Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সরকারি চিকিৎসার মান বাড়াতে ই-প্রেসক্রিপশন

চিকিৎসকেরা কি প্রেসক্রিপশনে সত্যিই জেনেরিক নামে ওষুধ লিখছেন? হাসপাতালের দোকানে যে সব ওষুধ মজুত রয়েছে, তার মধ্যে থেকেই কি প্রেসক্রাইব করছেন তাঁরা? নাকি নিম্নবিত্ত, গরিব মানুষদেরও সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে? রোগীকে যথাযথ ভাবে পরীক্ষা করার পরেই কি রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে? নাকি নাম-কা-ওয়াস্তে দেখে নিয়েই ওষুধ লিখে দেওয়া হচ্ছে?

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:৫৫
Share: Save:

চিকিৎসকেরা কি প্রেসক্রিপশনে সত্যিই জেনেরিক নামে ওষুধ লিখছেন? হাসপাতালের দোকানে যে সব ওষুধ মজুত রয়েছে, তার মধ্যে থেকেই কি প্রেসক্রাইব করছেন তাঁরা? নাকি নিম্নবিত্ত, গরিব মানুষদেরও সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে? রোগীকে যথাযথ ভাবে পরীক্ষা করার পরেই কি রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে? নাকি নাম-কা-ওয়াস্তে দেখে নিয়েই ওষুধ লিখে দেওয়া হচ্ছে?

এই সব ব্যবস্থার ঠিকঠাক দেখভালের জন্য এবং সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার সর্বাঙ্গীন মান খতিয়ে দেখতে এ বার ই-প্রেসক্রিপশন ব্যবস্থা চালু করছে স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতা ও হাওড়ার চারটি হাসপাতালে পাইলট-প্রকল্প শুরু হয়ে গিয়েছে। ধাপে ধাপে সব হাসপাতালেই এই ব্যবস্থা চালু হবে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য-সচিব মলয় দে বলেন, “এম আর বাঙুর হাসপাতাল ও হাওড়া জেলা হাসপাতালের নির্দিষ্ট কিছু বিভাগ, এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগ এবং নীলরতন সরকার হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগে আপাতত এই ই-প্রেসক্রিপশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।” কম্পিউটারে করা প্রেসক্রিপশনের ফোটোকপি রোগীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি, সামগ্রিক তথ্যই ধরা থাকবে সার্ভারে। যাতে স্বাস্থ্য-ভবনে বসে স্বাস্থ্যকর্তারা পুরো বিষয়টির উপরে নজর রাখতে পারেন। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, এই ব্যবস্থা পুরোদমে চালু হলে পরবর্তী স্তরে চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু সংক্রান্ত বিষয়গুলির নিষ্পত্তিতেও সুবিধা হবে। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন অডিট করার কথা ভাবা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। কিন্তু কিছুতেই তা আর চালু করা যাচ্ছিল না। অথচ, রাশ টানার জন্য এটা জরুরি ছিল। ই-প্রেসক্রিপশন চালু হলে এক সঙ্গে অনেকগুলো লক্ষ্য পূরণ হবে।”

সেগুলি কী কী?

স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, এক দিকে চিকিৎসার রেকর্ড খুঁজে পেতে আর সমস্যা হবে না। রোগী দেখার ব্যাপারে চিকিৎসকদের আরও যত্নবান হতে হবে। তাঁরা ওষুধের ব্র্যান্ডের নাম বা বেশি দামি ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখছেন কি না, সেটাও প্রয়োজনে স্বাস্থ্য ভবনে বসেই জেনে নেওয়া যাবে। ফলে গোটা ব্যবস্থায় অনেক বেশি স্বচ্ছতা আসবে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “এই ব্যবস্থার ফলে ডাক্তার রোগীকে ভাল ভাবে না দেখে আর ছেড়ে দিতে পারবেন না। কারণ, ক্লিনিক্যালি রোগীকে দেখে তিনি কী পাচ্ছেন, তা প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করতে হবে। দিনের প্রথম প্রেসক্রিপশন ক’টায় লেখা হল, শেষ প্রেসক্রিপশন ক’টায় লেখা হচ্ছে, তার একটা হিসেবও থাকবে। ফলে, এক জন ডাক্তার দিনে ক’জন রোগী দেখছেন, সেটার উপরেও নজর রাখা সম্ভব হবে।”

তবে, এই প্রকল্পের অসুবিধার দিকের কথাও উল্লেখ করেছেন অনেকে। যেমন, হাওড়া জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “বহু ডাক্তারই কম্পিউটারে প্রেসক্রিপশন লিখতে সড়গড় নন। ফলে কাজে দেরি হবে। এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এই ব্যবস্থা সেই অপেক্ষাকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।” বাঙুর হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে এমনিই বহু কম্পিউটার খারাপ হয়ে পড়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে যে তার ব্যতিক্রম হবে, এমন আশা করা যায় না। ফলে অবস্থা খুব বেশি বদলাবে, এখনই এমন ভাবার কারণ নেই।”

স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, গোড়ায় কিছু কিছু অসুবিধা হলেও পরে এই ব্যবস্থায় উপকৃত হবেন রোগীরাই। পরের ধাপে রোগী ভর্তি ও ডিসচার্জ সার্টিফিকেটও অনলাইনেই করা হবে। যাতে কোথায়, কত শয্যা খালি হল, তা তৎক্ষণাৎ জানা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

soma mukhopadhyay e prescription
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE