Advertisement
E-Paper

সমন্বয় কই, স্বাস্থ্য দফতরকে পাল্টা বিঁধল হাসপাতাল

তোপের জবাবে পাল্টা বাণ। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাজ্য সরকার নিজেই এ বার অভিযোগের মুখে পড়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সোমবার জানায়, সোয়াইন ফ্লু রোগীদের ‘চিকিৎসা না-করে বার করে দেওয়ার’ জন্য কলকাতা ও শহরতলির চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে শো-কজ করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৬
সোয়াইন ফ্লু-র হাত থেকে বাঁচতে। মঙ্গলবার বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে। ছবি: শৌভিক দে।

সোয়াইন ফ্লু-র হাত থেকে বাঁচতে। মঙ্গলবার বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে। ছবি: শৌভিক দে।

তোপের জবাবে পাল্টা বাণ। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাজ্য সরকার নিজেই এ বার অভিযোগের মুখে পড়েছে।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সোমবার জানায়, সোয়াইন ফ্লু রোগীদের ‘চিকিৎসা না-করে বার করে দেওয়ার’ জন্য কলকাতা ও শহরতলির চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে শো-কজ করা হয়েছে। মঙ্গলবার চার হাসপাতাল জানিয়েছে, কারণ দর্শানোর এমন কোনও চিঠি তারা পায়নি। শুধু তা-ই নয়, সোয়াইন ফ্লু’র চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমন্বয় না-রাখার জন্য তারা খোদ স্বাস্থ্য দফতরের দিকে আঙুল তুলেছে!

পাশাপাশি রোগী বিদায়ের অভিযোগও হাসপাতালগুলো মানতে নারাজ। চারটি হাসপাতালের দু’টি তা সরাসরি অস্বীকার করেছে। বাকি দু’টির মধ্যে একটির বক্তব্য: সোয়াইন ফ্লু’র মতো ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ আলাদা (আইসোলেট) করে রাখার ব্যবস্থা তাদের নেই। ফলে সোয়াইন ফ্লু’র রোগী ভর্তি করলে অন্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ানো হবে। চতুর্থ হাসপাতালের দাবি, রোগের চিকিৎসা প্রক্রিয়া (প্রোটোকল) সম্পর্কে অবহিত হতে চেয়ে তারা বারবার স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাড়া পায়নি।

অভিযুক্ত হাসপাতালগুলির তরফে এমন পাল্টা অভিযোগ সম্পর্কে রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা এ দিন স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। পাশাপাশি মিন্টো পার্কের বেসরকারি হাসপাতালটির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সেটিকে কেন শো-কজের তালিকায় রাখা হল না, তারও ব্যাখ্যা মেলেনি।

কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস, কলম্বিয়া এশিয়া, আরএনটেগোর এবং ব্যারাকপুর মেডিকেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে না-চাওয়ায় এই চারটি বেসরকারি হাসপাতালকে শো-কজ করা হয়েছে বলে সোমবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ঘোষণা করেছিল। রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিব জানিয়েছিলেন, রোগীদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁদের এ হেন পদক্ষেপ।

যার প্রতিক্রিয়ায় এ দিন পাল্টা মুখ খুলেছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষেরা। “আমরা এ মরসুমে একাধিক সোয়াইন ফ্লু রোগীকে ভর্তি রেখেছি।” বলছেন অ্যাপোলো গ্লেনেগেলসের সিইও রূপালি বসু। উপরন্তু গাফিলতির দায়ে স্বাস্থ্য দফতরকেই বিঁধে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “আমাদের ল্যাবে পরিকাঠামো থাকায় আমরা রোগ নির্ণয়ের জন্য থুতু পরীক্ষা চালু করার অনুমতি চেয়েছিলাম। সে চিঠির উত্তর আসেনি। যে ডাক্তার-নার্সরা সোয়াইন ফ্লু রোগীদের দেখভাল করছেন, তাঁদের নিরাপত্তার খাতিরে ট্যামি ফ্লু চেয়েছিলাম। তা-ও দেওয়া হয়নি।”

আর সল্টলেকের কলম্বিয়া এশিয়া-র জেনারেল ম্যানেজার অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, শো-কজের কোনও চিঠি তাঁরা পাননি। তবে সোয়াইন ফ্লু’র চিকিৎসার সাধারণ নিয়ম-বিধি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল) কী হওয়া উচিত, সে সংক্রান্ত কিছু তথ্য সোমবার স্বাস্থ্য দফতর তাঁদের কাছে পাঠিয়েছে। অরিন্দমবাবুর যুক্তি, ২০০৯-এ যখন সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়েছিল তখন স্বাস্থ্য দফতরই সার্কুলার দিয়ে বলেছিল, আইসোলেশন ইউনিটবিহীন হাসপাতাল যেন আক্রান্তদের ভর্তি না রাখে। “রোগীকে আইডি-তে রেফার করার নির্দেশই তখন দেওয়া হয়েছিল। আমরা তা-ই পালন করছি।’’ মন্তব্য অরিন্দমবাবুর। তাঁর বক্তব্য, “সরকার যদি পুরনো সার্কুলার পাল্টে আমাদের আইসোলেশন ইউনিট চালু করতে বলে, আমরা প্রক্রিয়া শুরু করব। কিন্তু যত দিন না হচ্ছে, তত দিন সংক্রামক রোগী ভর্তি করে অন্যদের ঝুঁকির মধ্যে রাখাটা ঠিক নয়।”

কলকাতার আর এক হাসপাতাল আরএনটেগোরের সুপার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে শো-কজের চিঠি আসেনি। তাঁরা সোয়াইন ফ্লু’র রোগী ভর্তি করছেন কি না জানতে চাওয়া হলে টেলিফোনে ওঁর জবাব, “করছি তো! কালও বিকাশ ঝা নামে এক জন ভর্তি ছিলেন।” সেই রোগীকে কি আইডি’তে রেফার করা হয়েছে? জয়দীপবাবু প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমার সামনে অনেক রোগী। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমি হাসপাতালের মুখপাত্র নই।” ‘মুখপাত্র’ হিসেবে তিনি যাঁর ফোন নম্বর দিলেন, সেই প্রতিম চট্টোপাধ্যায়ও এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

ব্যারাকপুর মেডিকেয়ারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মিতা দাসের দাবি, তাঁরা কোনও রোগীকে ফেরাননি। যাঁরা গিয়েছেন, স্বেচ্ছায় বন্ডে সই করে গিয়েছেন। “সোয়াইন ফ্লু’র চিকিৎসা প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা যথেষ্ট ধন্ধে ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না, ওষুধ কোথায় পাব। এক রোগী ভর্তি হওয়ার পরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছিলাম।” এ দিন বলেন মিতাদেবী। তাঁর সাফ কথা, “আমরা রোগীকে ফেরত পাঠাইনি। বাড়ির লোকের ইচ্ছায়, তাঁদের লিখিত সম্মতি নিয়ে রোগীকে আইডি’তে পাঠানো হয়েছে।”

স্বাস্থ্য দফতরের ভাষ্য কী? স্বাস্থ্য-সচিব মলয় দে এ দিন বলেন, “যাদের শো-কজ করা হয়েছে, নিজেদের বক্তব্য তারা সরাসরি আমাদের জানাক। আমরা বিবেচনা করব।” তাঁর দাবি, ওই সব হাসপাতালের নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে বলেই শো-কজ করা হয়েছে। “সরকার সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা রাখছে।” হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সচিব।

swine flu west bengal health department lack of co ordination beliaghata id hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy