Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Monsoon

Monsoon Poems: সেকাল থেকে একাল, বৃষ্টি যেন রূপক হয়ে ফুটে উঠেছে কাব্য-কবিতায়

কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূত’ কাব্যে পর্বতের ওপার থেকে ‘মেঘ’কে দূত করে পাঠিয়েছিলেন প্রিয়ার কাছে নিজের শূণ্যতা ঢাকতে। বিদ্যাপতির মাথুর পর্যায় কিংবা গোবিন্দদাসের অভিসার পদগুলিতে বৃষ্টির সঙ্গে লীন হয়েছে রাধার প্রেম।

বৃষ্টির কবিতারা

বৃষ্টির কবিতারা

সংগৃহীত প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ১৯:৪৯
Share: Save:

এক দারুণ বৃষ্টির দিনে যদি বলো কবিতা বা কোনও গান আসেনি মনে, তবে বলব এমন সৃষ্টিছাড়া নাই বা হলে! বর্ষার সঙ্গে যে কাব্য, কবিতা ও কবিদের এক অমোঘ সম্পর্ক রয়েছে তা বোধ হয় নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। সাহিত্যের মধ্যযুগের দিকে তাকালেও দেখা যাবে বহু লেখনীতে ফুটে উঠেছে বর্ষার বৈচিত্র। বাদ যাননি আধুনিক কবিরাও। তাঁদের লেখনীতেও বার বার ফিরে এসেছে বৃষ্টির সৌন্দর্য্য়।

বাংলা দিনলিপি অনুযায়ী আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বর্ষা আগমণ হয়। এই ঋতুর অনেকগুলি নিজস্ব ভাব রয়েছে। কখনও সারাদিন অবিরাম বৃষ্টি, আবার কখনও আকাশ জুড়ে কালো মেঘের বুক চিরে দারুণ বিদ্যুতের খেলা। কখনও বা রাতের কালোর সঙ্গে মিশে এক পশলা বৃষ্টি, সোঁদা মাটির গন্ধ মাখা বিকেল, আরও কত কী! বর্ষাকে বিভিন্ন রূপকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছেন কবিরা।

এ পর্যন্ত পড়ে মনে হতেই পারে যে বর্ষার উপরে শুধুই কবিদের অধিকার। এমনটা কিন্তু নয়। বৃষ্টি নিয়ে কল্পনা শুধু থেমে থাকেনি কাব্য বা কবিতায়। সাহিত্যের বাইরে এসেও পরিবারের এক মাত্র মেয়ের নামকরণ হয়েছে বৃষ্টি, বর্ষা কিংবা শ্রাবণী। আসলে এই ঋতুর আবেগ সর্বময়। যা ছুঁয়ে গিয়েছে মানব মনকেও। হয়তো সাহিত্য সেখানে থেকেছে রূপক হয়ে।

সৃষ্টির সেই আদিম সময় থেকে বর্ষা কখনও ভয় হিসেবে, কখনও দেবতা হিসেবে, কখনও প্রেম– রোমান্টিকতা হিসেবে, কখনও বা নিষ্ঠুর বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে নিজেকে। আদি যুগ থেকে আধুনিক, এমনকী উত্তর-আধুনিক সময়েও কবিরা বর্ষার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেননি। ইতিহাসজয়ী সাহিত্যে সেই সবের খোঁজ আছে।

কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূত’ কাব্যে পর্বতের ওপার থেকে ‘মেঘ’কে দূত করে পাঠিয়েছিলেন প্রিয়ার কাছে নিজের শূণ্যতা ঢাকতে। বিদ্যাপতির মাথুর পর্যায় কিংবা গোবিন্দদাসের অভিসার পদগুলিতে বৃষ্টির সঙ্গে লীন হয়েছে রাধার প্রেম। বিরহের কাতরতা মিশে গিয়েছে মেঘের ঘন কালোতে চন্ডীদাসের কলমে– “এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা কেমনে আইলো বাটে।” প্রেমিকের জন্য অন্তরের বিরহের দারুণ অস্থিরতা প্রকাশের জন্য কবি আশ্রয় নিয়েছেন বর্ষার কালো মেঘের। মাধব রূপের ভাব ধরতে আষাঢ়ের কালো মেঘকেই কবি মনে করেছেন যথার্থ ভাব সঙ্গ। বিদ্যাপতিও যেন বর্ষার রূপের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন মনের সঙ্গতি। অন্তরে আগলে রাখা সমস্ত যাতনাকে উজার করে দেওয়ার জন্য তিনি হাত ধরেছেন অমোঘ বর্ষার – “এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর– এ ভরা ভাদর মাহ বাদর/ শূন্য মন্দিরও মোর।” বলা বাহুল্য, মধ্যযুগের কবিদের কলমে বর্ষার সঙ্গে রোমান্টিকতার এমন আলিঙ্গন আর কখনও হয়নি।

কাব্য কবিতার কথা হবে অথচ রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ আসবে না তা কখনও হয়? কবির প্রকৃতি পর্যায়ের সম্ভার অসীম। সেখানে গান, গল্প, কবিতা– আছে সব কিছুই। বর্ষাকে তিনি অনুভব করেছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে, আঙ্গিকে। কখনও বর্ষার রূপে মিশেছে শৈশব – “ওপারেতে বৃষ্টি এল/ঝাপসা গাছপালা।/ এপারেতে মেঘের মাথায়/ একশ মানিক জ্বালা।” আবার বর্ষার দিনেই কবির মনে হয়েছে – “এমন দিনে তারে বলা যায়/ এমন ঘনঘোর বরিষায়–/ এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরঝরে/ তপনহীন ঘন তমসায়।” ‘ভানুসিংহের পদাবলী’র বেশ কিছুটা অংশেও অভিসারের সঙ্গে মিশেছে বর্ষা। শুধু কবিগুরু নন, বর্ষা প্রভাব ফেলেছে মাইকেল মধুসূদন, কাজী নজরুল, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখের ওপরেও।

পল্লী কবি জসিমউদ্দীনের কবিতায় বর্ষা এক অন্যরকম মূর্ছনায় ধরা দিয়েছে। তিনি উদাস হয়েছেন, ব্যাকুল হয়েছেন, আনন্দিত হয়েছেন বর্ষার রূপে। তাঁর “পল্লী বর্ষা” কবিতায় ফুটে উঠেছে বর্ষার দিনে গ্রামবাংলার মাটির বিবিধ চরিত্র। বর্ষার ভাষায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন শ্রমজীবি মানুষের অসমাপ্ত কাজগুলির কথা।

কবি হুমায়ন আহমেদের কবিতাতেও বর্ষার দিনে প্রেম প্রাধান্য পেয়েছে। বছরভর তিনি বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষায় থেকেছেন, যে ভাবে প্রেমিকের অপেক্ষায় থাকে অস্থির মন– “তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়।”

আদতে, সময় যত আধুনিকতার দিকে এগিয়েছে, কবিদের কলম ততই স্পষ্ট হয়েছে বৃষ্টির বাস্তব রূপ নিয়ে। সেকাল থেকে একাল, নানা কলেবরে কবিদের লেখনীতে লীন হয়েছে বর্ষা।

এই প্রতিবেদনটি সংগৃহীত এবং 'আষাঢ়ের গল্প' ফিচারের অংশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE