মার্কিন পর্যটক অ্যালেন চাও। ফাইল চিত্র। রয়টার্স।
মার্কিন পর্যটক অ্যালেন চাওয়ের দেহ উদ্ধার করা কি আদৌ সম্ভব হবে? এই মুহূর্তে এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। চেষ্টা অবশ্য চালানো হচ্ছে কী ভাবে চাওয়ের দেহ সেন্টিনেলিদের কবল থেকে উদ্ধার করা যায়। এ ব্যাপারে পুলিশ, প্রশাসন, উপকূলরক্ষীরা সাহায্য নিচ্ছে নৃতত্ত্ববিদদের। তবে তা কতটা সফল হবে তা নিয়ে ঘোর সংশয় তৈরি হয়েছে।
সকলের নজর এড়িয়ে স্থানীয় দুই মত্স্যজীবীকে নিয়ে উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপে গিয়েছিলেন চাও। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন একটি বাইবেল। জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও ‘নিষিদ্ধ’ ওই দ্বীপে পা রেখেছিলেন। তবে প্রথম দিন বরাতজোরে বেঁচে ফিরেছিলেন। সেন্টিনেলদের এলাকায় বাইরের জগতের কোনও মানুষের প্রবেশ মানেই সাক্ষাত্ মৃত্যু ডেকে আনা। অ্যালেন চাও জেনেবুঝে সেটাই করেছিলেন। প্রথম দিন তাঁকে দেখামাত্রই তির ছুড়েছিল সেন্টিনেল আদিবাসীরা। বাঁচিয়েছিল বুকে ধরে রাখা বাইবেলটা।
পর দিন চাও আবার যান ওই দ্বীপে। তবে এ বার আর ভাগ্য সদয় হয়নি। সেন্টিনেলিদের বল্লম আর তির ফালাফালা করে দেয় তাঁর শরীর। অন্তত তেমনটাই দাবি করেছেন ওই দুই মত্স্যজীবী। এঁরাই চাওকে দ্বীপের অদূরে নামিয়ে দেন। মত্স্যজীবীরা দাবি করেছেন, চাওকে মারার পর তাঁর দেহ সমুদ্রের ধারে বালিতেই পুঁতে দেয় আদিবাসীরা।
আরও পড়ুন: কলসের কানা
চাওয়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তাঁর দেহ উদ্ধারের হবে কী ভাবে? এ নিয়ে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে এখন। সেন্টিনেলিদের খপ্পরে পড়া যে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা এর আগেও ২০০৬-এ টের পাওয়া গিয়েছিল। সে বার দুই মত্স্যজীবীর দেহ উদ্ধার করতে গিয়েছিল উপকূলরক্ষীবাহিনীর একটি চপার। সেই চাপারটিকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু তির ছুড়তে থাকে আদিবাসীরা। কোনও ক্রমে সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছেন পাইলট প্রবীণ গৌর।
সেন্টিনেলিদের নিয়ে গবেষণা করছেন এমন নৃতত্ত্ববিদরা ওই আদিবাসীদের একটা বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দেহ পুঁতে দেওয়ার কয়েক দিন পরে আদিবাসীরা সেই জায়গাতে ফিরে এসে কবর খুঁড়ে সেই দেহ বার করে। তার পর সেটাকে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে খাড়া করে সমুদ্রের ধারে দাঁড় করিয়ে রাখে। এ ভাবেই তারা ইঙ্গিত দেয়, অনুপ্রবেশকারীরা সাবাধান! এলে তাঁদেরও এই হাল হবে।
সেন্টিনেল দ্বীপ।
সেন্টিনেলিদের এই রীতিটার উপরই এখন ভরসা করছে পুলিশ। উদ্ধারকাজের সঙ্গে জড়িত আন্দামান ও নিকোবর প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, সেন্টিনেলিরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন একটা জাতি। কোনও জিনিসকে তাঁরা কী ভাবে দেখছে, তাদের কাছে বাইরের জগত সম্পর্কে ধারণাটা কী এটা ভাল ভাবে বুঝে তবেই এগোতে হবে। তবে দেখতে হবে এই জনজাতির যেন কোনও ক্ষতি না হয়!
আরও পড়ুন: হোয়াটসঅ্যাপে ‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানো বন্ধ করার পথ খুঁজবেন বালিগঞ্জের অভিজিৎ
কোথায় চাওয়ের দেহ পুঁতে রাখা হয়েছে তা জানার জন্য পুলিশ ওই দুই মত্স্যজীবীকে সেন্টিনেল দ্বীপের কাছাকাছি নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখে একটা জায়গায় বেশ কয়েক জন আদিবাসী তির-ধনুক-বল্লম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের নজর ছিল পুলিশের নৌকার দিকে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওখানেই চাওয়ের দেহ পোঁতা আছে। সেই দেহ পাহারা দিচ্ছে আদিবাসীদের কয়েক জন।
জারোয়াদের নিয়ে কাজ করেছেন আন্দামানের এমন এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক বলেন, “সেন্টিনেলিদের মতোই জারোয়ারা প্রচন্ড আক্রমণাত্মক ছিল ৯০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত। জারোয়াদের সঙ্গে আচরণগত ভাবে সেন্টিনেলদের অনেকটাই মিল রয়েছে। সেখান থেকেই কিছু ইঙ্গিত মেলে কি না, তা চেষ্টা করা হচ্ছে।”
দেহ উদ্ধার নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর প্রশাসন যথেষ্ট উদ্যোগী হলেও সূত্রের খবর, চাওয়ের পরিবার কিন্তু বার বারই প্রশানের কাছে আবেদন জানিয়েছে, সেন্টিনেলদের যেন কোনও রকম ক্ষতি না হয়। চাওকে ওই দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখানোয় যে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের প্রতি নরম পদক্ষেপ করতেও সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে চাওয়ের পরিবার।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদেরদেশবিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy