-র পরিবার। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৮
Share: Save:

ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তবু নিখোঁজ স্বামীর হদিস পেতে ছবি হাতে ট্রেনে কলকাতা চলে এসেছিলেন উলুবেড়িয়ার পাড়াগেঁয়ে তরুণী।

তিনি আরবিনা বিবি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হস্টেলে নিহত কোরপান শা-র স্ত্রী। সঙ্গী ছিলেন আরবিনার মা রিজিয়া বিবিও। কিন্তু শিয়ালদহের কাছের হাসপাতালটার কী নাম, তাঁরা ভাল ভাবে বলতে পারেননি কাউকে। ফলে, জিআরপি, শিয়ালদহ কোর্ট-চত্বর সর্বত্র হন্যে হয়ে ঘুরেও ফিরে আসতে হয় খালি হাতে। সোমবারটা এ ভাবেই কেটেছিল আরবিনার।

ওই রাতেই টিভি-র খবরে স্বামীর মুখটা দেখে অবশ্য কী ঘটেছে, সে বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যান ওই মহিলা। টিভি-র ছবিতে স্বামীর উপরের পাটির ভাঙা দাঁতটা দেখেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন। এনআরএসের হস্টেলে গণপিটুনিতে নিহত কোরপানকে শনাক্ত করতে এর পরে মঙ্গলবার কলকাতায় এসেছিলেন আরবিনার দেওর রওশন শা। বিকেলের দিকে মর্গে দাদার দেহ চিহ্নিত করেন তিনি-ই। এ দিন রাতেই দেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কোরপানের বাবা মারা গিয়েছেন বছর চারেক আগেই। ঠিক দিন কুড়ি আগে সিআইপিটি কলেজের কাছে ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান কোরপানের মা। তার পর-পরই যে বাড়িতে এ ভাবে ফের শোকের ছায়া নেমে আসবে, তা কেউই আঁচ করতে পারেননি। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-পড়শিরা বলছিলেন, জরির কাজ করতে আগে মুম্বইয়ে গিয়েছিলেন কোরপান। ২০১১ সালে ফেরার পরেই শুরু হয় পারিবারিক বিপর্যয়। একটি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মাথায় চোট পাওয়ার পরেই পাল্টে যায় কোরপানের জীবন।

পারিবারিক সূত্রের খবর, এর পরেই মাথার অসুখের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও ডাক্তার দেখানো হতো উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল বা উলুবেড়িয়ার নার্সিংহোমেও। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে টানাটানির সংসারে সেই চিকিৎসাও থমকে যায় কিছু দিনের মধ্যে। কোরপান-আরবিনা ছোলা ও মটর ভেজে পাড়ায় বিক্রি করে দিন গুজরান করতেন। মাঝেমধ্যে ভিক্ষাও করতেন কোরপান।

আরবিনার কথায়, “মাথার অসুখেই মানুষটা মাঝেমধ্যে দিন দু’-তিনের জন্য উধাও হয়ে যেত। আবার ফিরেও আসত। আমাদের অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত বড় বিপদ যে ঘটে যাবে, কখনও ভাবিনি।”

মর্গে দেহ শনাক্ত করতে রওশনের সঙ্গে যাঁরা এসেছিলেন সেই ডালু শেখ, সিরাজুল সেখ, সইফুল শেখরাও মানতে পারছেন না পাড়ার ‘হাবাগোবা ভালমানুষ’ ছেলেটার এই পরিণতি। বলাবলি করছিলেন, “ডাক্তার হয়ে অসুস্থ ছেলেটাকে প্রাণে মেরে ফেলল, এরা কী মানুষ!”

কোরপান যেখানকার বাসিন্দা সেই উলুবেড়িয়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায় বলেন, “একটা জলজ্যান্ত লোককে এ ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার অধিকার কারও নেই। পুলিশ তদন্ত করুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE